শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

যোগ্যতাই সুযোগ আনিয়া দেয়

আপডেট : ১১ মে ২০২২, ১০:৩৮

ভুবনখ্যাত জার্মান দার্শনিক আর্থার শফেনআওয়ার বলিয়াছিলেন, ‘প্রতিভা এমন একটি লক্ষ্যকে আঘাত করে, যাহা অন্য কেহ পারে না, মেধাবীও এমন একটি লক্ষ্যে পৌঁছাইয়া যান, যেইখানে অন্যেরা পৌঁছাইতে পারে না।’ বর্তমান যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের যোগাযোগ নিবিড় হইয়া উঠিবার পর আমরা ইহাই দেখিতে পাইতেছি। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, সামাজিক শ্রেণিনির্বিশেষে পৃথিবী হইয়া উঠিতেছে মেধাবীদের। বর্তমান সময়ে ইহা প্রমাণ হইয়াছে, মেধা যদি থাকে তাহা হইলে অপরচুনিটির অভাব নাই। ইহার জলজ্যান্ত সাম্প্রতিক প্রমাণ রাখিয়াছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রাজীব চন্দ্র পাল। সোজা ভাষায় বলিতে গেলে বিশ্বের সবচাইতে বড় প্রযুক্তি-জায়ান্ট মাইক্রোসফট তাহাকে ডাকিয়া চাকরি দিল। তাহাকে মাইক্রোসফট আয়ারল্যান্ড রিসার্চে সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে নিয়োগ প্রদান করা হইয়াছে। এই রাজীব পালই প্রথম নহে, ইহার পূর্বে ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসায় সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসাবে যোগ দিয়াছেন সিলেটের মেয়ে মাহজাবীন হক। ২০১৯ সালেই নাসার ‘স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ-২০১৮’ বিজয়ী হয় বাংলাদেশের ‘অলিক’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ফলে এই দলের পাঁচ তরুণ নাসায় কাজ করিবার সুযোগ পায়। ইহা ছাড়াও দেশের এবং প্রবাসে বসবাসকারী এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অনেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মর্যাদাসম্পন্ন পেশায় নিয়োজিত রহিয়াছেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের মতো দেশে পুলিশ, স্টেট ডিপার্টমেন্ট কর্মকর্তা, ব্যাংক কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ বহু বাংলাদেশি রহিয়াছেন। তাহারা নিজেদের প্রচেষ্টায় স্থান করিয়া লইয়াছেন।

শুধু বাংলাদেশি বলিয়া কথা নহে, বিশ্বের যেই প্রান্তের যে কোনো মানুষ মেধা ও পরিশ্রম করিলেই এখন সাফল্য ধরা দেওয়াটা খুব কঠিন নহে। নিজস্ব যোগ্যতায় অভিবাসিত মানুষকে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী, মেয়রের পদ অলংকৃত করিতে দেখিতেছি। হতাশাবাদী অনেকে হয়তো বলিবেন, ‘সুযোগ থাকিতে হয়।’ কিন্তু বর্তমান সময়ে আর যাহাই হউক, প্রতিভা বিকাশের সুযোগ নাই— এই রকম অবস্থা আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশেও সত্য নহে। কোনো শিক্ষার্থী লেখাপড়া করিতে চাহিলে তাহার লেখাপড়া বন্ধ হইয়া যাইবে— এই অবস্থা নাই বলিলেই চলে। দেশে বহু ধনাঢ্য ব্যক্তি রহিয়াছেন, যাহারা অকাতরে শিক্ষার জন্য হাত বাড়াইয়া দিতেছেন। তবে ইহা সত্য যে, উচ্চশিক্ষার জন্য, প্রতিভা বিকাশের জন্য যেই ধরনের পরিবেশ প্রয়োজন, যেই ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রয়োজন— তাহার ঘাটতি রহিয়াছে। আমরা আশা করি, ইহাও একসময় ঠিক হইয়া যাইবে। ৫০ বত্সর পূর্বে আমাদের অবস্থা কী ছিল আর এখন কোথায় আছি—তাহা বিচার করিলেই আমরা আশান্বিত হইতে পারি। আমরা রাজীব পালসহ প্রতিভাবান সফলদের অভিনন্দন জানাই। ইহার পাশাপাশি প্রতিভা যাহাতে বিকশিত হইতে পারে সেই ব্যাপারে দেশের দায়িত্বশীলদের নজর রাখিতে বলিতে পারি।

ইত্তেফাক/এসজেড

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন