মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

সামাজিক নিরাপত্তায় গৃহহীনদের আবাসন কর্মসূচি

আপডেট : ০৬ মে ২০২২, ০৪:১৯

সারা দেশের ছিন্নমূল ও গৃহহীনদের আবাসন নিশ্চিত করার যে কর্মসূচি সরকার গ্রহণ করেছে, তা নিঃসন্দেহে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় অত্যন্ত গুরুত্ববহ। বর্তমানে দেশে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অনেকগুলো উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার, যা ইতিমধ্যে বাস্তবায়িত হচ্ছে ধারাবাহিকভাবে বিগত অনেক বছর থেকে। 

সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বিগত ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৩৭৩ কোটি টাকা। আর তা ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকায়। উল্লেখ্য যে, এটা মোট বাজেটের ১৬.৮৩ শতাংশ এবং জিডিপির ৩.০১ শতাংশ। প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সরকার অনেকগুলো লক্ষ্য চিহ্নিত এবং নির্ধারিত করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বিস্তৃত করেছে। 

এই লক্ষ্যগুলো হলো : বয়স্কভাতাভোগী, দরিদ্র মায়েদের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতাভোগী, ভিজিডি কার্যক্রমের আওতায় উপকারভোগী, কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহযোগিতার আওতায় উপকারভোগী, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত নারী ভাতাভোগী, ভেদে ও অনগ্রসর মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ ভাতাভোগী, অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্হানের কার্যক্রম, শিক্ষা উপবৃত্তি ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, কিডনি ও লিভার সিরোসিস রোগীদের সহায়তা কার্যক্রম, চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে কর্মসূচিসহ গৃহহীন ও ছিন্নমূলদের আবাসান কার্যক্রম এবং সর্বসাধারণের পেনশন কার্যক্রম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। 

২০২০-২১ অর্থবছরে এসব লক্ষ্যে উপকারভোগী বা সুবিধাভোগীর সংখ্যা বিগত সময়ের চেয়ে উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যসূত্রে দেখা যায় বয়স্কভাতা উপকারভোগীর সংখ্যা গত বছরের ৪৪ লক্ষ থেকে ৪৯ লাখে উন্নীতকরণ, বিধবা স্বামী পরিত্যক্তা নারী সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১৭ লাখ থেকে ২০ লাখ ৫০ হাজারে বৃদ্ধি, প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা ১৫ লক্ষ ৫৫ হাজার থেকে ১৮ লক্ষে উন্নীতকরণসহ প্রায় প্রতিটি খাতেই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। সেই সঙ্গে গৃহহীন ভূমিহীন ও ছিন্নমূলদের জন্য আবাসন ব্যবস্হা নিশ্চিত করতে ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প’, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’, ‘খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প’, ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে। 

প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ্য যে, প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে ১ লাখ ১৭ হাজার ২৯টি ঘর নির্মাণের পর তৃতীয় ধাপে ৬৫ হাজার ৬৭৪টি ঘর নির্মাণাধীন। যার মধ্যে সম্প্রতি ৩২ হাজার ৯০৪টি হস্তান্তর করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তথ্যসূত্রে আরো জানা যায় আবাসন এই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি ৬০ হাজার ১৯১টি এবং ২০ জুন ৫০ হাজার ৩০০টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম হলো বাসস্হান। 

আর এই বাসস্হান ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য নিশ্চিত করা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ, যা শুধু মানবিক, দূরদর্শী ও সুদূরপ্রসারী নেতৃত্বগুণেই সম্ভব। বর্তমানে দেশে সব জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদা যথাযথভাবে পূরণ না হলেও খাতভিত্তিক মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণের জন্য সরকার যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তা দৃশ্যমান। বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্হান, শিক্ষা, স্বাস্হ্যবিষয়ক মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য যে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন তা সব মহলে স্বীকৃত। সেটা আজ জাতীয় পর্যায় থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি লাভ করেছে। কেননা বর্তমান সময়ে খাদ্যচাহিদা পূরণে উত্পাদন বৃদ্ধি ও চাহিদা পূরণ এখন দৃশ্যমান, যা হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে এই সরকারের সময়ে। 

শিক্ষাখাতে তার সুদূরপ্রসারী নেতৃত্বে নতুন নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্হাপনসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী তথা উপকারভোগীর সংখ্যা বিস্তৃত ও সম্প্রসারিত হয়েছে। সাক্ষরতার হার, শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাস্হ্য খাতে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে করোনা চলাকালে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সবার জন্য টিকা নিশ্চিত হয়েছে। আর আবাসন খাতের এই উদ্যোগ তো তারই যোগ্য নেতৃত্বের প্রমাণস্বরূপ। 

বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতি নিশ্চিত করে কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে নিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সুদূরপ্রসারী ও দূরদর্শী নেতৃত্ব দিচ্ছেন তা আজ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে। কেননা কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্তই হলো অন্যান্য সব খাতে সম-উন্নয়নসহ পরিপূর্ণ সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। 

সেদিক থেকে বিবেচনা করলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিল্প ও উত্পাদন খাতের উন্নয়ন, সেবা খাতের উন্নয়ন ও সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ, সামাজিক অস্হিতিশীলতা দূর করে সামাজিক উন্নয়ন, জ্ঞানভিত্তিক সমাজগঠন ও সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে দূরদর্শী নেতৃত্ব প্রয়োজন তার প্রায় সবই বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে বিরাজমান। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, নেতৃত্বের গুণাবলিতে ত্বরিত সিদ্ধান্তগ্রহণ, সত্ ও সাহসী পদক্ষেপ, মানবীয় গুণাবলি, বিজ্ঞানমনস্ক আধুনিক চিন্তার বাস্তবায়ন অত্যন্ত গুরুত্ববহ। 

আর উল্লিখিত সব গুণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে রয়েছে, যার ফলে দূরদর্শী নেতৃত্বের ইতিবাচক প্রভাব দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অন্যান্য দেশের সঙ্গে তার কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ, দেশের অভ্যন্তরের অর্থনৈতিক, সামাজিক সফলতাসহ উত্পাদন খাতে বিদু্যত্, কৃষির সফলতা আজ দৃশ্যমান। 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উল্লিখিত এসব সফলতা অর্জনে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন প্রয়োজন শুধু সকল পর্যায়ে সুশাসন নিশ্চিত করা—যার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে অন্য সব খাতের উন্নয়নের সামঞ্জস্য বিধানকল্পে তার দূরদর্শী নেতৃত্ব দৃশ্যমান। আর এই নেতৃত্বকে ভিত্তি ধরে সমগ্র বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজন সবার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াশ। 

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক স্হিতিশীলতা আনয়ন, পররারাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট উদ্যোগ গ্রহণ, আর্থসামাজিক উন্নয়নে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ও উদ্ভাবন, মানুষে মানুষে ব্যবধান কমিয়ে আনতে সমতাভিত্তিক নীতিনির্ধারণসহ দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সমগ্রজাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী, সুদূরপ্রসারী, সৎ, সাহসী নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় দেশ এগিয়ে যাক, সেই প্রত্যাশা এখন আপামর জনগণের।

লেখক: উপাচার্য, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

ইত্তেফাক/জেডএইচডি

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন