পিক কিংবা অফপিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ থাকলেও গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎসেবা মিলছে না। পুরনো ট্রান্সফরমার অহরহ বিকল, এইচপি ও এলটি বৈদ্যুতিক ক্যাবল, পুরনো সরঞ্জামের কারণে যখন-তখন বিদ্যুত্বিভ্রাট দেখা দিচ্ছে। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ প্রবাহিত হওয়ায় বৈদ্যুতিক ক্যাবলসহ সরঞ্জাম বিকল হচ্ছে। ফলে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এখানকার ৫ লক্ষাধিক বিদ্যুৎ গ্রাহক।
জোড়াতালি দিয়ে চালানো দীর্ঘ দিনের পুরনো ট্রান্সফরমারসহ যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এখানে বিদ্যুত্বিভ্রাট লেগেই আছে। সরবারহ থাকলেও এই গরমে অন্ধকারে থাকতে হয় নগরবাসীকে। সামান্য ঝড়-বৃষ্টি হলেই ভেঙে পড়ে বিদ্যুত্ব্যবস্থা। এসব ভোগান্তি থেকে উত্তরণের জন্য তিন/চার বছর যাবত মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুতের লাইন স্থাপনের নতুন প্রকল্পের কথা জানানো হলেও বাস্তবে তার কোনো অগ্রগতি নেই।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুতের লাইন স্থাপনের জন্য মাঠপর্যায়ে সার্ভেও করা হয়েছিল। প্রকল্পটি দীর্ঘস্থায়ী হবে কি না, মাটির কন্ডিশন, প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণসহ নানা বিষয় নিয়ে ইতিমধ্যে আলোচনাও হয়েছে। একাধিক কর্মকর্তা জানান, সার্ভে কমিটি পরবর্তী সময়ে এ প্রকল্প বাতিল করে দিয়েছে। ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) এখানকার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ টি এম তারিকুল ইসলাম ইত্তেফাককে জানান, মাটির নিচ থেকে বিদ্যুতের লাইন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সময় লাগবে।
তিনি জানান, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে বিভিন্ন সময় সংস্কার কাজ করতে সংযোগ বন্ধ রাখা হয়। বিশেষ করে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পে বিদ্যুৎ বিভাগের অনেক কাজ করার জন্য বিদ্যুৎ ব্যবস্থা শনিবার বন্ধ রেখে কাজ করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বরিশাল বিদ্যুতের একাধিক ফিডারের দায়িত্বরতরা জানান, দীর্ঘদিনেও বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য নতুন ট্রান্সফরমার, ক্যাবল কিংবা সরঞ্জাম যুক্ত না হওয়ায় পুরনো মালামাল দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে।
সরেজমিন নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ট্রান্সফরমারই জোড়াতালি দেওয়া। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা ট্রান্সফরমারের ওপরই দেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত সংযোগের বাড়তি লোড। সামান্য ঝড় কিংবা হালকা বাতাস এলেই ট্রান্সফরমারগুলো অচল হয়ে পড়ে। এছাড়া বজ্রপাতে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি বিকল হওয়াসহ নানা ক্ষতি হচ্ছে।
মহানগরীর গ্রাহকদের যখন এমন বেহালদশা তখন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহকদের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। সামান্য বাতাস শুরু হলেই পুরো পল্লী বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়। একবার সরবারহ বন্ধ হলে পুনরায় বিদ্যুৎ পেতে এক দিন পার হয়ে যায়।
সাবোটাইজের সন্দেহ সিটি মেয়রের : অফিস সময়ে কর্মঘণ্টা নষ্ট করে শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সংস্কার কাজ করায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে চিঠি দিয়ে অবহিত করেছেন বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। মেয়র জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের অবহেলার কারণে সম্প্রতি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অনুষ্ঠান ব্যাহত হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের খামখেয়ালিপনায় নগরীর লাখ লাখ বাসিন্দা ভোগান্তিতে পড়ছে। এটা সাবোটাইজও হতে পারে।