কনসালটেন্ট চিকিৎসকের পোস্টিং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কিন্তু তিনি সংযুক্তি নিয়ে শহরের মধ্যে তার সুবিধাজনক স্থানে চাকরি করছেন। এ কারণে চট্টগ্রামের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে কনসালটেন্ট চিকিৎসক সংকট চলছে।
উপজেলার ৫০ শয্যার হাসপাতালে ১০টি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ রয়েছে। কিন্তু প্রতিটি হাসপাতালেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অর্ধেক পদই খালি। ফলে গ্রামের জটিল বা সংকটাপন্ন রোগীরা চিকিৎসাসেবা নিতে শহরের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল কিংবা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বারে ভিড় করছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনা সংক্রমণের সময় জরুরি প্রয়োজনে উপজেলা হাসপাতালের অনেক চিকিৎসককে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালসহ অন্যান্য কোভিড হাসপাতালে সংযুক্তিতে পদায়ন করা হয়েছিল। এদের মধ্যে রয়েছে মেডিক্যাল অফিসার ও কনসালটেন্ট চিকিৎসক। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও সংযুক্তিতে আসা চিকিৎসকরা তাদের পূর্বের কর্মস্থলে ফিরে যাননি। সবচেয়ে বেশি চিকিৎসক সংযুক্তিতে রয়েছেন পূর্ণাঙ্গ করোনার চিকিৎসা কেন্দ্র চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে।
চট্টগ্রাম শহরের কাছে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে ১০টি কনসালটেন্ট পদের মধ্যে চারটি পদ খালি। অর্থোপেডিকস চিকিসককে কোভিডের সময় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে সংযুক্তিতে দেওয়া হয়েছিল। তিনি এখনো সেখানে রয়েছেন। এছাড়া ইএনটি, চক্ষু, চর্ম ও যৌন বিভাগে চিকিৎসকের পদ খালি রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সব্যসাচী নাথ বলেন, আমাদের মেডিক্যাল অফিসার আছে। তবে কনসালটেন্ট চিকিৎসকের সংকট রয়েছে।
মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও অন্যান্য জনবলের সংকট রয়েছে। এই হাসপাতালেও ১০টি কনসালটেন্টের পদের মধ্যে চারটি খালি রয়েছে। ইএনটি, অর্থোপেডিক্স, চক্ষু ও সার্জারি পদের কনসালটেন্ট চিকিৎসক নেই।
কনসালটেন্ট চিকিৎসকের মতো চট্টগ্রামের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে টেকনিক্যাল জনবলেরও চরম সংকট রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, উপজেলা হাসপাতালগুলোতে প্রথমে মেডিক্যাল অফিসার হিসাবে চিকিৎসকদের নিয়োগ পান। পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি নেওয়ার পর পান জুনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে পদোন্নতি। সরকারি চিকিৎসকদের মধ্যে আবার ডিগ্রিধারী চিকিৎসকের সংকট রয়েছে। অনেক চিকিৎসক ডিগ্রি নিয়ে বিদেশে অথবা প্রাইভেট হাসপাতালে চলে যাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, উপজেলা পর্যায়ে ৫০ ও ৩১ শয্যার সরকারি হাসপাতাল রয়েছে। এসব হাসপাতাল উপজেলা সদরে অবস্থিত। ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকলেও এমবিবিএস ডিগ্রিধারী চিকিৎসকের স্বল্পতা রয়েছে। সরকারি নীতিমালা অনুসারে ৫০ শয্যার হাসপাতালে ১০ জন ও ৩১ শঘ্যার হাসপাতালে চার জন কনসালটেন্ট চিকিৎসক থাকার কথা। তবে সিনিয়র কনসালটেন্টের কোনো পদ নেই। আছে শুধুমাত্র জুনিয়র কনসালটেন্টের পদ। জুনিয়র কনসালটেন্টের ১০টি পদের মধ্যে রয়েছে মেডিসিন, কার্ডিওলজি, সার্জারি, এনেস্থেশিয়া, গাইনি, শিশু, অর্থোপেডিকস, চক্ষু, ইএনটি ও চর্ম ও যৌন।
জানা গেছে, বর্তমানে উপজেলা হাসপাতালগুলোতে মেডিক্যাল অফিসার পদে পর্যাপ্ত চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন। সম্প্রতি চট্টগ্রাম জেলার উপজেলা সদর হাসপাতালগুলোতে ১৪১ জন মেডিক্যাল অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, বিশেষ করে সার্জারি, কার্ডিওলজি, গাইনি, ইএনটি, চক্ষু, অর্থোপেডিকস ও অ্যানেস্থেসিয়া বিষয়ে কনসালটেন্ট চিকিৎসকের সংকট বিরাজ করছে। এসব বিষয়ে জুনিয়র কনসালটেন্টদের পদায়ন করেও রাখা যাচ্ছে না।
চট্টগ্রামের সাবেক সিভিল সার্জন ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি ইত্তেফাককে বলেন, কনসালটেন্ট পদায়নের ক্ষেত্রে মেডিক্যাল কলেজগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এখানে চাহিদা পূরণের পর উপজেলা সদর হাসপাতালে কনসালটেন্ট নিয়োগ দেওয়া হয়। দেখা যায় অনেক কনসালটেন্ট চিকিৎসক উপজেলা সদর হাসপাতালে পোস্টিং আছেন, তবে তিনি শহরের কোনো হাসপাতালে সংযুক্তিতে রয়েছেন। আবার এমনিতে কনসালটেন্ট স্বল্পতার কারণে পদ খালি রয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি নিচ্ছেন।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে ১০টি জুনিয়র কনসালটেন্টের মধ্যে মেডিসিন, গাইনি, চর্ম ও এনেস্থেসিওলজিস্ট ছাড়া বাকি ছয়টি কনসালটেন্টের পদ গত পঁচি-ছয় বছর যাবৎ খালি রয়েছে। এনেস্থেসিয়া মেশিন থাকলেও সার্জারি চিকিৎসার জন্য অন্যান্য জনবল নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. দেব প্রসাদ চক্রবর্তী বলেন, অতীতে কোনো সময় জেনারেল সার্জারি ও সিজারিয়ান চিকিৎসা হয়নি।’
সন্দ্বীপ উপজেলায় সম্প্রতি ৩১ শয্যার হাসপাতালটি ৫০ শঘ্যায় উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু এখানে ৫০ শয্যার জনবলের কোন পদ সৃষ্টি করা হয়নি। এমন কি ৩১ শয্যার জনবলও নেই সন্দ্বীপের এই হাসপাতালে। কনসালটেন্টের পদের মধ্যে অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট পদে একজন কনসালটেন্ট রয়েছে। কনসালটেন্টের বাকি সব পদই খালি।