শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন: মুমিনুল 

আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২২, ১০:১২

করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে যাওয়ার তাড়ায় ছিলেন। অনুরোধের ঢেঁকি গিলে গতকাল বুধবার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে ক্রাইস্টচার্চ থেকে মোবাইল ফোনে সময় দিলেন মুমিনুল হক। টানা ৩২ ম্যাচ হারের পর নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তার নেতৃত্বেই ঐতিহাসিক টেস্ট জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ক্রাইস্টচার্চে হেরে গেলেও মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে পাওয়া জয়ে সিরিজটা ড্র (১-১) করার গৌরব নিয়ে দেশে ফিরছে বাংলাদেশ দল। ছোট্ট কাঁধে বড় ভার বয়ে বেড়ানো মুমিনুল একান্ত আলাপে জানিয়েছেন নিউজিল্যান্ড জয়ের আদ্যপান্ত।

প্রশ্ন: আপনার হাত ধরে নিউজিল্যান্ড জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। ক্রিকেট ক্যারিয়ারে এটি আপনার সবচেয়ে বড় অর্জন কি না?

আসলে এটা তো আমি একা করিনি। একা কৃতিত্ব নেওয়ার কিছু নেই। এটা করেছে পুরো দল মিলে। প্রত্যেকটা সদস্যের অবদান আছে। অবশ্যই আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় অর্জন। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট জেতা অনেক বড় বিষয়। নিউজিল্যান্ড জয় করেছি, এমনটা আমি চিন্তা করি না। সবাই কীভাবে নিচ্ছে জানি না। আপনারা জানেন, আমাদের সময়টা ভালো যাচ্ছিল না। এটা দলের জন্য খুব ভালো হয়েছে।

মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে ঐতিহাসিক জয়ের পর মাঠ ছাড়ছেন বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক —ফাইল ছবি

অধিনায়ক হিসেবে বলব, আমারও খুব ভালো লেগেছে। এটা ধরে রাখতে হবে। স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। আমাদের সেদিকে ফোকাস করতে হবে। ম্যাচ শেষেও বলেছি, সামনে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে দেশের বাইরে।

প্রশ্ন: ইতিহাস গড়েছেন আপনারা, এই জয় দেশের ক্রিকেটের জন্য এটা কত বড় বিষয় মনে হয়?

আসলে ইতিহাস গড়া বা এসব কিছু ভাবিনি। আমার খুব ভালো লেগেছে এটা বলতে পারি। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ওরা। ওদের মাটিতে ওদেরকে হারানো বিরাট বিষয়। অবশ্যই বাংলাদেশের ক্রিকেটের বড় বিষয়। এমন কন্ডিশনে টেস্ট ম্যাচ জেতা সহজ নয়। আমরা পেরেছি, আলহামদুলিল্লাহ।

প্রশ্ন: জয়ের পর ওখানে ওদের থেকে এবং বাংলাদেশ থেকে কেমন অভিনন্দন পেয়েছেন?

আসলে ম্যাচ জেতার পরই ওদের কয়েক জন প্লেয়ার এসে আমাদের সঙ্গে কথা বলছে। সবাই বলছে, তোমরা ভালো খেলছো, জয়টা তোমাদের প্রাপ্য ছিল। তোমরা এটা ভালোভাবে উদ্যাপন করো। ম্যাচের পরদিন আমি ও তাসকিন জিম করতে গেছি। জিমের লোক তো আমরা চিনি না। ওরাও অভিনন্দন জানিয়েছে।

পরে ট্যাক্সিতে উঠেছি, হোটেলে যেখানে গেছি ওখানকার মানুষ অভিনন্দন জানিয়েছে। আমাদের দেখলেই হাততালি দিয়েছে। এটা দারুণ লেগেছে। আমাদের কোচিং স্টাফরাও যখন বাইরে গেছে এমন অভিনন্দন পেয়েছে।

দেশ থেকে অনেকে কল করেছেন। আমাদের বোর্ড সভাপতি পাপন ভাই খুব খুশি হয়েছেন। অনেক উত্সাহ দিয়েছেন আমাদেরকে। আর তামিম ভাই খুব খুশি হয়েছেন। উনি আমাকে কল করে অভিনন্দন জানিয়েছেন, অনেক কথা বলেছেন। সাকিব ভাইও কথা বলেছেন।

প্রশ্ন: সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন ম্যাচের চতুর্থ দিনের পর রাতে ঘুমাননি আপনি। অধিনায়ক হিসেবে এমন সময় তো আগে কখনো আসেনি মনে হয়?

আসলেই আমার ক্যারিয়ারে আগে কখনো এমন সময় আসেনি। আমি সত্যিই অনেক চিন্িতত ছিলাম। কী হবে, না হবে এসব ভেবে। তারপর তো সকালে গিয়ে ওদের অলআউট করলাম। অধিনায়ক, প্লেয়ার হিসেবেও এমন সময় আগে পাইনি।

মুমিনুল হক। ছবি: ফেসবুক

প্রশ্ন: নিউজিল্যান্ডের মাটিতে জয়ের স্বপ্ন কি আদৌ দেখতেন?

আসলে জয় নিয়ে আমাদের ভাবনা ছিল না। আমরা শুধু প্রক্রিয়াগুলোর দিকে ফোকাস করেছি। নিউজিল্যান্ড কতটা শক্তিশালী, আর ওদের মাটিতে ওরা কতটা দুর্দান্ত দল এটা সবাই জানে। এখানে এসে উপমহাদেশের বাকি দলগুলোর রেকর্ড যদি দেখেন, সবাই বুঝতে পারবে। এখানে আসার পর আমরা চেষ্টা করেছি নিজেদের কাজগুলো যেন ঠিকভাবে করতে পারি। ওখানে যেন ঘাটতি না থাকে, সেরাটা যেন দিতে পারি।

প্রশ্ন:সাকিব-তামিম নেই, কন্ডিশনও কঠিন, দলটাও ভালো অবস্হানে ছিল না। এমন সময়ে কীভাবে দলকে এক সুতোয় গেঁথে ফেললেন?

আপনারা জানেন, আমাদের কোয়ারেন্টাইন বেড়েছিল, ১১ দিন ছিলাম সবাই। কোয়ারেন্টাইনটা উলটো আশীর্বাদ হয়ে এসেছে আমাদের জন্য। সবাই একসঙ্গে অনুশীলন শুরু করেছি। এখানে সুজন ভাইকে আমি অনেক কৃতিত্ব দেব। উনি প্লেয়ারদের মোটিভেট করেছেন। অনেক কথা বলেছেন। নিউজিল্যান্ডে অতীতেও আমাদের ব্যাটিং ভালো হয়েছে। বোলিংটা ভালো হচ্ছিল না। এসব নিয়ে কথা হয়েছে। হেড কোচও অনেক কথা বলেছে। মুশফিক ভাই সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে সবাইকে উজ্জীবিত করতে সাহাঘ্য করেছেন।

প্রশ্ন: নিউজিল্যান্ড থেকে সবসময় শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে। এবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে, সিরিজ ড্র করার গৌরব নিয়ে দেশে ফিরছেন। অধিনায়ক হিসেবে নিশ্চয়ই আপনি তৃপ্ত.......

নিউজিল্যান্ড থেকে জয় নিয়ে ফেরার তৃপ্তি অনেক। অধিনায়ক হিসেবেও ভালো লাগছে যে জিতেছি। নিউজিল্যান্ড আমাদের জন্য সবসময় কঠিন কন্ডিশন। দেশের জন্য, দলের জন্য এই জয়টা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

তবে দ্বিতীয় ম্যাচটা আমরা খুবই বাজে খেলেছি। আমাদের সুযোগ ছিল ম্যাচটা ড্র করার। প্রথম ইনিংসটা অতো খারাপ না হলে ম্যাচটা অন্যরকম হতে পারত।  

প্রশ্ন: অনেক সমালোচনা, আশানুরূপ পারফরম্যান্স না দিলেও এবাদতকে দলে রেখেছেন, সমর্থন করেছেন। তার পারফরম্যান্সে আপনি কতটা খুশি? পেসাররা ম্যাচ জেতাচ্ছে এটাও তো স্বপ্নপূরণের বিষয়......

আমার মনে হয় এবাদত যে শেষ দুই বছরে টানা খেলেছে এটার ফলই নিউজিল্যান্ডে পাওয়া গেছে। ও অনেক উন্নতি করেছে, পরিশ্রম করেছে। আমরা ওর ওপর আস্হা রেখেছি। টানা খেলেছে, এটাই ওর সেরাটা বের করে এনেছে।

টেস্ট ম্যাচ বিশেষ করে দেশের বাইরে জিততে গেলে পেসারদের বড় ভূমিকা লাগে। এবার পেসাররা দারুণ করেছে। ওদের ভেতরও আত্মবিশ্বাস এসেছে যে, ওরা পারে, ওদের সামর্থ্য আছে।

প্রশ্ন: লিটন দারুণ ধারাবাহিকতায় রান করছেন। আপনার কি মনে হয় যে, টেস্টে মিডল অর্ডারই লিটনের জন্য আদর্শ জায়গা?

লিটন তো অসাধারণ। ওর ব্যাটিং যেন ছবির মতো সুন্দর। আমরাও ওর ব্যাটিং উপভোগ করি। গত এক বছর ধরে দারুণ পারফরম করছে। আমি মনে করি, পাঁচ-ছয় নম্বর ওর জন্য আদর্শ জায়গা। আর ও এখন অনেক পরিণত। আগের ভুলগুলো করছে না। দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ। আমি খুব খুশি ওর পারফরম্যান্সে।

প্রশ্ন: টেস্টে সাড়ে ৩ হাজার রান হয়েছে আপনার, সেটা জেনেছেন কি?

নাহ, জানি না তো। আমি আসলে পরিসংখ্যান খুব একটা দেখি না। আপনি বললেন, এখন জানলাম। এই সফরে আমি আমার ব্যাটিং নিয়ে খুশি না। কারণ আমি অধিনায়ক, সিনিয়র প্লেয়ার, গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ব্যাটিং করি। আমি আমার প্রত্যাশাও পূরণ করতে পারি নাই। একটা বড় সেঞ্চুরি, বড় ইনিংস সঙ্গে যদি বড় হাফ সেঞ্চুরি করতে পারতাম, তাহলে কিছু বলা যেত। যেটা করেছি, তাতে আমি মোটেও খুশি নই।

ইত্তেফাক/কেকে

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন