তরমুজ নিয়ে কৃষক যে কী পরিমাণ বিপাকে পড়েছে তা দেখার জন্য অনেক দূরে যেতে হয় না। পানিতে তরমুজ ভেসে যাচ্ছে অথচ শহরাঞ্চলে সেই তরমুজের দাম কত? গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তায় আজকে তরমুজ কত করে? ৩০০ টাকার নিচে কোনো তরমুজ পাওয়া যাবে? ঢাকার বাজারে কি পাওয়া যাবে? এর সঙ্গে কেজিতে এখনো বিক্রি হচ্ছে কোনো কোনো জায়গায় তরমুজ। শ্রীপুরের মাওনার মেডিক্যাল মোড়ে দুদিন আগে একটি তরমুজ দেড় কেজি ওজনের ৭০ টাকা দিয়ে কিনে খেয়েছি।
কৃষকের হাতে ১০ টাকার তরমুজ ৫০০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে! ব্যবসায়ী হয়ে ওঠার পর মানুষকে বিপদে ফেলে মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়া যে দুর্নীতি তা এই ব্যবসায়ীরা মানতে নারাজ। সয়াবিন তেল আটকে রেখে বলল দেশে তেলই নাই। পুরো দেশ চলবে এমন তেল যদি এখন গোডাউনে পাওয়া যায় তখন? ব্যবসায়ীরা একটুও লজ্জা পাবে না! এ কারণেই সরকারের নিজস্ব একটি ব্যবসায়িক পলিসি তৈরি করা প্রয়োজন।
এ পলিসি শুধু কাগজে নয় বিপণনেও ব্যবহার করতে হবে। কয়েকদিন পরই গরম পড়বে, তরমুজ লাগবে আর তখন ১০০ টাকার তরমুজ ৬০০ টাকায় বিক্রি কেউ কেউ লাখপতি বনে যাবেন অল্পদিনে। কৃষকদের ন্যাঘ্য মূল্য পাওয়ার জন্য সরকারের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সব ফসল ও জরুরি পণ্য বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি আইনানুগ ব্যবস্থা জোরেসোরে নেওয়া যায়, তবে হয়তো এ অব্যস্হাপনা থেকে আমরা মুক্তি পেতে পারি।
অব্যবস্থাপনার কারণে ভোক্তা শুধু বেশি দামে কিনে নিচ্ছেন তা কিন্তু নয়, এর সঙ্গে কৃষক তার পুঁজি হারাচ্ছে এবং সে তার সক্ষমতার জায়গাটিও ধেও রাখতে পারছে না। এর পর যখন কৃষককে আবার ঋণ দিয়ে সরকারের সহযোগিতা করতে হচ্ছে তখন কিন্তু পুরো চাপটা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ওপরই পড়ছে । সুতরাং ভাবনার জায়গা বাড়াতে হবে। সরকারি পদক্ষেপের ব্যাপারে যে আলোচনা করা হলো—এ বিষয়গুলো অসম্ভবও নয়। সরকারকে একটা লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে এই অনিয়মগুলো দূর করা প্রয়োজন। আমার কাছে কৃষকের এই জীবন সত্যিই নির্মমতার একটি স্ফুলিঙ্গ মনে হয়।
বিঘার পর বিঘা ফসল নষ্ট হলে কেমন লাগে তা কখনোই আমি আপনি বুঝব না। আমাদের পরিকল্পনা আরো সুদূর প্রসারী না হলে আমাদের পুঁজিবাদ তো ভাঙবেই না বরং আমরা আমাদের এই সভ্যতাকে নষ্ট করে নিজেদের নির্লজ্জ হিসেবে উপস্হাপন করেই যাব। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের জায়গা যেমন বাড়াতে হবে তেমনি তরমুজ বা যে কোনো পণ্যের দাম কখন কত হবে এবং বেশি হলে তাদের বিরুদ্ধে তাত্ক্ষণিক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সর্বদা ভ্রাম্যমাণ আদালত চালু রাখার আবেদন জানাচ্ছি ।