বুধবার, ০৭ জুন ২০২৩, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

টিম সার্কিট মেস্টারস

দেশে প্রথমবারের মতো স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করছেন যারা

আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ১১:৫৪

প্রযুক্তির উৎকর্ষতার অনন্য এক নিদর্শন অটোনোমাস্ ভেহিকেল বা স্বয়ংক্রিয় গাড়ি। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব সাশ্রয়ী যান হিসেবে বৈদ্যুতিক গাড়ির জনপ্রিয়তাও এখন তুঙ্গে। এ দুইয়েরই মেলবন্ধন ঘটিয়ে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তি ও বুদ্ধিমত্তায় টিম 'সার্কিট মেস্টারস' তৈরী করবে চালকবিহীন বৈদ্যুতিক গাড়ি।

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে স্বয়ংক্রিয় গাড়ির দৈনন্দিন ব্যবহার বেশ নিয়মিতই বটে। উন্নত দেশগুলোতে নিত্য-ব্যবহার্য যান হিসেবে স্বয়ংক্রিয় গাড়ির চাহিদা দিনকে দিন বাড়ছেই। আর গ্রাহক পর্যায়ে বৈদ্যুতিক গাড়ির জনপ্রিয়তার বিষয়টি টেসলা'র মতো বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাম্প্রতিক বিপণন পরিসংখ্যান ঘাটলে সহজেই অনুধাবন করা যায়। অথচ বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত স্বয়ংক্রিয় গাড়ি নির্মাণের তেমন কোনো উদ্যোগ প্রকাশ্যে আসেনি। 

এ বিষয়টি উপলব্ধি করেই ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে যাত্রা শুরু হয় টিম 'সার্কিট মেস্টারস' এর। দেশের মানুষকে সম্পূর্ণ নিজস্ব প্রযুক্তি ও বুদ্ধিমত্তায় নির্মিত সর্বাধুনিক প্রযুক্তির স্বয়ংক্রিয়-বৈদ্যুতিক গাড়ি সাশ্রয়ী মূল্যে সরবরাহকরণই তাদের লক্ষ্য। 'সার্কিট মেস্টারস' মূলত একটি স্টুডেন্ট ফর্মুলা টিম যেটি আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ প্রকৌশল, যন্ত্র ও উৎপাদন প্রকৌশল এবং কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ প্রকৌশল ও রোবটিক্স ও মেকাট্রনিক্স প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে তৈরী।

'সার্কিট মেস্টারস' এর সহকারী দলনেতা তাসনিমুল হাসান নেহাল জানান, 'দেশের শিক্ষার্থীদেরই চালকবিহীন-স্বয়ংক্রিয় গাড়ি নির্মাণের মতো যথেষ্ট সক্ষমতা রয়েছে। নিজস্ব প্রযুক্তি, এলগোরিদম ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ ও অনুশীলনের মাধ্যমে বাংলাদেশেই পূর্ণমাত্রায় কার্যক্ষম চালকবিহীন স্বয়ংক্রিয় গাড়ি নির্মাণ সম্ভব। আর এটিকে সম্পূর্ণরূপে বৈদ্যুতিক শক্তি দ্বারা চালানোর উপযোগী করে গড়ে তোলা গেলেই এটি হয়ে যাবে চালকবিহীন বৈদ্যুতিক গাড়ি।'

দেশবাসীকে সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরী সর্বাধুনিক প্রযুক্তির স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক গাড়ি উপহার দেবার চ্যালেঞ্জ নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নেই কাজ শুরু করে টিম 'সার্কিট মেস্টারস'। ইতোমধ্যেই তারা 'আইমেকই' কর্তৃক আয়োজিত যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বের অটোমোটিভ ক্ষেত্রে অন্যতম সেরা প্রতিযোগিতা 'ফর্মুলা স্টুডেন্ট ইউকে'-এ  প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে একমাত্র এশিয়ান দল হিসেবে এ বছরই যুক্তরাজ্যের সিলভারস্টোন সার্কিটে নিজেদের স্বপ্নের চালকবিহীন বৈদ্যুতিক গাড়ি নিয়ে প্রতিযোগিতায় নামবে টিম 'সার্কিট মেস্টারস'।

প্রাথমিক নকশা থেকে শুরু করে রেসিং সার্কিটে নামানো পর্যন্ত ধাপভিত্তিক কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য পুরো দলকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিভাগ, তড়িৎ-ব্যবস্থা বিভাগ,  চেসিস প্রস্তুতি ও নকশাকরণ বিভাগ, শক্তিনির্বাহ ব্যবস্থাপনা বিভাগ ও বিজনেস লজিক কেইস বিভাগে ভাগ করা হয়েছে। 

উন্নত বিশ্বের ফর্মুলা স্টুডেন্ট দলগুলো যেখানে গাড়ির নকশা করা ও নিজস্বভাবে উৎপাদিত যন্ত্রাংশের সমন্বয়ে গাড়ি প্রস্তুতিতে কোটি টাকার ওপরে অনুদান পেয়ে থাকে, সেখানে মাত্র ৩৫ লক্ষ টাকায় তাদের সাথে সম্পূর্ণভাবে পাল্লা দিতে সক্ষম একটি গাড়ি উপহার দেয়ার যে সাহস টিম 'সার্কিট মেস্টারস' দেখিয়েছে তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।

'সার্কিট মেস্টারস' তাদের উৎপাদিত গাড়িকে শুধুমাত্র রেসিং সার্কিটে সীমাবদ্ধ না রেখে এটিকে গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার জন্য কাজ করছে। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ প্রাপ্তি তাদের এ প্রচেষ্টাকে আরও বেগবান করতে পারে। এ ধরণের উদ্যোগে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ ও অর্থসংস্থান নিশ্চিত করা গেলে এবং সংবেদনশীল যন্ত্রাংশ আমদানিতে আরোপিত কর  ও ভোগান্তি নিরসন করা গেলে স্বদেশী প্রকৌশলীরাই দেশবাসীকে সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্যব্যবহারযোগ্য চালকবিহীন বৈদ্যুতিক গাড়ি উপহার দিতে পারবে।

ইত্তেফাক/এসটিএম