শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করা যাইবে না

আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ০৭:৫৬

যে কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে স্থল, নৌ, সমুদ্র ও বিমানবন্দরের গুরুত্ব সর্বাধিক। বিশেষ করিয়া বাংলাদেশের সহিত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ব্যবসায়-বাণিজ্য ও মানুষের যোগাযোগ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সিলেটে অবস্থিত তামাবিল স্থলবন্দরের ব্যস্ততা বাড়িয়া গিয়াছে বহু গুণ। শুধু ভারত নহে, এই স্থলবন্দর দিয়া ভুটানের সহিতও আমাদের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বাড়িতেছে। বিষয়টি খুবই আশাব্যঞ্জক এবং ইহাতে ব্যবসায়ীরা আনন্দিত। এই বন্দর দিয়া ভারত হইতে পাথর, চুনাপাথর, কয়লা, পিঁয়াজসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হইয়া থাকে। রপ্তানি হয় মাছ, ইট, সিমেন্ট, ফেব্রিক্স, প্লাস্টিক সামগ্রী, মেলামাইন সামগ্রী ও বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য। আর ভুটান হইতে আমদানি হয় মূলত মৌসুমি ফল। সিলেট-তামাবিল সড়ককে এশিয়ান হাইওয়ের অন্তর্ভুক্ত করিবার পর এই স্থলবন্দরের গুরুত্ব আরো বাড়িয়া গিয়াছে; কিন্তু সম্প্রতি এই গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দরটিতে স্থবিরতা দেখা দিয়াছে, যাহা মোটেও কাম্য নহে।

পত্রিকান্তরে প্রকাশ, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার তামাবিল স্থলবন্দরে গত এক সপ্তাহেরও অধিক সময় ধরিয়া বন্ধ রহিয়াছে আমদানি। আমদানি বন্ধ হওয়ায় ওপারে আটকা পড়িয়া আছে কয়েক হাজার পণ্যবাহী ট্রাক। ইহাতে সরকার প্রায় ৪ কোটি টাকার রাজস্ব হারাইয়াছে। প্রতিদিন রাজস্ব হারাইতেছে প্রায় অর্ধকোটি টাকার। ইহাতে কর্মহীন হইয়া পড়িয়াছেন ৫ হাজার শ্রমিক। ইহার কারণ সম্পর্কে যাহা জানা যায় তাহা জানিলে কিছুটা বিস্মিতও হইতে হয়। আবার ইহা আঞ্চলিক অমীমাংসিত বিষয়ও বটে। মূলত এক ধরনের কৃত্রিম সংকট তৈরি হইয়াছে গত বৎসরের অক্টোবর হইতে। বন্দরে পণ্য ওজনের ক্ষেত্রে অটোমেশন পদ্ধতি চালু হওয়ার পর কিছুটা জটিলতা দেখা দিয়াছে। পূর্বে ফিতা দিয়া পণ্যের ওজন মাপা হইত। এখন বাংলাদেশ অংশে মেশিনে ওজন মাপা হইতেছে; কিন্তু ভারতের ডাউকি স্থলবন্দরে পূর্বের মতোই সেকেলে তথা ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে ওজন মাপা হইতেছে। এই দুই ধরনের ব্যবস্থার কারণে ওজনের হেরফের হওয়ায় ইহা লইয়া ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ। কেননা তাহারা ‘লোকসানের’ মুখে পড়িয়াছেন; কিন্তু বন্দর ট্যারিফ বাবদ কাঙ্ক্ষিত অর্থ না পাওয়ায় লোকসান হইতেছে সরকারেরও। গত ৭ জানুয়ারি হইতে তামাবিল বন্দরে অটো এসএমএস সফটওয়ার পদ্ধতি পুরাপুরি চালু হওয়ার পর ব্যবসায়ীরা আমদানি বন্ধ করিয়া দিয়াছেন। তাহারা বলিতেছেন, বন্দরের ডিজিটালাইজেশন পদ্ধতির অগ্রযাত্রা তাহারাও চান। তবে ইহা একপাক্ষিক হইলে চলিবে না। ইহা হইতে হইবে দ্বিপাক্ষিক। অর্থাৎ ভারতের অংশেও অটোমেশন পদ্ধতি চালু করিতে হইবে। তাহা হইলে ইহা লইয়া কোনো বিতর্কের সৃষ্টি হইবে না। ব্যবসায়ীদের এই দাবি হয়তো যৌক্তিক। তবে ইহার সমাধান ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত বা বন্ধ করিবার মধ্যে নাই। বরং ইহা লইয়া দ্রুত ভারত ও ভুটানের সহিত আলাপ-আলোচনা শুরু করা প্রয়োজন।

উপরিউক্ত ঘটনায় আমরা দেখিতে পাই, প্রতিবেশী ভারতের চাইতে বিভিন্ন আর্থসামাজিক সূচকে আমরা যেমন আগাইয়া রহিয়াছি, তেমনি বন্দরের কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনিবার ক্ষেত্রেও দেশ অগ্রগামী। অটোমেশন পদ্ধতিতে ওজন মাপা হইলে তাহাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া কঠিন হইবে। সুতরাং বাংলাদেশ সরকার যে সিদ্ধান্ত লইয়াছে তাহা অবশ্যই সাধুবাদযোগ্য। এখন এই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকারকে অনড় থাকিতে হইবে। যত চাপই থাকুক, এই সিদ্ধান্ত হইতে সরিয়া আসা উচিত হইবে না। বরং তাহাদের মোকাবিলা করিয়াই অগ্রসর হইতে হইবে। আমরা মনে করি, ভারত ও ভুটানেরও অবিলম্বে নিজ নিজ স্থলবন্দরে অটোমেশন পদ্ধতি চালুর পদক্ষেপ লওয়া উচিত। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উচিত অনতিবিলম্বে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করিয়া দেওয়া। ইহা তিন দেশের জন্যই মঙ্গলজনক। প্রয়োজনে পারস্পরিক কারিগরি সহায়তা প্রদানে আগাইয়া আসিতে হইবে

ইত্তেফাক/এমআর