মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

আইসিডিডিআর,বিতে ঘণ্টায় ৫০ ডায়রিয়া রোগী

আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২২, ০৭:৪৬

ঢাকা মহানগর ও এর আশপাশের এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। ঘণ্টায় ৫০-এর অধিক ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি হচ্ছেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)-এ। আইসিডিডিআরবির ৬০ বছরের ইতিহাসে এত রোগীর চাপ তারা দেখেননি বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের শয্যার চেয়ে রোগী বেশি হওয়ায় তাবু টানিয়ে ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। হাসপাতালের বাইরে সাতটি তাবুতেও রোগীদের জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না। রোগীদের বেশির ভাগ বয়স্ক ও শিশু।

আইসিডিডিআরবি সূত্র বলছে, সারা বছর দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ ডায়রিয়া রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগে রোগীর সংখ্যা কিছুটা বাড়ে। সাধারণত মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে শেষ সপ্তাহে রোগী চূড়ান্তভাবে বাড়ে। কিন্তু এ বছর ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে।

আইসিডিডিআরবির সহযোগী গবেষক ও শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. লুবাবা শাহরিন গণমাধ্যমকে বলেন, খাবার ও পানির মাধ্যমে ডায়রিয়ার জীবাণু সংক্রমিত হয়। গরম বাড়ার কারণে রাস্তার দোকান থেকে বিভিন্ন ফলের জুস, শরবত খাচ্ছেন পথচারীরা। এই কারণে ডায়রিয়ার বিস্তার এবার ব্যাপক।

তিনি বলেন, মার্চের শুরু থেকে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত ১৪ মার্চ থেকে দৈনিক ১ হাজারের বেশি রোগী আসছেন। গত কয়েক বছরে এত রোগী আমরা দেখিনি। এবার ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে শিশুদের তুলনায় তরুণ রোগী বেশি পাচ্ছি। তরুণ রোগী বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তারা হয়তো বাইরের খাবার বেশি খাচ্ছেন। এ কারণে ডায়রিয়ার মতো পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এবার অনেক বেশি মাত্রায় রোগী পাচ্ছি। রোগীরা মারাত্মক পানিশূন্যতা নিয়ে আমাদের কাছে আসছেন। তারা সঠিক সময়ে যদি না আসতেন তাহলে অনেকের মৃত্যুর আশঙ্কা থাকতো। ডায়রিয়া থেকে রক্ষা পেতে নিরাপদ পানি ও খাবারের পরামর্শ দেন তারা। সবচেয়ে উত্তম ঘরে তৈরি করা খাবার খাওয়া ও ফুটানো পানি পান করা। পাশাপাশি বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে।

গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে গত শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আইসিডিডিআরবিতে নতুন করে ১ হাজার ১৩৮ রোগী ভর্তি হন। প্রতি ঘণ্টার হিসাবে যা ৪৭ জন। আবার গত শুক্রবার রাত ১২টার পর থেকে গত শনিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত ১৭ ঘণ্টায় ভর্তি হন আরো ৮৬৭ রোগী। গড়ে প্রতি ঘণ্টায় ভর্তি হন ৫০ জনের বেশি। এর আগে গত সোমবার রাত ১২টা থেকে মঙ্গলবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ২৭২ রোগী ভর্তি হন।

আইসিডিডিআরবি কর্তৃপক্ষ জানায়, চলতি মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে দৈনিক ৫০০ এর মতো রোগী এসেছে। দ্বিতীয় সপ্তাহে দৈনিক রোগী বেড়ে হয়েছে ৬০০। ১৭ মার্চ থেকে প্রতিদিন ১ হাজারের বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে। ২১ মার্চ রোগী ভর্তি হয়েছিল ১ হাজার ২১৬ জন। এর আগে কোনো সময় এক দিনে এত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়নি। ঐ দিন ঘণ্টায় ৫০ জন রোগী হাসপাতালে এসেছে।

২১ মার্চ রাত ১২টার পর থেকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত অর্থাৎ ১৭ ঘণ্টায় নতুন রোগী ভর্তি হয়েছিল ৮৭৫ জন। গতকাল ঘণ্টায় ৫১ জন করে রোগী ভর্তি হয়েছে। এত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন আইসিডিডিআরবির চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। তবে সব চিকিৎসা হচ্ছে বিনামূল্যে। ভর্তি রোগীর বড় অংশ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতাল ছাড়তে পারছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর বলেন, এ সময় পানি ফুটিয়ে বা বড়ি দিয়ে বিশুদ্ধ করে খেতে হবে। হাত না ধুয়ে কোনো খাবার খাওয়া উচিত হবে না। রাস্তার পাশের খাবার ও বাসি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

ইত্তেফাক/এমআর

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন