বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি চিকিৎসাসেবা বেহাল

আপডেট : ১২ মে ২০২২, ০০:১২

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে রয়েছে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপ-কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র। সরকারিভাবে এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিনা মূল্যে ওষুধ সরবরাহ ও প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য জনবলের সৃষ্ট পদ রয়েছে। কিন্তু জনবল সংকটে গ্রামের সরকারি এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত হচ্ছে। সৃজনকৃত পদ আছে কিন্তু জনবল নেই। সৃষ্ট পদের বিপরীতে নেই ডিগ্রিধারী চিকিৎসক ও অন্যান্য জনবল। 

চিকিৎসকরা জানান, ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য উপ-কেন্দ্রগুলো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবায় ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু নানা সংকটে তা ব্যাহত হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানান, শুধু চট্টগ্রামেই নয়, সারা দেশের গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে একই অবস্থা বিরাজ করছে।

চিকিৎসাসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর জন্য সরকার ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করে। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্বাস্থ্য বিভাগ ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তবে ইউনিয়ন ও গ্রামের সংখ্যা অনুসারে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ঘাটতি রয়েছে। কেননা সব ইউনিয়ন ও গ্রামে স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। আর যেগুলো রয়েছে তাতেও নানা সংকটে প্রান্িতক জনগোষ্ঠী আশানুরূপ সেবা পাচ্ছেন না। জনবলের ঘাটতি সেবা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

চট্টগ্রাম জেলায় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপ-কেন্দ্র রয়েছে ৭২টি। কোনো উপজেলায় পাঁচটি ও কোনো উপজেলায় সাতটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপ-কেন্দ্র রয়েছে। বিগত ৮/১০ বছরের মধ্যে নতুন করে কোনো ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপ-কেন্দ্র হয়নি। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রতিটিতে সৃষ্ট জনবলের পদ রয়েছে চারটি। এগুলো হচ্ছে—মেডিক্যাল অফিসার এক জন, উপ-সহকারী মেডিক্যাল অফিসার এক জন, ফার্মাসিস্ট এক জন ও পিয়ন এক জন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি স্বাস্থ্য উপ-কেন্দ্রে জনবলের ঘাটতি রয়েছে। অন্যান্য স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে এনে সপ্তাহে পালা করে চালু রাখা হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলায় কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে ৫৩৫টি। ক্লিনিকগুলোতে স্বাস্থ্য বিভাগের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) পদে একজন করে কর্মরত রয়েছেন। সরকারিভাবে ২৭ আইটেমের ওষুধ সরবরাহ করা হয়। এসব ওষুধ বিনা মূল্যে রোগীদের বিতরণ করার কথা। তবে জনবল সংকটে কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিকে সিএইচসিপি পদে জনবল নেই। এসব ক্লিনিকে অন্যান্য জনবলের মধ্যে একজন স্বাস্থ্য সহকারী সপ্তাহে বা মাসে কয়েকটি গিয়ে টিকা প্রদান করেন। আর পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের একজন পরিবার কল্যাণ সহকারী সপ্তাহে দুই/তিন দিন সেবা দিয়ে থাকেন।

এছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আওতায় জেলায় ১৩৩টি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। তবে জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। চট্টগ্রামের পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের স্বাস্হ্যকেন্দ্রগুলোতে জনবলের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, পরিবার কল্যাণ সহকারী পদের জনবল প্রান্তিক পর্যায়ে কাজ করে থাকেন। এই পদে ৯৯৬টি সৃষ্ট পদের মধ্যে ২৯৩টি পদ শূন্য রয়েছে। এতে মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকার ২৭৯টি পদের মধ্যে ১৫০টি পদ শূন্য রয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকের ২১০টি পদের মধ্যে ৪৩টি শূন্য। উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসারের ১১৯টি পদের মধ্যে ৩৬টি শূন্য। ফার্মাসিস্টের ২৯টি পদের মধ্যে ২৪টিই শূন্য। সহকারী পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তার ১৫টি পদের মধ্যে ১৩টিই শূন্য। এভাবে জেলার বিভিন্ন পর্যায়ে অনুমোদিত ২ হাজার ১৩০টি পদের মধ্যে ৭৭০টি পদই শূন্য রয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সুব্রত কুমার চৌধুরী বলেন, মামলার কারণে জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। এতে নিয়মিত সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

 

ইত্তেফাক/ ইআ