দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী লঞ্চগুলো ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি যাত্রী পরিবহন করলেও যাত্রীদের সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। ফলে বর্ষা মৌসুমে বৈরী আবহাওয়ায় মাঝ নদীতে ঝড়ের কবলে পড়লে যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। প্রায়ই মাঝ নদীতে লঞ্চগুলো দুর্ঘটনায় পতিত হলে যাত্রীরা জীবন সুরক্ষাসামগ্রী না পেয়ে দিকবিদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। পাশাপাশি অধিকাংশ লঞ্চে নেই দক্ষ মাস্টার, সুকানি ও ড্রাইভার। এই পরিস্থিতিতে বর্ষা এলেই বাড়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। তবুও দক্ষিণাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাধ্য হয়ে নৌযানে যাতায়াত করতে হয়।
বিআইডব্লিউটিএর হিসাব মতে, দক্ষিণাঞ্চলে নৌ-রুট রয়েছে ৮৮টি। এর মধ্যে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি নৌযান চলাচল করে ৪৩টি রুটে। সরকারি হিসাব মতে, প্রতিদিন নৌ-পথে এ অঞ্চল থেকে যাতায়াত করে দেড় লক্ষাধিক যাত্রী। লঞ্চ মালিকরা ট্যাক্স ফাঁকির জন্য যাত্রী পরিবহন কম দেখায় বলে অভিযোগ রয়েছে।
ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী বিলাসবহুল আওলাদ লঞ্চে বয়া আছে মাত্র ১৫৭টি। যাত্রী ধারণক্ষমতা সরকারি হিসাবে ১ হাজার ১৯ জন। কিন্তু অভিযোগ আছে, ধারণক্ষমতার তিন-চার গুণ যাত্রী নিয়েই লঞ্চগুলো গন্তব্যে রওয়ানা হয়। পাবারত-১০ লঞ্চে যাত্রী সংখ্যা উল্লেখ না থাকলেও লাইভ বয়ার সংখ্যা কাগজে-কলমে ২৫০টি, সুরভী-৮ লঞ্চে বয়া আছে ১৫০টি। যাত্রী ধারণক্ষমতা ৮৯০ জন। নিয়ম অনুযায়ী চার জন যাত্রীর জন্য একটি করে বয়া থাকার কথা। কাগজে কলমের হিসাব ঠিকঠাক থাকলেও বাস্তবের সঙ্গে মিল নেই অনেক লঞ্চের। বিলাসবহুল লঞ্চগুলোর যখন এ অবস্থা তখন অন্য লঞ্চে যাত্রীদের যে প্রাণ হাতে নিয়ে উঠতে হয় তা বলাই বাহুল্য। বড় লঞ্চগুলোর মতো এম এল টাইপের একতলা লঞ্চগুলো নিয়ম ভেঙে চলাচল করছে বড় বড় নদীতে। যাত্রী পরিবহনকারী ছোট্ট লঞ্চের মধ্যে অর্ধেক লঞ্চেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মাস্টার, ড্রাইভার নেই। লঞ্চগুলো চালায় খালাসি ও হেলপাররা। ফিটনেস সনদ গ্রহণের সময় অভিজ্ঞ চালক ও মাস্টারদের সনদ দেখিয়ে রুট পারমিট নেওয়া হয়। অদক্ষ মাস্টার-ড্রাইভার দিয়ে লঞ্চ চালানোর কারণে মাঝে মধ্যেই ঘটে দুর্ঘটনা। তারপরও কতৃর্পক্ষ নির্বিকার। নৌ-পথ সুরক্ষায় নেই কোনো বাস্তব উদ্যোগ।
বরিশাল-ঢাকা নৌ-রুটের সুরভী-৮ লঞ্চের সুকানি মো. রিয়াজ বলেন, বর্ষা মৌসুমে ঝড়ের মধ্যে কীভাবে জাহাজ চালাতে হয় তার জন্য আগে কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো না। কিন্তু বর্তমানে লঞ্চের মাস্টার প্রতি সপ্তাহে এক দিন করে কীভাবে জাহাজ চালাতে হয় তার ওপর প্রশিক্ষণ দেন। এছাড়া এখন ডিবিটিসি থেকে সুকানিদের এক মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তারপর তাদের তৃতীয় শ্রেণির মাস্টারের সনদ প্রদান করা হয়। সেখানে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে কীভাবে জাহাজ চালাতে হয় তার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে।
বরিশাল নদীবন্দর কর্মকর্তা বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বৈরী আবহাওয়ায় লঞ্চ চলাচলে মাস্টারদের বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়ে থাকে। ঝড়ের কবলে পড়লে জাহাজকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে নোঙর করে ঝড়ের দিকে মুখ করে জাহাজ চালিয়ে রাখতে হবে। এছাড়া প্রতিটি জাহাজে নির্ধারিত লাইফ বয়া রাখা হয়েছে কি না, তা নিয়মিত পরিদর্শন করা হয়।