শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

জনগণের প্রতিবাদ ও প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রতা প্রসঙ্গে

আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০২২, ০৯:১০

বুধবার ইত্তেফাকের একটি খবরে বলা হইয়াছে, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বোয়ালজুরী খালের বাঁধের মাটি কাটিয়া ট্রাক ও ড্রামট্রাকে অন্যত্র বিক্রয় করিয়া দিতেছে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। ইহাতে বাঁধের গাছগাছালি উজাড় হইয়া যাইতেছে এবং বাঁধ হইয়া পড়িয়াছে ঝুঁকিপূর্ণ। ইহাতে আগামী বর্ষায় শত শত বাড়িঘর ও কৃষকের ফসলের জমি হুমকির মুখে পড়িবে বলিয়া আশঙ্কা করা হইতেছে।

এই ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড বা পাউবোর পক্ষ হইতে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হইলেও বাঁধের মাটি কাটা থামিতেছে না। বাঁধের মাটি রাতের আঁধারে চুরি করিয়া নিয়া যাওয়ার ঘটনায় এলাকার কৃষকরা প্রতিবাদ জানাইয়াছেন। কিন্তু সিন্ডিকেটের লোকজন উলটা তাহাদের উপর হামলা চালাইয়াছে।

ইহাতে ১০ জন আহত হইয়াছে এবং তন্মধ্যে চার জনের অবস্হা আশঙ্কাজনক। আমরা প্রায়শ প্রশ্ন করিয়া থাকি, জনগণের নাকের ডগায় তাহাদের সম্পদ লুটপাট হয় কী করিয়া? মানুষ তাহার অধিকার সম্পর্কে সচেতন হইলে এবং দেশরক্ষায় অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হইলে এমনটি হইবার কথা নহে। এইখানে দেখা যাইতেছে, স্হানীয় জনগণ প্রতিবাদে সোচ্চার হইলেও তাহারা প্রশাসনের সহযোগিতা পাইতেছে না। পাউবো ও তাহাদের পক্ষ হইতে থানায় অভিযোগ দেওয়ার পরও অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্হা নেওয়া হইতেছে না বিস্ময়করভাবে।

বেড়িবাঁধের মাটি ইটভাটার লোকেরাও কাটিয়া লইয়া যায়। অথচ এই বাঁধ নষ্ট হইলে সকলকেই দুর্ভোগে পড়িতে হইবে। অনেক সময় বাজারের পাশে অবস্হিত রাস্তার মাটিও কাটিয়া লইয়া যাওয়া হয়। চুরি করা হয় রাস্তার পাথর। এই চুরি বন্ধ করিতে হইবে। সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল—এই প্রবাদবাক্যকে আজ মিথ্যা প্রতিপন্ন করিবার সময় আসিয়াছে। সাধারণ মানুষ নিজেদের অধিকার সম্পর্কে আরো সচেতন ও প্রতিবাদী হইলে কেহ জনগণের সম্পদ এইভাবে হরিলুট করা বা ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করিবার দুঃসাহস পাইবে না। এখন জনগণ প্রতিবাদ করিবার পর স্হানীয় প্রশাসন যদি জনগণের পক্ষে না থাকে, তাহা হইলে দেশের মানুষ যাইবে কোথায়? এই পরিস্হিতি দুর্ভাগ্যজনক নিঃসন্দেহে।

বাংলাদেশে কত সমস্যা! একটা রাস্তা তৈরি করা হইতেছে, কিন্তু সেই রাস্তার কাজ ঠিক সময়ে করা হইতেছে না। কাজ না করিয়া বিল উঠাইয়া লইয়া যাইতেছেন ঠিকাদাররা। কাজের মধ্যে চলিতেছে হাজার রকমের ফাঁকিবাজি। ইহার পর কাজ শেষ করা হইলেও তাহা আর ঠিকমতো সংরক্ষণ করা হইতেছে না। বিশেষ করিয়া দেশে সরকারি কাজে দীর্ঘসূত্রতা লাগিয়াই আছে। সরকারি যে কোনো সিদ্ধান্ত পাইতে আজ অনেক সময় বত্সরের পর বত্সর সময় লাগে।

অনেক সময় প্রসিডিউর ও সিস্টেমের কারণে এই কালক্ষেপণ চলে। বিশেষত রাস্তাঘাটের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেখভাল করিবার জন্য এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়াররা রহিয়াছেন। তাহাদের অধীনে রহিয়াছেন এসডি, এসওসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ। যদি এত সময় লাগে, প্রশ্ন উঠে তাহারা তাহা হইলে কী করিতেছেন? দীর্ঘসূত্রতার কারণে সরকারি প্রকল্পের ব্যয় বাড়ে। সরকারি কাজ ঠিকমতো না হইলে স্হানীয় জনগণ তাহার সুফল ভোগ করিতে পারে না। এই জন্য জনপ্রতিনিধিদের উপর তাহারা চাপ সৃষ্টি করিতে পারেন।

বাংলাদেশে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় রহিয়াছে। তাহাতে দেখা যায়, একেক মন্ত্রণালয় ধারণক্ষমতা বা সক্ষমতারও অধিক প্রজেক্ট লইয়া বসিয়া আছে। ইহাতেও দীর্ঘসূত্রতা দেখা দিতে পারে। পর্যাপ্ত জনবল না থাকিলেও একই অবস্হার সৃষ্টি হয়। ইহাতে সরকারি অর্থের অপচয় হয়। এই দীর্ঘসূত্রতা ও অপচয় বন্ধেও নিজ নিজ এলাকার জনগণকে সচেতন ও প্রতিবাদী হইতে হইবে। আর সরকারের উচিত সক্ষমতা না থাকিলে প্রজেক্টের অনুমোদন না দেওয়া বা কম প্রজেক্ট গ্রহণ করা।

ইত্তেফাক/এসজেড