শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

নাম-পরিচয় পরিবর্তন করে যেভাবে আত্মগোপনে ছিলেন শফিকুর

আপডেট : ১৫ এপ্রিল ২০২২, ২০:১৪

রমনা বটমূলে বোমা হামলার মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত ও একাধিক মামলার আসামি মুফতি শফিকুর রহমান ওরফে আব্দুল করিম ওরফে শরীফুর ইসলাম নাম-পরিচয় পরিবর্তন করে দীর্ঘ ২১ বছর আত্মগোপনে ছিলেন।

রমনা বটমূলে বোমা হামলার পর ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত মুফতি শফিক আত্মগোপনে থেকে সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। আব্দুল করিম নাম ধারণ করে ২০০৮ থেকে নরসিংদীর একটি মাদরাসায় আত্মগোপন করেন তিনি। নরসিংদীর চর এলাকায় অবস্থিত একটি মসজিদে মাসিক পাঁচ হাজার টাকা বেতনে ইমামতির চাকরি নেন শফিক। ইমামতির আড়ালে তিনি মানুষের মধ্যে ধর্মের নামে বিভ্রান্তিমূলক অপব্যাখ্যা প্রচার করতেন। কৌশলে মাঝে মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতেন তিনি।

শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারস্থ র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, চাঞ্চল্যকর সব মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করছে র‌্যাব। এরই মধ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম পলাতক আসামি জঙ্গি ইকবালকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলাকালীন বোমা হামলায় ১০ জন নিহত ও আরও অনেকে আহত হন। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে রমনা থানায় একটি হত্যা মামলাসহ অপর একটি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা হয়। হত্যা মামলায় ২০১৪ সালের ২৩ জুন আটজনকে মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।  

র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার প্রধান বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে একটি জনসভা চলাকালে গ্রেনেড হামলা হয়। ওই গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত ও প্রায় তিন শতাধিক গুরুতর আহত হয়। ওই ঘটনায় ঢাকার মতিঝিল থানায় একটি হত্যা ও হত্যাচেষ্টার সহযোগিতাসহ দুটি পৃথক মামলা দায়ের করা  হয়। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং মুফতি শফিকুর রহমান ওরফে আব্দুল করিম ওরফে শরীফুর ইসলামসহ (৬১) আরও ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। গ্রেফতার শফিকুর রহমান ওই গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। একই ঘটনায় ঢাকার মতিঝিল থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের করা অপর মামলারও পলাতক আসামি ছিল শফিক। এছাড়াও ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর থানার বৈদ্যের বাজারে গ্রেনেড হামলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াসহ পাঁচজন নিহত এবং কমপক্ষে শতাধিক লোক আহত হয়। ওই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার শফিকুর কিবরিয়া হত্যা মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি।

শফিকুর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাবকে জানিয়েছে, কিশোরগঞ্জের ভৈরবের নিজ গ্রামে ৫ম শ্রেণি পাস করার পর মাদরাসায় পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ঢাকা চকবাজারের একটি মাদরাসায় পড়াশোনা করেন । এরপর ১৯৮৩ সালে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসায় ভর্তি হয়ে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত দাওরায়ে হাদিস (টাইটেল) পাস করে বাংলাদেশে ফেরত আসেন তিনি। এরপর ১৯৮৭ সালে পাকিস্তানের করাচিতে ইউসুফ বিন নুরী মাদরাসায় ফতোয়া বিভাগে ভর্তি হয়ে তিন বছরের ইফতা (ফতোয়া) কোর্স সম্পন্ন করেন শফিক। করাচির নিউ টাউনে পড়াশোনা করার সময় মুফতি হান্নানের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। ১৯৮৯ সালে পাকিস্তানে অবস্থানকালীন মুফতি শফিক আফগানিস্তানে চলে যান এবং তালেবানদের পক্ষে যুদ্ধ করেন। সেখানে থাকাকালীন জঙ্গী সংগঠন হরকাতুল জিহাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন তিনি। এরপর ১৯৮৯ সালের শেষের দিকে তিনি আবার বাংলাদেশে ফিরে আসেন। বাংলাদেশে আসার পর তিনি ঢাকার খিলগাঁওয়ের একটি মাদরাসায় পার্ট টাইম শিক্ষকতা শুরু করেন।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, আফগানিস্তান থেকে দেশে এসে হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজিবি) নামে একটি জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলার চিন্তা করেন মুফতি শফিক। পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে দেশে ফিরে এসে সমমনাদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে হুজিবি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত হুজিবির প্রচার সম্পাদক ছিলেন মুফতি শফিকুর রহমান ওরফে আব্দুল করিম ওরফে শরীফুর ইসলাম। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত হুজিবির আমীর ও ১৯৯৭ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত হুজিবির সুরা সদস্য ছিলেন তিনি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে ছেলের সঙ্গে সাক্ষাত করতে গেলে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে সড়ক থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এক মাত্র ছেলের সঙ্গে তিনি গোপনে যোগাযোগ রাখতেন। শফিকুরের বিরুদ্ধে ভৈরব থানায় মোট ছয়টি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে।

 

ইত্তেফাক/ইউবি