বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে করোনা মোকাবিলা 

আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০২২, ১৯:১০

দেড় বছর পর গত বছরের অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পর্যায়ক্রমে খুলে দেওয়া হয়। এবং শিক্ষার্থীরা অফ লাইনে ক্লাস, পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। এখন যদি করোনার সংক্রমণ বেড়ে যায়, তাহলে কি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আবার বন্ধ করে দেওয়া হবে? 

যদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ করা হয়, কিছু শিক্ষার্থী বাসায় চলে যাবে, আর কিছু শিক্ষার্থী বাসা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আশপাশেই থাকবে। বাসায় থাকা শিক্ষার্থীরা তো আর সারাক্ষণ বাসায় থাকবে না, তারাও সব জায়গা চলাফেরা করবে। আর যারা শহরে থাকবে তারা তো চলাফেরা করবেই। তাতে কি হবে, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করা হলেও তারা কেউ-ই নিরাপদ থাকছে না। করোনার গত ঢেউয়ে আমরা দেখলাম করোনা সারা দেশে ছড়িয়েছে। এতে এক দিকে শিক্ষার্থীদের শারীরিক, মানসিক, আর্থিক সব দিক দিয়েই ক্ষতি হবে। আবার গ্রামে থাকার ফলে অনেকেই অনলাইন শিক্ষা-কার্যক্রমে সঠিকভাবে যুক্ত থাকবে না। বরং বিশ্ববিদ্যালয়ে রেখেই সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখা যায়, সেটিকে গুরুত্ব দেওয়াই কি সমীচীন নয়?

বিশ্বব্যাপী করোনার সংক্রমণের সংখ্যা প্রতিদিন রেকর্ড তৈরি করলেও মৃত্যর সংখ্যা তেমন বাড়ছে না। অর্থাত্ তৃতীয় ঢেউয়ে করোনা পূর্বের থেকে অনেক দুর্বল হয়ে গেছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের সবাইকে টিকা দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য বুস্টার ডোজের টিকা চলে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত টিকা বরাদ্দ রাখতে হবে। যেন ছয় মাস শেষ হওয়ার পরপরই পর্যায়ক্রমে বুস্টার ডোজ টিকা নিতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য প্রথমত,বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথগুলোতে বেড়িকেড দিতে হবে। কোনো বহিরাগত যেন প্রবেশ করতে না পারে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যেই এই পদক্ষেপ নিয়েছে।

প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কেই এই কাজটি অবশ্যই করতে হবে। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্হিত হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অবশ্যই বহিরাগতদের প্রবেশাধিকার বন্ধে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সমস্ত ভাসমান খাবার দোকান আপতত বন্ধ করতে হবে। তৃতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ল্যাব অথবা আশপাশের কোনো একটি মেডিক্যালে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত করোনা টেস্টের ব্যবস্হা রাখতে হবে। নিজস্ব আইসোলেশন সেন্টার থাকতে হবে। কেউ আক্রান্ত হলে যেন সেখানে থাকতে পারে। হতে পারে, উপসর্গ কম, কিন্তু অন্য আরেকজন যেন আক্রান্ত না হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যালগুলোতে পর্যাপ্ত চিকিত্সার ব্যবস্হা করতে হবে অথবা আশপাশে কোনো মেডিক্যালে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে চিকিত্সার ব্যবস্হা রাখতে হবে। কেউ করোনার আক্রান্ত হলে তার খাওয়াদাওয়া থেকে শুরু করে চিকিত্সা সব খরচ বিশ্ববিদ্যালয়কেই বহন করতে হবে। সময়ের প্রয়োজনে ক্লাসগুলো অফলাইনের পরিবর্তে অনলাইনে নিতে হবে। করোনা আসবে এই অপেক্ষায় না থেকে, যেন না আসে সেই পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় এই পদক্ষেপ জরুরি। যারা হলের বাইরে থাকে তারা বাসায় বসে ক্লাস করতে পারবে। হলগুলোতে স্বাস্হ্যবিধি মানতে অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। নিয়মিত তদারকি করতে হবে। পরিস্হিতি বিবেচনায় হলগুলোকেই লকডাউনের মতো করতে হবে। গণজমায়েত হয় এমন সব কার্যক্রম আপাতত অনলাইনে করতে হবে। যেমন সভা সেমিনার। পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নের জন্য ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন, ছাত্র প্রতিনিধির সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে।

শিক্ষার্থীরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ। করোনার কারণে গত দেড় বছর শিক্ষা কার্যক্রম কার্যত বন্ধ ছিল যদিও অনলাইনে কিছুটা চালানোর চেষ্টা করা হয় কিন্তু তা প্রত্যাশার তুলনায় অনেক কম! আবার বন্ধ হওয়ার মতো পরিস্হিতি সৃষ্টি না হোক, সেজন্য আগেই পদক্ষেপ নিতে হবে। বারবার করোনার অজুহাতে যদি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয় তা দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে করোনা মোকাবিলায় একটি করে বিশেষজ্ঞ কমিটি করতে হবে। কয়েক দিন পরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা পরিস্হিতি পর্যালোচনা করতে হবে। চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। করোনা এখন এমন একটি বাস্তবতা, এটাকে নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা এবং শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখা এই দুটিকে একসঙ্গে চালানোকেই অগ্রাধিকারের শীর্ষে রাখতে হবে।


লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ইত্তেফাক/এএইচপি

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন