বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

প্রত্নতাত্ত্বিক মাঠকর্মে মিরসরাই

পাহাড় জয় করে ইন্দ্রটিলা জয়ের মুগ্ধতার রেশ নিয়েই ক্যাম্পাসে ফিরল সবাই| পূর্ব পরিকল্পনা, মিরসরাইয়ের মানুষের আন্তরিকতা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং নয়াদালানের সহযোগিতার কারণে একাডেমিক জীবনের শেষ মাঠকর্ম এক সিন্দুক স্মৃতি হয়ে থাকবে

আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২২, ১৯:০৯

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব চতুর্থ ব্যাচের শেষ একাডেমিক মাঠকর্ম। ব্যাচের সবাই মিলে এমনভাবে আর কোথাও যাওয়া হবে না। অতএব, এক সপ্তাহ আগে থেকেই চলল প্রস্তুতি। দুই দিনব্যাপী মাঠকর্মের স্থান নির্ধারিত হলো সমৃদ্ধ অঞ্চল চট্টগ্রামের মিরসরাই। মাঠকর্ম সম্পাদনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক ও সহ-তত্ত্বাবধায়ক স্যার কয়েকটি গ্রুপে কাজ ভাগ করে দিলেন। মাঠকর্ম বাস্তবায়ন কমিটিও কাজ ভাগ করে নিল। আইডি কার্ড, টিশার্ট, খাবার, মেডিক্যাল ও মিডিয়া টিম যার যা কিছু লাগবে আগেই ঠিক করে নিল। অবশেষে ১৪ জানুয়ারি সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে মাঠকর্মের তত্ত্বাবধায়ক মো. সাদেকুজ্জামান তনু স্যার, সহ-তত্ত্বাবধায়ক মোতাসিম বিল্লাহ স্যার ও রেজোয়ানা আফরিন ম্যামের নেতৃত্বে মিরসরাইয়ের উদ্দেশ্যে বাস ছাড়ল। যেতে যেতে সাদেকুজ্জামান স্যার বলছিলেন, মাঠকর্মের স্থান হিসেবে মিরসরাই নির্বাচন করার কারণ—‘মিরসরাই একটি উপকূলীয় পাহাড়ি অঞ্চল।'

পাহাড়ে প্রাগৈতিহাসিক সময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত বসতির ধারাবাহিকতা এবং এ অঞ্চলে মুসলিম বসতি গড়ে ওঠার পেছনের কারণ অনুসন্ধান করা। তাছাড়া চট্টগ্রাম অঞ্চলে কৌশলগত স্থাপত্য নিদর্শনগুলোর বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা এবং সেগুলো পুনর্পাঠ ও উদ্ধারের লক্ষ্যে এ স্থানটি বাছাই করা।’ পথিমধ্যে বাস থামিয়ে সকালের নাস্তা সেরে নিল সবাই। বাসে উঠেই মুশফিক, মোশারফ, আরিফ, রাজিব, সাকিব গলা ছেড়ে গান ধরল। গানের তালে তালে পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে। সেখানে মাঠকর্মে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে আমাদের সঙ্গে যোগ দিল আঞ্চলিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান নয়াদালান টিম। মনকাজী ভূঁইয়া জামে মসজিদ থেকে শুরু করে প্রথম দিন একে একে অনুসন্ধান করলাম ছয়টি প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শন। স্যার আগেই বলে দিয়েছিলেন আনন্দের সঙ্গে কাজ হবে। সবাই করলও তাই। কেউ নিদর্শনের ছবি নিচ্ছে, কেউ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে, কেউ আঁকছে ভূমিনকশা, আবার কেউ ব্যস্ত মাপ-ঝোঁক নিতে। এক সাইট থেকে অন্য সাইটে যেতে প্রচুর হাঁটতে হলেও আনন্দের সঙ্গেই কাজ করল সবাই। সেই আনন্দে নতুন মাত্রা যোগ করল ব্যাচের একমাত্র ভাগ্নি দুই বছরের মিষ্টি আজুবাহ। কাজের ফাঁকে ফাঁকে চলল ফটোসেশনও। ভালোভাবেই শেষ হলো প্রথম দিনের মাঠকর্ম গবেষণা।

দ্বিতীয় দিন সকাল ৬টা বাজতেই সবাই হাজির। বাসে উঠেই শুরু হলো গান। খুব দ্রুতই পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে। সেদিন আমরা প্রথমেই পরিদর্শনে যাই বড়তাকিয়া মাজার। সেখান থেকে শেখেরতালুক হামিদুল্লাহ্ খান মসজিদও বিশ্রামাগারে অনুসন্ধান শেষে গন্তব্য মঘাদিয়া জমিদার বাড়ি। প্রাচীন নিদর্শন এই বাড়িটি ভঙুর প্রায় হলেও সৌন্দর্য এতটুকু মলিন হয়নি। পাশেই আরেক প্রাচীন স্থাপত্য ওয়াসিল চৌধুরী জামে মসজিদ। প্রত্যেক গ্রুপ ব্যস্ত নিজ নিজ তথ্য উপাত্ত সংগ্রহে। সেখানেই দুপুর হয়ে এলো, সবাই ক্লান্ত বটে। মিরসরাই বাজারে দুপুরের খাবার স্পন্সর করল নয়াদালান টিম। জমিয়ে খাওয়া শেষে সবাইকে পুনরায় সচল করতে স্যার ঘোষণা দিলেন আর দুটি প্রত্নস্থানে অনুসন্ধান শেষে চমক আছে। অতঃপর চাঁনমিয়া চৌধুরী মসজিদে অনুসন্ধান শেষে সিএনজিতে ওয়াহেদপুর গিয়ে দেখা মিলল সেই চমকের। বাওয়াছড়া লেকের সবুজাভ স্বচ্ছ পানি আর চমত্কার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দুই দিনের ক্লান্তি নিমিষেই মিলিয়ে দিল। চলল কয়েক দফা ফটোসেশন। ফুরফুরে মনে এবার ইন্দ্রটিলা পাহাড়ে চড়ার পালা। সেখানে সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে ২ হাজার ৫০০ বছরের প্রাচীন নিদর্শন। পাহাড় জয় করে ইন্দ্রটিলা জয়ের মুগ্ধতার রেশ নিয়েই ক্যাম্পাসে ফিরল সবাই। পূর্ব পরিকল্পনা, মিরসরাইয়ের মানুষের আন্তরিকতা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং নয়াদালানের সহযোগিতার কারণে একাডেমিক জীবনের শেষ মাঠকর্ম এক সিন্দুক স্মৃতি হয়ে থাকবে।

 

ইত্তেফাক/এসটিএম