মঙ্গলবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে শব্দ করে পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে

আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০:১১

শব্দ করে পড়ার প্রয়োজনীয়তা বহুমাত্রিক। মানুষকে সুন্দরভাবে বোঝাতে সক্ষম হতে চাইলে শ্রুতিমধুরভাবে কথা বলতে জানতে হবে। কোমলমতি শিশুদের ছোটবেলা থেকেই শব্দ করে পড়ায় উত্সাহিত করতে এর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। শব্দ করে পড়লে ইন্দ্রিয় বিষয়টি মনে রাখতে সাহাঘ্য করে। তাই শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে শব্দ করে পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

‘বিশ্ব শব্দ করে পড়া দিবস-২০২২’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। কোমলমতি শিশুদের ছোটবেলা থেকেই শব্দ করে পড়ায় উত্সাহিত করতে প্রতি বছরের মতো এ বছরও বিশ্বজুড়ে উদ্যাপিত হলো ‘বিশ্ব শব্দ করে পড়া দিবস-২০২২’। প্রতি বছর ফেব্র‚য়ারি মাসের প্রথম বুধবার দিবসটি পালন করা হয়। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘রিড অ্যালাউড বাংলাদেশ’ দিবসটি উপলক্ষ্যে এই ওয়েবিনারের আয়োজন করে।

সেমিনারে শিশুদের শব্দ করে পড়ার তাগিদ দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, শব্দ করে পড়ার প্রয়োজনীয়তা বহুমাত্রিক। এটি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অংশ। আমরা দেখতে পাই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেও অনেক শিক্ষার্থী সঠিক উচ্চারণে কথা বলতে পারে না। কারণ, তার ভুল-ক্রুটি কেউ শুধরে দেয়নি। শব্দ করে পড়ার অভ্যাস তৈরি করলে শিশুদের ছোটবেলা থেকেই এ ভুলগুলো সম্পর্কে সচেতন করা সম্ভব হবে।

কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. ওমর ফারুক বলেন, ডিজিটাল ডিভাইস সার্বক্ষণিক ব্যবহারের ফলে আজকের শিশুরা অনেক বেশি আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছে। তারা মোবাইল ফোনেই পৃথিবীটা দেখে। এ কারণে তাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে জড়তাও। শিশুদের অন্যদের সঙ্গে মেলামেশা ও তাদের কথা বলার অভ্যাস গড়ে তুলতে শব্দ করে পড়ার ওপর গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। শিশু হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. এন কে ঘোষ বলেন, আমরা যখন শব্দ করে পড়ি তখন অনেকগুলো ইন্দ্রিয় একসঙ্গে ওই বিষয়টি মনে রাখতে সাহাঘ্য করে। তাই শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে শব্দ করে পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রঞ্জিত কুমার দাস বলেন, শব্দ করে পড়লে, পড়ায় মনোযোগ ধরে রাখা যায়, উচ্চারণটা সঠিক না ভুল, তা অন্যরা শুধরে দিতে পারেন। আমরা যখন ছোট ছিলাম পরিবার থেকে এ বিষয়টির ওপর জোর দেওয়া হতো। এখন হয়তো আগের মতো শব্দ করে পড়া নিয়ে অতটা ভাবা হয় না। নতুন করে সবার সামনে এটিকে নিয়ে আসায় আমি রিড অ্যালাউড বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

রিড অ্যালাউড বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রূপক সিংহ শিশুদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা এখন যে শিক্ষা নেবে, সেভাবেই ভবিষ্যতে নিজেকে তৈরি করবে। এজন্য তোমাদের সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে আমাদের আজকের এই আয়োজন। মনে রাখবে, শব্দ করে পড়ার অভ্যাসের সঙ্গে নিবিড় পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক রয়েছে। তাই ‘শব্দ করি পড়ি, নিজেকে আবিষ্কার করি’ এই প্রত্যয়ে তোমরা দেশ ও জাতিকে সমৃদ্ধ করে তোলো, এটাই আমার চাওয়া।

এছাড়া, এ দিন ভার্চুয়াল সেমিনারের পাশাপাশি গল্প কথন, কবিতা আবৃত্তি, গান ও উপস্হিত বক্তৃতার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া শিশুরা শব্দ করে পড়ার গুরুত্ব সম্পর্কে তাদের নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা তুলে ধরে। এদের মধ্য থেকে ৫০ জনকে রিড অ্যালাউড বাংলাদেশের স্হায়ী সদস্য পদ দেওয়া হবে বলে জানান সংগঠনটি।

ইত্তেফাক/কেকে