শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

১৫ হাজার টাকা গাড়িভাড়া দিয়ে এসেও ভর্তি হতে পারলেন না নিপুণ

আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০১:৪৭

স্মার্টফোন না থাকায় অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির নোটিশ দেখতে পারেননি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাননি কোনো এসএমএস। যখন অন্যের মাধ্যমে জানতে পারলেন, তখন সময় বেশি বাকি নেই। তড়িঘড়ি করে এক নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে টাকা ধার করে ১৫ হাজার টাকা চুক্তিতে মাইক্রোবাস ঠিক করেন। তবু নির্ধারিত সময়ের ভেতর বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছাতে না পারায় ভর্তি হতে পারলেন না তিনি।

ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর নাম নিপুণ বিশ্বাস। নীলফামারি সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের এই তরুণ এবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে দীর্ঘ সড়কপথ পাড়ি দিয়ে নীলফামারি থেকে যশোরে যথাসময়ে পৌঁছাতে না পারায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া হয়নি তার।

নিপুণের বাবা একজন সাধারণ নাপিত। পরিবারে অভাব-অনটন রয়েছে। তা সত্ত্বেও ছেলের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগটি যেন তাদের জন্য আলো হয়ে এসেছিল।

জানা যায়, রবিবার (৩০ জানুয়ারি) যবিপ্রবির স্বাস্থ্য বিজ্ঞান অনুষদের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের ৩য় ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সোমবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে উপস্থিত হয়ে ভর্তি সম্পন্ন করতে বলা হয় শিক্ষার্থীদের।

নিপুণ বিশ্বাস ক্যাম্পাসে পৌঁছান ১২টা ১০ মিনিটে৷ এর আগেই ভর্তি কার্যক্রম শেষ হয়ে যায়। এরপর আর অনুনয়-বিনয় করেও কাজ হয়নি।

শিক্ষার্থী নিপুণ বলেন, রবিবার বিকেলে ওয়েবসাইটের নোটিশে ৩য় ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। আমার নাম এতে প্রথম স্থানে ছিল। স্মার্টফোন না থাকায় আমি বিষয়টি যথাসময়ে জানতে পারিনি। মোবাইল নম্বরে এসএমএস বা কল যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি পাইনি। ফলে এই বিজ্ঞপ্তির বিষয়টি যখন অন্যের মাধ্যমে জানতে পারি, তখন মাঝরাত হয়ে গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে টাকা জোগাড় করে মাইক্রোবাস ভাড়া করে রওনা দিয়েও সময়মতো পৌছানো সম্ভব হয়নি। তাই আমি ভর্তিই হতে পারলাম না।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মো. তানভীর ইসলাম বলেন, রবিবার দুপুরে একজন শিক্ষার্থী ভর্তি বাতিল করায় আমরা ৩য় ভর্তি বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করি। মাননীয় উপাচার্যের নির্দেশনা ছিল ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সকল ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এরই প্রেক্ষিতে আমরা ভর্তি কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ  করি। আজকে আমাদের তিনটি বিভাগ সহ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তির কাজ ছিল। শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যে ছেলেটি এসেছে তাকেই ভর্তি করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নিপুণের বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া এই মুহূর্তে আর কিছু করার নেই।  নিয়মের মধ্যে থেকেই আমাদেরকে অনেক সময় কঠিন সিদ্ধান্তে যেতে হয়। তাকে আমরা প্যানেলভুক্ত করে রাখতে পারি, পরবর্তীতে যদি কোন সিট ফাঁকা হয় সেক্ষেত্রে আমি উপাচার্য মহোদয়কে অনুরোধ করব তাকে ভর্তি করার জন্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মেসেজ বা কল না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি টেকনিক্যাল কমিটির দায়িত্ব ছিল। তারাই এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন।

এই বিষয়ে ভর্তি পরীক্ষার টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গালিবের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে কথা বলতে রাজি হননি।

ইত্তেফাক/এসটিএম