একজন মজিমা খাতুন। পেশায় শিক্ষক। সাতজন সফল সন্তানের মা। রবিবার (৮ মে) সন্ধ্যায় খেতাব পেয়েছেন রত্নগর্ভা মায়ের। তার জীবন-কর্ম ও সন্তানদের পেছনে শ্রম এনে দিয়েছে এই বিশেষ সম্মাননা।
‘পৃথিবীর সবকিছু বদলে যায়, বদলায় না শুধু মা’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে পঞ্চগড়ের বোদায় বিশ্ব মা দিবস ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিনে রত্নগর্ভা মা মজিমা খাতুনকে বিশেষ সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।
সৃষ্টি-সেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠান ‘স্পন্দন’র আয়োজনে একুশ স্মৃতি পাঠাগারে কবি অধ্যাপক প্রবীর চন্দের সভাপতিত্বে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হয়।
এসময় অধ্যাপক এমরান আল আমিন, অধ্যাপক মণিশংকর দাস গুপ্ত, সহ অধ্যাপক এন এ রবিউল ইসলাম লিটন, প্রধান শিক্ষক মোছা. হোসনে আরা বেগম, রত্নগর্ভা মায়ের সন্তান আবেদা খাতুন, শেখ আবুল কাসেম শিলন, ছাত্র-শিক্ষক ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
রত্নগর্ভা মা মোছা. মজিমা খাতুন বোদা পৌরসভার সাতখামার এলাকার মরহুম আজিমুদ্দীন আহম্মদের সহধর্মিণী।
গর্বিত এ মায়ের গর্ভে জন্ম নেওয়া প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে চলেছেন। তার সর্বকনিষ্ঠ ছেলে আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকী এখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার অগ্রজ আলি রেজা সিদ্দিকী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব। এই দুই ভাই একই সময় বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (বি.সি.এস) উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন।
এছাড়া, সফল এ মায়ের সাত সন্তানের মধ্যে তৃতীয় জন আফসার সিদ্দিকী রাশিয়া থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে দেশের শীর্ষ চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তারই বড় ভাই আশরাফ সিদ্দিকী স্থানীয়ভাবে লেখাপড়া শেষ করে সংসার পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন। তারই একমাত্র ছেলে আতাহার সিদ্দিকী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে বর্তমানে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন।
অপর তিন কন্যার মধ্যে জ্যেষ্ঠ কন্যা আবেদা খাতুন সরকারি মাতৃমঙল কেন্দ্রে স্বাস্থ্য পরিদর্শক হিসেবে দীর্ঘ দিন চাকরি করে অবসর গ্রহণ করেছেন। দ্বিতীয় কন্যা মুসলিমা খাতুন একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। তৃতীয় কন্যা আঞ্জুমান আক্তার জাপান ভিত্তিক একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হাংগার ফ্রি ওয়ার্ল্ড’র ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োজিত আছেন।
তিনি নিজেও শিক্ষাজীবনে একজন মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে সাফল্য রেখেছিলেন। সে সময় মাইনর স্কুল স্কলারশিপ পেয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে তিনি প্রথম স্থান অর্জন করেন। কিন্তু তিনি জানালেন অল্প বয়সেই তার বিয়ে হয়ে যায়, সেইসঙ্গে তার লেখাপড়াও থেমে যায়। লেখাপড়ার প্রতি অদম্য স্পৃহা দেখে তার স্বামী আজিমউদ্দিন আহম্মদ তার তৃতীয় সন্তান জন্মের পর পুনরায় লেখাপড়ার সুযোগ করে দেন। স্বামীর সহযোগিতায় সে সময় মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় গণিতে 'লেটার মার্কস' পেয়ে প্রথম বিভাগ লাভ করেন।
সন্তানদের এবং নিজের মেধা বিবেচনায় বিভাগীয় পর্যায়ে তিনি সফল জননী হিসেবে ‘জয়িতা’- সম্মাননা অর্জন করেন। নাতি ও ছেলে-মেয়েদের সাফল্যে তার মুখে ফুটে ওঠে আত্মতৃপ্তির জৌলুশ৷
এখন তিনি ৮০ পেরিয়ে ৮৪ অতিক্রম করছেন। এ বয়সেও যেন তিনি তৃপ্তির মহিমায় উজ্জ্বল একজন সফল জননী। তিনি এখন সবার কাছে রত্নগর্ভা ‘মা’ হিসেবে পরিচিত।