বুধবার, ০৭ জুন ২০২৩, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

সরকারের উন্নয়ন সর্বজন স্বীকৃত, তবে—

আপডেট : ০৯ মে ২০২২, ০৪:৩২

গত শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সভাপতির সূচনা বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলিয়াছেন, ‘কেউ কেউ সরকারকে উৎখাতের কথা বলছে। তারা দলটল করার চেষ্টা করছে; কিন্তু আমাদের অপরাধটা কী? আমরা কোথায় ব্যর্থ হয়েছি?’ তাহার এই কথায় একধরনের আক্ষেপ রহিয়াছে বটে, তবে ইহা দিবালোকের ন্যায় সত্য যে, এই সরকার দেশের অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করিয়াছে এবং এখনো করিয়া চলিয়াছে। গত এক দশকে আমাদের আর্থসামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হইয়াছে। কমিয়াছে দারিদ্রে্যর হারও। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি, যোগাযোগ প্রভৃতি ক্ষেত্রে যে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগিয়াছে, তাহা অস্বীকার করিবার উপায় নাই। উপজেলাগুলিতে আজ হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ হইতেছে। প্রশাসনিক জটিলতা ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের উদ্যোগের ঘাটতিতে কোথাও কোথাও ইহার ব্যতিক্রম হইতে পারে, তবে যেই সকল এলাকায় এই সমস্যা নাই এবং ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলিতেছে, সেখানকার সাধারণ মানুষ কী বলেন তাহা অবশ্যই বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন। অনেক মেগা প্রজেক্ট উদ্বোধনের অপেক্ষায় রহিয়াছে। এইগুলির সুফল জনগণ লাভ করিতে শুরু করিলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার যে আরো বাড়িয়া যাইবে, তাহাতে কোনো সন্দেহ নাই। এই অর্থে সরকারের অপরাধ ও ব্যর্থতা কোথায়—এই প্রশ্ন আমাদেরও।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচনই হইল জন রায় এবং মতামত প্রতিফলনের প্রকৃত ও বিশ্বস্বীকৃত পম্হা। ষড়যন্ত্রকারীরা কে কী করিতেছে এবং ভাবিতেছে—তাহা লইয়া সতর্ক থাকিবার প্রয়োজন রহিয়াছে, তবে ইহাকে পরোয়া করিবার কোনো কারণ নাই। তাহাদের সংখ্যা হাতেগোনা। সরকার কী করে নাই তাহা সকল দেশেই বিপক্ষরা জোরেসোরে বলেন; কিন্তু ভালো কী কাজ করিয়াছে বা করিতেছে তাহা বলেন না। এমনকি সংবাদপত্রও তাহা লেখে না বা কদাচিত্ লিখিয়া থাকে। যদিও উন্নয়নশীল বিশ্বে পশ্চিমা ধাঁচের অবজেকটিভ জার্নালিজমের পাশাপাশি ডেভেলপমেন্ট জার্নালিজমের গুরুত্ব কোনো অংশে কম নহে। বিপক্ষরা সরকারি উন্নয়নের কথা কেন বলেন না, তাহা ক্ষমতাবানরা প্রায়শ বুঝিতে পারেন না। আবার একশ্রেণির এলিট বা অভিজাত ব্যক্তি সরকার পরিবর্তনে সকল সময় বিদেশের সিগন্যাল বা আকার-ইঙ্গিতের অপেক্ষায় থাকেন; কিন্তু তাহাদের সংখ্যাও খুব বেশি নহে। তাই আমাদের বরং বৃহত্তর জনগণের কথা চিন্তা করিয়াই কাজ করিয়া যাইতে হইবে। তাহারা সরকারের কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেন কি না এবং তাহাদের সমর্থন আছে কি না, তাহাই এখানে মুখ্য ও বিবেচ্য বিষয়। এই বৃহত্তর শ্রেণির আস্থা অর্জনে তাহাদের সুবিধা-অসুবিধার প্রতি অধিক দৃষ্টি দিতে হইবে। বৃহত্তর জনগণ এমনকি লেখাপড়া জানা লোক ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দেখা যায়, তাহারা এই সরকারের প্রশংসা না করিয়া পারিতেছেন না। শহর হইতে গ্রামাঞ্চলে বেড়াইতে গেলে আমরা দেখিতে পাই, মুষ্টিমেয় লোক এই সরকারের সমালোচনা করিতেছে। বাড়িতে ইহা লইয়া আলোচনা করিতে গেলে অনেক সময় দেখা যায়, পরিবারের অন্য সদস্যরা তাহাদের থামাইয়া দিতেছেন। তাহারা তখন বলেন, ইহা সর্বাংশে সত্য নহে। ইহার পাশাপাশি তাহারা তাহাদের এলাকায় বিভিন্ন রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্টসহ উন্নয়নের একটি ফিরিস্তি তুলিয়া ধরিতেছেন; কিন্তু এতত্সত্ত্বেও এই ইতিবাচক মনোভাব পোষণকারী ব্যক্তিরা কিছু হনুমান ও বানরের ভেংচি সহ্য করিতে পারিতেছেন না। ইহাতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও অনেক সময় ত্যক্তবিরক্ত হইয়া উঠিতেছেন। তাহাদের নাড়িনক্ষত্রের খবর অনেকের অজানা নহে। পদ-পদবি ক্রয় করিয়া তাহারা সর্বগ্রাসী রূপ লাভ করিয়াছে। তাহাদের কারণে কোনো কোনো এলাকায় বসবাস করা কঠিন হইয়া পড়িয়াছে। তাহাদের দাপটের নিকট সরকারি দলের কর্মীরাও আজ অনেক ক্ষেত্রে অসহায় ও কোণঠাসা। নেংটি ইঁদুরের মতো ধড়িবাজ এই ব্যক্তিদের যে করিয়াই হউক নিয়ন্ত্রণ করিতে হইবে।

গাছে ফলফলাধি ধরিলে বানরসহ বিভিন্ন পাখপাখালি আসিবেই; কিন্তু তাহাদের ভেংচি প্রদান হইতে সতর্ক থাকিতে হইবে। পহেলা মার্চ ২০২২ পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী আমাদের ভোটারসংখ্যা ১১ কোটি ৩২ লক্ষ। দিন শেষে তাহারাই কথা বলিবেন। সেই জনরায় মাথা পাতিয়া লইতে হইবে। তাহারা কাজকর্ম শেষে ঘরে ফিরিবার সময় ঠিকই দেখিতেছেন ঘরে-বাহিরে বাতি জ্বলিতেছে। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চলিতেছে। ইহাই যখন বাস্তবতা, তখন মতলববাজদের কথা মাথা হইতে যতটা অধিক ঝাড়িয়া ফালানো যায়, ততই মঙ্গল। জনগণের জন্য কাজ করিলে জনগণ তাহা অবশ্যই স্বীকার করিবেন—এই আত্মবিশ্বাস রাখিয়া কাজ করিয়া যাইতে হইবে, যাহাতে শেষ পর্যন্ত তাহারা পক্ষে থাকেন।

ইত্তেফাক/কেকে