শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

হাওরাঞ্চলে ফসলহানির প্রভাব পড়েছে ঈদ বাজারে

আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২২, ১৫:১১

সুনামগঞ্জে ফসলহানির প্রভাব পড়েছে ঈদ বাজারে। বোরো সুনামগঞ্জের প্রধান ফসল। বোরো ধানকে ঘিরে এই অঞ্চলের আনন্দ-বেদনা। ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া, বিয়ে ইত্যাদি কর্মকাণ্ড। ফসল হারানোর প্রভাবে জেলা সদরের মার্কেটগুলোতে ঈদের আমেজ আশানুরূপ নেই। কৃষি পরিবারগুলোর উপস্থিতি একেবারেই কম। 

ফসল ডুবা চাপতির হাওর পাড়ের ৩১ গ্রামের মানুষের মধ্যে ঈদের আনন্দ নেই। গত ৬ এপ্রিল রাতে বৈশাখী ঝড়ে বাঁধ ভেঙে হাজারো কৃষকের সারা বছরের স্বপ্ন পানির নিচে চলে যায়। সামনে ঈদ। কিন্তু হাওরপাড়ের গ্রামগুলোতে ঈদের ভাবনা নেই। আনন্দও নেই। এই অবস্থা ২০টি হাওরপাড়ের বাসিন্দাদের। 

করিমপুর গ্রামের এলাজুর রহমান (৫০) ও আয়েশা আক্তার (৩৫) পঁচা ধান ও আধাপাকা ধান ডুব দিয়ে তুলে এনে রোদে শুকাচ্ছিলেন। এই ধানের চাল খাওয়া যাবে কিনা, প্রশ্ন করতেই-চোখ তুলে তাকালে দেখা যায়- চাহনীতে রাজ্যের যত ক্লান্তি। পরে বললেন, ‘একটা খাইয়াতো বাছন লাগবো’। 

আয়শা আক্তার বলেন, ‘ছোট বাইচ্চাটা সাইকেলে জন্য, বড় ছেলেটা জিন্সের প্যান্ট চাইছিল-দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন-কি আর করমু।’ 


এলাজুর রহমান জানালেন, তিনি বর্গাচাষী। এবার বড় আশা নিয়ে ২০ কেয়ার জমি বর্গা নেন। মাসে শতকরা ১০ টাকা সুদ দেওয়ার শর্তে ৩০ হাজার টাকা ছয় মাসের জন্য এনেছিলেন। ধান বিক্রি করে লাভের ১৮ হাজার টাকাসহ ৫৮ হাজার টাকা দেওয়ার কথা। এখন টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার চাপ এসেছে। ঈদে তেল-ময়দা কেনার টাকা নেই। ৫ জনের সংসার নিয়ে এলাজুর চোখে আঁধার দেখছেন বলে জানান তিনি। 

করিমপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান লিটন চন্দ্র দাস বললেন, চাপতির হাওরে ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারের দেওয়া ১০ কেজি করে চাল আপাতত দিয়েছি। আমরা পরিষদের উদ্যোগে কী করা যায় ভাবছি। 

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, ২১ হাজার শ্রমিক বাহিরের জেলা থেকে এসে যোগ দেয়। এতে ৩ লাখ কৃষক মাঠে ধান কাটায় নিয়োজিত। অনেক স্থানে কাটা শেষ তারা বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। এছাড়া বোরো ধান কাটতে ৫৮৪ টি কমবাইন্ড হারভেষ্টর মেশিন ও  ১০৮ টি রিপার মেশিন মাঠে নামে। কোথাও ৬০ ভাগ, কোথাও ৯০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। 

তবে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, শুক্রবার পর্যন্ত গভীর হাওরে ৯৩ ভাগ। অগভীর হাওরে ৩৭ ভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রায়হান কবীর বলেন, তাহিরপুরে বিভিন্ন হাওরের প্রায়  ৯০ ভাগ ও মাটিয়ান হাওরেও ৭০ ভাগ ধান কাটা সম্পন্ন। 

আবার সময়মত বৃষ্টি না হওয়ায় এবার অনেক স্থানে ধানে চিটা হয়েছে। ব্রি-ধান-২৯-এর ফলন অনেকটা ভালো হয়েছে। যারা ব্রিধান-২৮ করেছেন তারাই বেশি ধরা খেয়েছেন। এই অবস্থায় জামালগঞ্জ, সুনামগঞ্জের মোহনপুর, দিরাই, বিশ্বম্ভরপুরে অনেক কৃষক ক্ষেতে কাঁচি ধরেননি।  

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান উদ দৌলা বলেন, ‌‘ধান কাটতে সরকার ভর্তুকি মূল্যে ধান কাটার যন্ত্র দিয়েছে। ২০টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মাঠে কাজ করছে।’

ইত্তেফাক/কেকে