শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

চাকরির আবেদন ‘ফি’ বাবদ বেকারদের ‘পকেট কাটা’ কেন?

আপডেট : ২১ মে ২০২২, ০৪:৪২

যে কোনো চাকরির পরীক্ষায় আবেদন প্রক্রিয়ার শুরুতেই আসে আবেদন ‘ফি’র কথা। বাংলাদেশের সমাজ বাস্তবতায় সব ধরনের চাকরি বিশেষ করে সরকারি চাকরি হলো সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও লোভনীয়। এ কথা সত্যি যে, ছাত্রজীবনে প্রায় সব শিক্ষার্থীকে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে অনেক কষ্ট সহ্য করে পড়ালেখা শেষ করতে হয়। তারপর বেকারত্বের তকমা মাথায় নিয়ে হন্যে হয়ে চাকরির খোঁজে ঘুরতে হয়। কিন্তু বিভিন্ন চাকরির ‘ফি’ মানেই বেকার চাকরিপ্রাথী‌র্র জন্য ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’। দু’একটি ব্যতিক্রম বাদে প্রথম শ্রেণি থেকে শুরু করে চতুর্থ শ্রেণির সরকারি চাকরিতে আবেদন করতে বেকার চাকরিপ্রাথী‌র্কে মোটা অঙ্কের ‘ফি’ দিতে হয়। 

চাকরিপ্রাথী‌র্দের কাছ থেকে বিভিন্ন চাকরির ধরন অনুযায়ী ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০০ টাকা পর্যন্ত ফি ধার্য করা হয়। এই মোটা অঙ্কের ‘ফি’ বেকার চাকরিপ্রাথী‌র্র কাছ থেকে নেওয়া কতটা যুক্তিসঙ্গত? তবে এক্ষেত্রে বেকার চাকরিপ্রাথী‌র্দের আশার আলো দেখিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের আবেদনে কোনো রকম ‘ফি’ নেয় না। সম্প্রতি সহকারী পরিচালক (জেনারেল) নিয়োগে বাংলাদেশ ব্যাংক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এতে আবেদন ফি লাগবে না। এটি অবশ্যই প্রশংসনীয় ও বাস্তবসম্মত উদ্যোগ। 

প্রশ্ন হলো, আবেদন ফি ছাড়া চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় বাংলাদেশ ব্যাংক সুযোগ দিতে পারলে অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠান পারবে না কেন? এক্ষেত্রে যদি বিনা আবেদন ফিতে চাকরিপ্রাথী‌র্দের সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে কোনো মানদণ্ড ঠিক করে দেওয়া যেতে পারে। কোনো প্রতিষ্ঠানে যদি কর্মীর লাগে সে খরচ তো প্রতিষ্ঠানেরই বহন করা উচিত। আর এখন বেশির ভাগ চাকরির আবেদন অনলাইনে গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশে এমনিতেই বেকারের সংখ্যা বেশি। কিন্তু শূন্য পদের সংখ্যা তুলনামূলক কম। বিভিন্ন পদে লাখ লাখ প্রাথী‌র্ আবেদন করলেও শেষমেষ চাকরি হয় খুব অল্পসংখ্যক চাকরিপ্রাথী‌র্র। 

কিন্তু আবেদনের শুরুতে সব চাকরিপ্রাথী‌র্কে মোটা অঙ্কের ‘ফি’ পরিশোধ করতে হয়। চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে নিয়োগ পরীক্ষার ব্যয় বাবদ টাকা নেওয়া কতটা যৌক্তিক? নিয়োগ পরীক্ষার খরচ কেন বেকার চাকরিপ্রার্থীদের বহন করতে হবে? সম্প্রতি ‘এনটিআরসিএ’র (বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ) তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগে নিয়োগপ্রত্যাশী শিক্ষকদের চূড়ান্ত নিয়োগের আগে শুধু আবেদন ফি বাবদ প্রায় ৫০ কোটি টাকা উঠেছিল। আবেদন ফির নামে বেকারদের ‘পকেট কাটা’ যেন অতি সহজ প্রক্রিয়া! অ্যাকাডেমিক পড়ালেখা শেষে এমনিতেই সামাজিক, অর্থনৈতিক ও মানসিক চাপে বেকার চাকরিপ্রার্থীরা অত্যন্ত কষ্টকরভাবে দিন পার করে থাকে। শিক্ষিত বেকারেরা যখন চাকরির মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করার চেষ্টা করেন তখন রাষ্ট্রের উচিত তাদের জন্য এগিয়ে আসা। চাকরির জন্য একটার পর একটা আবেদনের টাকা জোগাড় যেন ‘বোঝার ওপর শাকের আঁটি’। 

আবার অনেক সময় চাকরির আবেদন ‘ফি’ দিয়েও পাওয়া যায় না পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ! কেননা একই দিনে একাধিক চাকরির পরীক্ষা থাকে! উন্নত দেশে বেকারদের কর্মসংস্থান হওয়ার আগ পর্যন্ত সরকার বেকারভাতা দিয়ে থাকে। আমাদের দেশে বেকারভাতা না হোক, বেকার চাকরিপ্রাথী‌র্রা যাতে অন্তত বিনা ‘ফি’-তে পরীক্ষা দিতে পারে এ ব্যবস্থা করা উচিত। অবিলম্বে চাকরির ‘ফি’র নামে বেকারদের ওপর শোষণ বন্ধ হোক। সরকারি প্রায় সব প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন কারণে প্রতিবছর অর্থ উদ্বৃত্ত থাকে। তাই সামান্য নিয়োগ পরীক্ষার ব্যয় বহন করা নিয়োগ প্রতিষ্ঠানের জন্য কোনো ব্যাপারই না। সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির আবেদন ফি উঠিয়ে দিলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও এই নিয়ম অনুসরণ করবে। এ ব্যাপারে দেশের নীতিনির্ধারকসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ ও প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

ইত্তেফাক/এএইচপি

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন