রোববার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

পর্যটকদের পছন্দের জায়গা চর হেয়ার ও সোনারচর

আপডেট : ০১ মার্চ ২০২৫, ০৩:৫৯

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার সমুদ্রের কোল ঘেঁষে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে জেগে ওঠা চর হেয়ার ও সোনারচর সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র। সবুজ বনায়ন, পাখির কলরব, বন্য প্রাণীর ঝাঁক, জেলেদের উচ্ছ্বাস আর সাগরের বিস্তীর্ণ জলরাশি মিলে নয়নাভিরাম প্রকৃতিতে ভরপুর সৌন্দর্যে ঘেরা এ সব চরাঞ্চল। এই সৈকতে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত আর সূর্যোদয়ের দৃশ্য উপভোগ্য। চর হেয়ার ও সোনার চরের আকর্ষণ যে কোনো মানুষকেই কাছে টানে। এখানে পা না ফেললে এটা বোঝার উপায় নেই বলে দর্শনার্থীরা জানান।

স্থানীয়রা জানান, বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা চর হেয়ার কলাগাছিয়ার চর হিসেবে পরিচিতি পেলেও বর্তমানে এটি চর হেয়ার নামে বেশ পরিচিত। অন্যদিকে সোনারচর নামক চরে স্বর্ণ না থাকলেও আছে সোনা রঙের বালু আর মৃদু বাতাসের নৃত্য। সকাল কিংবা শেষ বিকেলের রোদের আলো চরের বেলাভূমিতে পড়লে দূর থেকে পুরো দ্বীপটাকে সোনালি রঙের থালার মতো মনে হয়। বালুর ওপরে সূর্যের আলো পড়ে চোখের দৃষ্টিতে সোনারঙের আভা ছড়িয়ে যায়। মনে হবে দ্বীপটিতে যেন কাঁচা সোনার প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই দ্বীপটির নাম 'সোনারচর' রাখা হয়েছে বলে ধারণা স্থানীয়দের।

বন বিভাগের তথ্যমতে, জেগে ওঠা এই চরের পূর্বপাশে রয়েছে বন বিভাগের সংরক্ষিত বনভূমি সোনারচর। পশ্চিমে চর তুফানিয়া, উত্তরে টাইগার দ্বীপ এবং এর পাশে আছে চর কাশেম। কুয়াকাটা থেকে সাগরপথে এই চরের দূরত্ব ৩৫.১৯ কিলোমিটার। আর রাঙ্গাবালী উপজেলা থেকে চরটির দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। পরিচ্ছন্ন আর নির্ঝঞ্জাট এই চরে রয়েছে চার কিলোমিটার দীর্ঘ বালুকাময় সৈকত।

জানা গেছে, চরগুলোতে আছে হাতেগোনা কয়েকটি পরিবারের বসতবাড়ি, কৃষিজমিসহ মাছের ঘের। পর্যটকরা চাইলে এসব কৃষক পরিবারের কাছ থেকে হাঁস, মুরগিসহ ছাগল, ভেড়া কিংবা মহিষের দুধ কিনতে পারবেন। যোগাযোগ করে আসলে পর্যটন উদ্যোক্তারা রান্না করে খাবার খাওয়ানোর পাশাপাশি চরে রাত্রি যাপনের জন্য তাবু সরবরাহসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে থাকেন। পর্যটকদের সুবিধার্থে বসানো হয়েছে স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাটিন ও গোসলখানা। রয়েছে সুপেয় পানির জন্য গভীর নলকূপ, রাতে চলাচলের জন্য পথে বসানো হয়েছে সোলার স্ট্রিটলাইট, পর্যটকদের বিশ্রামের জন্য রয়েছে সি-বিচ বেঞ্চ ও ছাতা।

রাঙ্গাবালী বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা অমিতাভ বসু বলেন, ‘উপকূলীয় বন বিভাগ কর্তৃক বনায়ন কার্যক্রম গ্রহণের ফলে ইতিমধ্যে সমুদ্রে জেগে ওঠা বহু চর স্থায়ীত্ব অর্জন করেছে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ইকোট্যুরিজম উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় রাঙ্গাবালী উপজেলায় পর্যটন উন্নয়নের মহা পরিকল্পনা প্রণয়ন হতে যাচ্ছে। পর্যটনভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় বনাঞ্চলকে সংরক্ষিত রেখে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। অন্যদিকে অপার সম্ভাবনাময় চরৎে হেয়ার ও সোনারচর অভয়ারণ্য ঘেঁষা জেগে ওঠা বালুর চরে প্রতিনিয়ত ভ্রমণপিপাসুদের কাছে আকৃষ্ট হচ্ছ। সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষায় বন বিভাগ সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে।'

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকবাল হাসান বলেন, 'চর হেয়ার এবং সোনারচর পর্যটন সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য উপজেলা প্রশাসন এবং পর্যটন কর্পরেশনের সহযোগিতায় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে পাঠানো হয়েছে। এই দ্বীপগুলো যেহেতু দুর্গম এবং পর্যটনের সম্ভাবনা রয়েছে, এজন্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য পর্যটন করপোরেশনের সহযোগিতা চেয়েছি। আরো বেশি পর্যটন বান্ধব করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের ভূমিকা থাকবে।

ইত্তেফাক/এনএন