পশ্চিম সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের আওতায় গড়ে তোলা হচ্ছে পৃথক দুটি আকর্ষণীয় ইকো ট্যুরিজম স্পট। একটি কালাবগী স্টেশনে কালাবগী ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র, অপরটি পার্শ্ববর্তী আদাচাঁকি টহল ফাঁড়িধীন শেখেরটেক ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র। এই স্টেশন খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলার কালাবগী এলাকার বিপরীত পাড়ে অবস্থিত, তাই নামকরণ করা হয়েছে কালাবগী স্টেশন।
সরেজমিনে কালাবগী ইকো ট্যুরিজম পর্যটন কেন্দ্র পরিদর্শন করে জানা গেছে, ইউনেসকো সুন্দরবনকে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ ঘোষণার পর দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে এ বনের আবেদন অনেকাংশে বেড়ে যায়। তবে বনের ভেতর দিয়ে পর্যটকদের অবাধ যাতায়াতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বনের সার্বিক পরিবেশ ও প্রতিবেশ। পরিস্থিতি বিবেচনায় বনের সৌন্দর্য অবলোকনে নিরিবিলি পরিবেশ সৃষ্টি এবং বন্যপ্রাণীদের অবাধ বিচরণ নিশ্চিত করে পরিবশবান্ধব পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তুলতে উদ্যোগ নেয় পশ্চিম বন বিভাগ। এরই ধারাবাহিকতায় খুলনা জেলা শহর থেকে সড়কপথে ৫০ কিলোমিটার দূরে কালাবগী স্টেশন ও পার্শ্ববর্তী শেখেরটেকে গড়ে তোলা হচ্ছে পৃথক দুটি ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র। এ ছাড়া নীল কোমল বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য কেন্দ্র মেরামতও এই প্রকল্পভূক্ত রয়েছে। এখানে বন্যপ্রাণী আর নানা জাতের বৃক্ষরাজি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে আধুনিক পদ্ধতিতে নির্মাণ হচ্ছে মনোমুগ্ধকর স্থাপনা। উন্নত যোগাযোগ আর নিরাপদ পরিবেশের ব্যবস্থা করতে পারলে ইকো ট্যুরিজমে সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান। ইতিমধ্যে কেন্দ্রগুলো দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
কালাবগী স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) জহিরুল ইসলাম জানান, পর্যটকদের জন্য তৈরি করা হয়েছে নৌযান থেকে ওঠানামার পন্টুন, বসার জন্য গোলঘর ও বেঞ্চ এবং মানসম্মত ওয়াশের ব্যবস্থাপনা। পৃথক খাঁচায় রাখা আছে মায়াবী হরিণ ও কুমির। দেখা মেলে বানর, বুনো শূকর, গুইসাপ ও চিত্রল হরিণের। বনের অভ্যন্তরে দেখা মেলে বাঘের পায়ের ছাপ। চলমান আছে দর্শনার্থীদের বনের মধ্যে ঘুরে দেখার জন্য ২ হাজার ৬০০ ফুট কংক্রিটের ফুট ট্রেইল বা রাস্তা নির্মাণকাজ, নির্মিত হচ্ছে সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার। তা ছাড়া টানানো থাকবে বন্যপ্রাণীর নামের তালিকা ও বিস্তারিত বর্ণনার সাইনবোর্ড। এ বিষয়ে খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এ জেড এম হাসানুর রহমান বলেন, সুন্দরবনের ভেতরে থাকা সাতটি পর্যটনকেন্দ্রে প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ পর্যটক ভ্রমণ করে থাকেন। প্রতিনিয়ত সুন্দরবনের প্রতি দর্শনার্থীদের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের আলীবান্ধা ও চাঁদপাই রেঞ্জের আন্ধারমানিকেও পৃথক দুটি পর্যটন স্পট তৈরির কাজ চলমান।
এব্যাপারে পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. আবু নাসের মহসীন জানান, পর্যটকদের জন্য বনের সৌন্দর্য অবলোকনে নিরিবিলি পরিবেশ সৃষ্টি এবং বন্যপ্রাণীদের অবাধ বিচরণ নিশ্চিত করে পরিবশবান্ধব পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে। এ কারণে তিনি প্রায়ই ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র পরিদর্শন করছেন।