বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

জবিতে ডায়রিয়া নিয়ে ‘অতিরঞ্জিত সংবাদে’ আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা

আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২২, ০৪:০৬

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রী হলে চার দিনে অর্ধশতাধিক ছাত্রী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার খবরে শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এ খবরের সত্যতা পাওয়া যায়নি। এমন খবরের প্রতিবাদ করেছেন হলের প্রভোস্ট ড. শামিমা বেগম ও মেডিকেল সেন্টারের উপ-প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মিতা শবনম।

সরেজমিনে দেখা যায়, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী হলের ২য় ও ১৬তম তলায় ইতোমধ্যে দুইটা পানির ফিল্টার লাগানো হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে পুরো হলে আরও ১৪টি ফিল্টার স্থাপনের প্রস্তুতি চলছে। হলে পানি সরবরাহ করার জন্য ওয়াসার লাইন নয়, রয়েছে গভীর নলকূপ।

হলে হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রকোপ বিষয়ে একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয়। তারা জানায়, ১৬ তলা হলে গত এক সপ্তাহে ৭/৮ জনের ডায়রিয়ার হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু আজকে খবরে অর্ধশতাধিক আক্রান্তের খবর শুনে আমরা বিস্মিত হয়েছি। হলের ছাত্রীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পানির কারণে যে ডায়রিয়া হচ্ছে এ কথা পুরোপুরি সত্য নয়। তবে এটা ঠিক যে আমাদের মাত্র ক্যান্টিনে মাত্র একটি ফিল্টার। পানি নিতে একটু সময় লাগে। যদি পানির কারণেই সমস্যা হতো তাহলে আমাদের সকলের হতো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের ডায়রিয়া চিকিৎসা নেওয়া ছাত্রীদের খোঁজ নিতে গেলে জানা যায়, মার্চ মাসের ২৭ তারিখে ১২ জন, ২৮ তারিখে ১২ জন, ২৯ তারিখে ১৪ জন এবং ৩০ তারিখে ১৫ জন শিক্ষার্থী ডায়রিয়ার প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন এবং ৩১ তারিখে চিকিৎসা নিয়েছেন ৬ জন। কিন্তু এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মিতা শবনম বলেন, গণমাধ্যমে ছাত্রী হলের ডায়রিয়া অর্ধশতাধিক ছাত্রী আক্রান্ত এ তথ্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এখানে চিকিৎসা নেওয়া সকলে ছাত্রী হলের না। এমনকি এই সংখ্যার ভিতর ছেলেরাও আছে। চিকিৎসা নেওয়া ছাত্রীদের মধ্যে অধিকাংশই হলের বাইরের। আর গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় কেউ আসেনি।

তিনি আরো বলেন, সারাদেশেই এখন ডায়রিয়ার প্রকোপ অনেক বেশি বেড়েছে। বিশেষ করে ঢাকা শহরে এই মাত্রা একটু বেশি। সুতরাং এতে হলের বা পানির দোষ দিলে চলবে না, সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

পার্শ্ববর্তী সুমনা হাসপাতালে খোঁজ নিলে হাসপাতালের ম্যানেজার বরুণ বলেন, গত চার দিনে ডায়রিয়াজনিত সমস্যা নিয়ে গত ২৬ তারিখে মাত্র একজন জবি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিলো। এছাড়া কয়েকদিনের মধ্যে ডায়রিয়াজনিত কারণে আর কেউ ভর্তি হয়নি। পাশ্ববর্তী ঢাকা ন্যাশনাল হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে মাত্র দুইজন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিলেন, যার মধ্যে একজনকে হল প্রভোস্ট নিজে ভর্তি করান।

অন্যদিকে জবির হলের ক্যান্টিন পরিচালক নূর মোহাম্মদ মামুন বলেন, আমাকে একজন ফোন দিয়েছিলেন, আমি বলেছি পানিতে একটু আয়রন থাকার কারণে রান্না ভাত লাল হয়ে যায়। আমরা রান্নাবান্নাও অনেক পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে করি। পানির সমস্যা আছে, এমন কোনো কথা আমি বলিনি।

সার্বিক বিষয়ে হল প্রভোস্ট ড. শামীমা বেগম বলেন, পানিতে আয়রন আছে এ কথা সত্য কিন্তু আয়রনযুক্ত পানি খেলে ডায়রিয়া হয় না। পানিতে কোন প্রকার জীবাণু নেই। হলের পানি পরীক্ষা করিয়ে জীবাণু পাওয়া যায়নি। আমি নিজেও এই পানি পান করি।

তিনি আরও বলেন, ছাত্রী হলের পানিতে ও খাবারে কোনো সমস্যা নেই। যদি তাই হতো তাহলে সবাই আক্রান্ত হতো। যেসব শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হয়েছে তারা বাইরের খাবার খেয়েছে নয়তো গরমের মধ্যে আবহাওয়াজনিত কারণে এমন সমস্যা হয়েছে। তবে যেটা প্রাকাশিত হয়েছে যে ‘হলে অর্ধশতাধিক ছাত্রী আক্রান্ত’ তা ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। এছাড়া আমি সবাইকে অনুরোধ করেছি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে থাকতে।

ইত্তেফাক/এসটিএম