বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ইত্তেফাক: তারুণ্যের অগ্রযাত্রার মূর্ত প্রতীক

আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০২২, ১৯:০১

কালের বিবর্তনের ঘূর্ণিপাকে মানবসভ্যতা এগিয়ে চলছে সামনের দিকে। সেই সঙ্গে এগিয়ে চলছে মানুষের নিরন্তর বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার এক পর্যায়ক্রমিক উত্তরণ। জনমানসে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে নাগরিকতাবোধ, জনমনে ক্রমশ দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয়েছে সার্বভৌমত্বের ধারণা। আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগের পাশে যুক্ত হয়েছে গণমাধ্যম; যা কার্যত রাষ্ট্র ও নাগরিকের মধ্যে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করেছে। গণতান্ত্রিক অনুশীলনের সংস্কৃতিতে যুক্ত করেছে নতুন মাত্রা, নতুন গতি। সেই বিবর্তনের স্রোতে গণমাধ্যমের ভূমিকা শুধু সংবাদ পরিবেশন ও বিশ্লেষণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও চাহিদার বহিঃপ্রকাশ সংবাদপত্রের মাধ্যমেই নীতিনির্ধারকদের কাছে পৌঁছায়। ফলে সংবাদপত্রকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে ধরা হয়।

বাংলাদেশের ইতিহাসে যে কয়েকটি সংবাদপত্র এদেশের আপামর জনগণের কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে দেশবাসীর অকুণ্ঠ সমর্থন ও সীমাহীন ভালোবাসা অর্জন করেছে তাদের মধ্যে দৈনিক ইত্তেফাক অন্যতম। নানাবিধ চড়াই-উতরাই ও কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে গৌরবের ৬৯ বছরে পদার্পণ করে সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে আজকের ‘দৈনিক ইত্তেফাক’।

তারুণ্যের মানসপটে ইত্তেফাকের নামটি লেখা আছে বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজ বিনির্মাণের এক নির্ভীক কাণ্ডারি হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে পাকিস্তান শাসনামলে দৈনিক ইত্তেফাক যেভাবে বাঙালি তরুণদের মধ্যে চেতনার স্ফুরণ ঘটিয়েছিল, যা আজকের তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে একটি বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনের দিকে। গণমাধ্যমের মহত্ত্ব, সক্ষমতা ও জনসম্পৃক্ততা যেভাবে একটি জাতিসত্তার বিকাশে ইতিহাস-নির্ধারণী ভূমিকা রেখেছিল, তা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। তারুণ্যের চোখে ইত্তেফাক শুধু একটি পত্রিকা নয় বরং মুক্ত বুদ্ধির চর্চা ও একটি গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে।

সংবাদপত্র একটি দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। একটি দেশের তরুণ প্রজন্মকে চিন্তাশীলতা ও মননশীলতার চর্চা করতে সংবাদপত্র কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। কালের প্রবাহে ইত্তেফাক পত্রিকা তার নামের যথার্থ বারবার প্রমাণ করে এসেছে। এটি এমন একটি সংবাদ মাধ্যম যেটি কখনোই কোনো বিশেষ সম্প্রদায়ের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট কোনো দর্শন প্রচার করেনি। ফলে দেশের যে কোনো সম্প্রদায়, বয়স, রুচি কিংবা পেশার মানুষ ইত্তেফাককে তাদের নির্ভরতার আশ্রয়স্হল হিসেবে পরিণত করেছে। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের মাহাত্ম্য ও ইত্তেফাকের অগ্রযাত্রা একই সূত্রে গাঁথা। ফলে তরুণ প্রজন্মের কাছে এটি সহনশীলতা, সাহস ও ভরসার কেন্দ্রস্হলে পরিণত হয়েছে।

প্রত্যেক সংবাদপত্রেরই একটি নিজস্ব রাজনৈতিক দর্শন থাকে। সেদিক থেকে ইত্তেফাক সব সময়ই একটি উদারপম্হী সংবাদপত্র হিসেবে তরুণ প্রজন্মের কাছে জায়গা করে নিয়েছে। তরুণ প্রজন্মকে একটি সুস্হ রাজনৈতিক দর্শন ও সঠিক ইতিহাসচর্চায় ইত্তেফাক সামনে থেকে কাজ করে গেছে। একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রাণ হচ্ছে তার সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয়। তারুণ্যের দীপ্তি ছড়িয়ে তরুণরাও ইত্তেফাকের পাতায় আজ শব্দের ফুলঝুরি ছড়িয়ে যাচ্ছেন। এভাবে ইত্তেফাক তরুণদের মধ্যে বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনের বীজ বপণ করে দিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। আজকের তরুণ সমাজ যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্ত তখন এই তরুণ সমাজকে লেখালেখির সুযোগ তৈরি করে দিয়ে ইত্তেফাক সাংস্কৃতিক মুক্তির মশাল জ্বেলে মুক্তবুদ্ধিচর্চার কাণ্ডারী হয়ে দৃঢপায়ে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে। ইত্তেফাকের ‘নতুন প্রজন্মের ভাবনা’ পাতায় বিশেষ করে তরুণদের জন্য লেখার একটি প্লাটফরম তৈরি করে দেওয়ার মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়া ও প্রযুক্তিনির্ভর তরুণ প্রজন্মকে পত্রিকামুখী, বইমুখী ও লাইব্রেরিমুখী করার প্রয়াসটি নিঃসন্দেহে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। এছাড়া তরুণ সাহিত্যিকদের সাহিত্যচর্চার পথকে সুগম করার জন্য সাহিত্য পাতায় ইত্তেফাক নিয়মিত প্রকাশ করে যাচ্ছে কবিতা, গল্প কিংবা সাহিত্য সমালোচনা। এভাবেই ভিন্নধর্মী পরিবেশনার কারণে বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের কাছে ইত্তেফাক এক বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করেছি আমরা। এই দীর্ঘ সময়ে দেশের গণমাধ্যমকে নানাবিধ চড়াই-উতরাই ও কঠিন সময় অতিক্রম করতে হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে না পেরে কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে অনেক পত্রিকা। কিন্তু ইত্তেফাক তার অগ্রযাত্রা থামায়নি। বরং গৌরবের ৬৮ বছর পেরিয়ে ৬৯ বছরে এসে ইত্তেফাক যেন নিজেকেই ছাড়িয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। দেশের আপামর জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও তরুণ প্রজন্মের বুদ্ধিবৃত্তিক অগ্রযাত্রার যে নেতৃত্ব ইত্তেফাক দিয়ে যাচ্ছে সেটি অব্যাহত থাকুক।

লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

ইত্তেফাক/এএইচপি

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন