সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

তরমুজবাহী ট্রাকে ‘চাঁদাবাজি’র শেষ কোথায়?    

আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২২, ১৮:৩৮

তরমুজ পরিবহনের ট্রাক থেকে বরগুনার আমতলীর ১৫ জায়গায় চাঁদা আদায় করার অভিযোগ তুলেছেন  ট্রাকচালক ও ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, হাটবাজারের রশিদ ব্যবহার করে ট্রাকপ্রতি ৩০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রতিটি জায়গায় চাঁদা দিতে দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে।  

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আমতলী উপজেলার সদর, আঠারোগাছিয়া, কুকুয়া, হলদিয়া ও চাওড়া ইউনিয়নে ব্যাপক তরমুজ চাষ হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে তরমুজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ওই তরমুজ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা।

তরমুজ পরিবহনের ট্রাকে চাঁদা আদায় করার রশিদ। ছবি- ইত্তেফাক

তরমুজ পরিবহনে প্রতিদিন শত শত ট্রাক আমতলীর গাজীপুর, দক্ষিণ গাজীপুর, টেপুরা, কাঁঠালিয়া বাজার, সোনাখালী, উত্তর সোনাখালী, মধ্য সোনাখালী, কুকুয়া, মহিষকাটা, সুবন্ধীর বাঁধ, ফকির বাড়ী, খলিয়ান, তালুকদার বাজার ও বিশ্বাসের হাটে অবস্থান করে। স্থানগুলো থেকে ট্রাকে তরমুজ তোলা হয়। হাটবাজারের রশিদ ব্যবহার করে ওই সব ট্রাক থেকে প্রতিদিন চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। তাদের দাবি করা চাঁদা না দিলে ট্রাক আটকে রাখছেন, এমন অভিযোগ করেন হারুন নামের এক ট্রাকচালক।

গাজীপুর বন্দরের ইজারাদার ওহাব হাওলাদার খাজনার কথা বলে ট্রাকপ্রতি এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা আদায় করছেন। কিন্তু ওহাব হাওলাদার অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ট্রাক প্রতি ৭-৮ হাজার টাকা আদায় করতে হয়। কিন্তু আমি সেই রকম আদায় করি না। দক্ষিণ গাজীপুর ব্রিজ এলাকায় মো. মন্টু খাঁন প্রবহমান খালে বাঁধ দিয়ে নলুয়াবাগী, বলইবুনিয়া, পাটুয়া, কাঠালিয়া ও টেপুরা এলাকার তরমুজ আনা নেওয়া করছেন। তিনি বাঁধের নামে ট্রাক প্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা আদায় করছেন।’

গাজীপুর বন্দরের ইজারাদার খাজনা বাবদ ট্রাক প্রতি ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা আদায় করছেন। কিন্তু ইজারাদার মো. ওহাব হাওলাদার অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। 

দক্ষিণ গাজীপুর ব্রিজ এলাকায় মো. মন্টু খান নামের এক ব্যক্তি তরমুজবাহী ট্রাক পারাপারের জন্য খালে বাঁধ দিয়ে রাস্তা বানিয়েছেন। নলুয়াবাগী, বলইবুনিয়া, পাটুয়া, কাঁঠালিয়া ও টেপুরা এলাকার তরমুজ ওই বাঁধের ওপর দিয়ে ট্রাকে আনা-নেওয়া করা হয়। তিনি বাঁধ নির্মাণের নামে ট্রাকপ্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা আদায় করছেন। এ পর্যন্ত তিনি ৩ শতাধিক ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় করেছেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ট্রাকচালক অভিযোগ করেন।

তবে মন্টু খান ট্রাক আটকে রাখার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘খালে বাঁধ দেওয়ায় খরচ হয়েছে। ওই টাকা ওঠাতে কিছু চাঁদা আদায় করছি।’

এদিকে কুকুয়া ইউনিয়নের এক ওয়ার্ড যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক রাসেল মিয়া কুকুয়া-গাজীপুর সড়কের বিভিন্নস্থানে ট্রাক প্রতি ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করছেন। প্রতিদিন ওই সড়কে অন্তত ১৫-২০টি ট্রাক লোড হয়। 

তবে রাসেলের সঙ্গে এই বিষয়ে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তা অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কোনো চাঁদাবাজি করি না। চাঁদা আদায়ের অভিযোগ মিথ্যা।’
 
ট্রাক চালক মো. রহিম মিয়া বলেন, ‘পথে পথে চাঁদা দিতে হয়। টাকা না দিলে বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়।’

দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত বেশ কয়েকজন তরমুজ ব্যবসায়ী বলেন, ‘এক ট্রাক তরমুজ আঞ্চলিক সড়ক থেকে মহাসড়কে আনতে পথে পথে বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজনকে অন্তত চার থেকে ৫ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়।’ 

আমতলী থানার ওসি এ কে এম মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। এখনই খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম বলেন, ‘চাঁদাবাজি বন্ধে ভুক্তভোগীরা পুলিশ প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলে আমিও ভূমিকা রাখতে পারি। তবে, অভিযোগ না পেলে আমার কিছুই করার থাকে না।’
 
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ কে এম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ বলেন, ‘এভাবে হওয়ার কথা নয়। যদি কেউ করে থাকেন, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ইত্তেফাক/এমএএম