শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সিলেটে ডায়রিয়া, চর্ম রোগের প্রাদুর্ভাব

সুরমায় কমলেও কুশিয়ারার পানি এখনো বিপত্সীমার ওপরে

আপডেট : ২৪ মে ২০২২, ০৩:৫২

সুরমা নদীর পানি হ্রাস পেয়ে বিপত্সীমার নিচে আসলেও কুশিয়ারা নদীর পানি কয়েকটি পয়েন্টে বিপত্সীমার ওপরে। তাছাড়া বৃষ্টি ও ঢল কমে যাওয়ায় এখন উজানের পানি নেমে গিয়ে সিলেটের ভাটিতে চাপ সৃষ্টি করছে। সিলেটের বিভিন্ন এলাকা থেকে বন্যার পানি ক্রমশ নামতে শুরু করেছে। তবে বহু রাস্তাঘাট এখনো পানির নিচে। যেসব বাড়ি থেকে পানি নেমেছে সেগুলো প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। অনেকের বাড়ির চালটুকু শুধু রয়েছে। এবারের বন্যায় সিলেট জেলার ১৩টি ও সুনামগঞ্জের ছয়টি উপজেলা তছনছ হয়েছে। বন্যাকবলিত হয় প্রায় ১৫ লাখ লোক।

প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী সিলেট-সুনামগঞ্জের ৫৩৬ কিলোমিটার সড়ক এখনো পানির নিচে রয়েছে। বন্যার পানি নামলেও এসব সড়ক সংস্কারে লাগবে প্রচুর সময়। সংশ্লিষ্টরা জানান, ডুবে যাওয়া সড়কের মধ্যে সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় ২৫০ কিলোমিটার, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ২৩০ কিলোমিটার এবং সড়ক ও জনপথের (সওজ) আওতাধীন আটটি সড়কের ৫৫ কিলোমিটার বন্যাপ্লাবিত। এর মধ্যে অনেক সড়কে যানবাহন চলাচল সাময়িক বন্ধ রয়েছে।

বন্যার পানি নামতে না নামতেই সিলেটে ডায়রিয়া ও চর্মরোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। সিলেটে ডায়রিয়ায় ১১৪ জন ও চর্মরোগে ছয় জন আক্রান্ত হয়েছে। সিভিল সার্জন ডা. এস এম শাহরিয়ার জানান, ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি বিশুদ্ধ খাবার পানি খেতে বলা হচ্ছে। চর্মরোগে আক্রান্তদেরও চিকিৎসা চলছে। নগরী ও বিভিন্ন উপজেলায় ১৪০টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। মেডিক্যাল টিমগুলো বন্যা উপদ্রুত এলাকায় গিয়ে মানুষজনকে সচেতন করছেন, খাবার স্যালাইন ও ওষুধপত্র প্রদান করছেন। ডাক্তার শাহরিয়ার জানান, বন্যা-পরবর্তী ডায়রিয়াসহ অন্যান্য রোগের প্রকোপ থেকে বাঁচতে বন্যার্তদের সাবান দিয়ে হাত ধুতে এবং বিশুদ্ধ পানি পান করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

নগরীর ছড়ারপারের এক জন বাসিন্দা জানালেন, তার বাসা থেকে পানি নামার পর থেকে পরিবারের সদস্যদের অনেকের শরীরে চর্মরোগ দেখা দিয়েছে। এলাকার আরো অনেকেই চর্মরোগে আক্রান্ত।

উচ্চতর সমন্বয় কমিটি গঠন; সুরমা নদী খনন, পুকুর-দীঘি উদ্ধারের নির্দেশনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

প্লাবিত এলাকার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত, পুনর্নির্মাণ, ক্ষতিগ্রস্ত বাসা-বাড়ির তালিকা প্রণয়ন এবং সিলেট নগরীকে বন্যামুক্ত রাখতে করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে একটি উচ্চতর সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশন, সওজ এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়। গত রবিবার সিলেট সিটি করপোরেশনের আয়োজনে নগর ভবনের সম্মেলন কক্ষে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই কমিটি গঠন করা হয়। সভায় জুম-এর মাধ্যমে যোগ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি।

২২ কোটি টাকা মত্স্যের ক্ষতি

এবারের ভয়াবহ বন্যায় মৎস্য খামারিদের প্রায় ২২ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে খামারের মাছ ভেসে যাওয়ার ক্ষতি যেমন আছে, তেমনি আছে অবকাঠামোগত ক্ষতিও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খামারিদের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি ওপর মহলে অভিহিত করা হয়েছে। সিলেট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ সোমবার জানান, বন্যায় ১৫ হাজার ১৬৩ জন মাছচাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ২১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। মত্স্য অফিসের তথ্যানুসারে, এবার বন্যায় মৎস্য খাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, বিশ্বনাথ, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট উপজেলায়। ক্ষতিগ্রস্ত মাছচাষিরা বলছেন, এতবড় ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে তাদের সরকারি প্রণোদনা প্রয়োজন।

কুশিয়ারায় পানি বাড়ায় নতুন করে বন্যা

কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ভেলকুনা, গয়াসী, বাঘমারা ও ফেঞ্চুগঞ্জ পূর্ববাজার, উত্তর কুশিয়ারা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে পানি উঠেছে। যাতায়াতে বিড়ম্বনায় পড়ছেন সেসব এলাকার মানুষজন। কুশিয়ারায় পানি বাড়ার কারণে গোলাপগঞ্জ উপজেলার তীরবর্তী বাদেপাশা, রুস্তুমপুর, রাখালগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায়ও পানি উঠেছে। সিলেট-গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার সড়কে এখনো পানি। সোমবার দুপুরে ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপত্সীমার দুই মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

ইত্তেফাক/এমআর