শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বিদ্যুতের সাব স্টেশনে পানি, অন্ধকারে সিলেট!

আপডেট : ১৮ মে ২০২২, ২৩:১৮

সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন জায়গা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে তলিয়ে গেছে। বন্যায় ডুবে গেছে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা সাব স্টেশনও। এর ফলে আলমপুর বিভাগীয় অফিস, বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস, ডিআইজি অফিস, বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সিলেটবাসী।

বুধবার (১৮ মে) সকালের ঝলমলে রোদে বন্যার্তদের মাঝে কিছুটা স্বস্তি এলেও দুপুর হতে না হতেই আবার বৃষ্টি। কৃষকেরা রোদের অভাবে কাটা ধান ও গরুর খাবার শুকানো নিয়ে রয়েছেন বিপাকে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ২৩ জুন পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। তবে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে।

পাহাড়ি ঢলে ভারতের বরাক নদীর ফুসে উঠে সিলেটের সুরমা, কুশিয়্রা সহ বিভিন্ন নদীর পানি বেড়েছে। বুধবার সকালে জকিগঞ্জে পানি উন্নয়ন বোর্ডের রহিমপুর পাম্প হাউজের কাছে কুশিয়ারা নদীর তীরে ‘ক্রস ড্যাম’ ভেঙে গেছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, ‘এই পানি পাম্পের সাহয্যে রহিমপুর খাল দিয়ে বের করে দেওয়া গেলে শুস্ক মৌসুমে ফসলে সেচ দেওয়া যাবে।’

সিলেট শহরের কাছে নদীর পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতিরও অবনতি ঘটেছে

পানি উন্নয়ন বোর্ড বুধবার বিকাল ৩টায় জানায়, কানাইঘাটে সুরমার পানি কিছুটা কমলেও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে ভারতের বরাক নদীর  পানি বৃদ্ধি পেয়ে জকিগঞ্জের অমলসিদ পয়েন্টে পানির চাপ খুব বেড়েছে। এতে সুরমা ও কুশিয়ারা পানি অনেক স্থানে বেড়েছে। অমলদি,সুরমা, শেওলায়  বিপৎসীমার ওপর দিয়ে  পানি প্রবাহিত হচ্ছিল।

সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক জানান, বুধবার পর্যন্ত সিলেটের ১৭ টি উপজেলায় ২ হাজর ৩৭৯ হেক্টর বোরো, ১ হাজার ৩৪২ হেক্টর আউষ বীজতলা, ১ হাজার ৫৪ হেক্টর সবজি ও ৭০ হেক্টর বাদাম ক্ষেত নিমজ্জিত হয়েছে। অন্যদিকে  সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ায় জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়েছে অনেক স্থানে। নিত্যপণ্য জিনিসের স্বল্পতা ও দাম বেড়েছে।  

বিদ্যুৎ নেই, সাব স্টেশনে পানি:
সিলেট দক্ষিণে বিদ্যুতের সুরমা সাব স্টেশনের যন্ত্রপাতি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফলে তিন দিন ধরে আলমপুর বিভাগীয় অফিস, বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস, ডিআইজি অফিস, বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ। বিদ্যুৎ না থাকায় পাসপোর্ট অফিস থেকে ৩ শতাধিক নাগরিক ফিরে গেছেন।  

সিলেট বিদ্যুৎ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির জানান, সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকা নিয়ে প্রায় ৫০ হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না।   

১৭ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত:
এদিকে সিলেটের ১৩ ও সুনামগঞ্জের ৪টি নিয়ে মোট ১৭ টি উপজেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত। সীমান্তবর্তী কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি সামান্য কমলেও সিলেট পয়েন্টে বেড়েছে। এতে সিলেট নগরীর বেশির ভাগ উপজেলার মানুষ এখনো পানিবন্দি। আকস্মিক এই বন্যায় মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সিলেট নগরবাসী উদ্বিগ্ন-ভবিষ্যৎ বসাবাসের জন্য।

সুরমা নদী উপচে মহানগরীর বিভিন্ন পাড়া মহল্লায়

পর্যটন নগরীর বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি:  
সিলেট শহরের কাছে নদীর পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতিরও অবনতি ঘটেছে। নগরীর অনেক বাসা-বাড়ি, রাস্তাঘাট তলিয়েছে কিংবা অফিস ও দোকানপাটে পানি। সুরমা নদী উপচে মহানগরীর বিভিন্ন পাড়া মহল্লায়। নগরীর মাছিমপুরের অনেক বাসার উঠানে হাঁটু পানি। শুটকি বাজারের রাস্তায় কোমর পানি। তালতলা এলাকায় বিরাজ করছে হাঁটু সমান পানি। উপশহর, সোবহানিঘট, কালিঘাট, ছড়ারপাড়, শেখঘাট, তালতলা নবাব রোড, তপোবনসহ পুরো এলাকায় বন্যার পানি। ঐসব এলাকায় আতংক বিরাজ করছে। শহরের কাছে সুরমা নদী পানিতে ভরাট থাকায় ড্রেনের পানি নামছে না। পাড়ায় পাড়ায় ড্রেনের বর্জ্য অলি-গজ বাসায় ঢুকে এক অস্বস্থিকর অবস্থা বিরাজ করছে।

এদিকে বুধবার দুপুরে সিলেট নগরীর কয়েকটি আশ্রায় শিবির পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবুল মোমেন ও ত্রাণ বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ড. এনামুল হক। এসময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সিলেটে বন্যাদুর্গত এলাকায় ২৫ লক্ষ টাকা ও ২০০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেওয়ার ঘোষণা দেন।  

 ড. মোমেন বলেন, সিলেটের প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারার তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। এই দুই নদী খনন করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকার ও প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক। আমরা নদী খননের পরিকল্পনা নিয়েছি। আগামী বর্ষার আগেই নদীগুলো খনন করতে হবে।

গোয়াইনঘাটে ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি   
সীমান্ত উপজেলা উপজেলা বন্যায়  মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষি পরিবার। জেলা সদররে রাস্থাসহ সবকটি রাস্তা বিচ্ছিন্ন। সর্বশেষ গোয়াইনঘাটের ১২ টি ইউনিয়নের প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি। উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী প্রধান সড়কগুলো বিছিন্ন।

সিলেটে ৫ লাখ পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট বিতরণ

সিলেট জন স্বাস্থ্য বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন রাতে জানান সিলেটে ৫ লাখ পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট সিলেটের বিভিন্ন  উপজেলায় বিতরণ করা হয় । আরোও ৫ লক্ষ ট্যাবলেটের চাহিদা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ১২০০ জেরিকন, ৯০০ ট্যাপসহ বালতি, ৫৫০ স্যানিটারি আরও, ৫০০ বসার টুল বিভিন্ন উপজেলায় দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক উপজেলায় ১৫সেট  নলকূপ করার জন্য মেটেরিয়ালস উপজেলা ভাণ্ডারে মজুদ রয়েছে।

প্রতি ঘণ্টায় ৬০০লিটার পানি পরিশোধন ক্ষমতা সম্পন্ন ০২টি মোবাইল  ট্রিটমেন্ট প্লান্ট জেলা অফিসে রয়েছে, যেখানে  প্রয়োজন হবে সেখানে তা নেয়া হবে।  বন্যা মোকাবিলা করার জন্য আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। সার্বক্ষণিক উপজেলা প্রশাসন ও জন প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

ইত্তেফাক/এআই