দীর্ঘ একটা জীবন নিরন্তর, নিরলসভাবে নজরুলগীতি চর্চায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন শিল্পী ইয়াকুব আলী খান। শুদ্ধ গানের চর্চায় এই সংগীতজ্ঞকে এবারে সম্মান জানানো হচ্ছে নজরুল পদক দিয়ে। তার শিল্পভাবনা, নজরুল চর্চায় এ প্রজন্ম মিলিয়ে বিভিন্ন অনুসঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
নজরুল পদক পাওয়ায় আপনাকে অভিনন্দন। পুরস্কারটি পাওয়ার অনুভূতি কীভাবে ব্যক্ত করবেন?
প্রতিবছরই আমাদের দেশে যারা নজরুলসংগীত গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও গাওয়ায় বিশেষ অবদান রাখেন তাদের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এই পুরস্কারটি দেওয়া হয়। আমি এ বছর এই সম্মানটি পাচ্ছি এটা আমার জন্য অনেক গর্বের।
এর বাইরে নজরুল জন্মজয়ন্তী ঘিরে আপনার ব্যস্ততা নিয়ে জানতে চাই—
বরাবরের মতো এবার রাষ্ট্রীয়ভাবে নজরুল জন্মজয়ন্তী পালিত হচ্ছে না। তাই অন্য বছরের ন্যায় ব্যস্ততা নেই। তবে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে অংশ নেবো।
বিশেষ দিবস ছাড়া নজরুলসংগীতের অনুষ্ঠান কম হওয়া প্রসঙ্গে কী মন্তব্য করবেন?
এটা সত্যি দুঃখজনজক একটি বিষয়। নজরুলের গান আমাদের চিরকালের সম্পদ, বাংলা গানের দিকনির্দেশনা। অথচ সেই নজরুলকে বিশেষ একদিনে স্মরণ করলাম, বাকি দিনগুলোতে অবহেলিত থাকলো এটা মেনে নেওয়া কষ্টকর। একদল মানুষ আছেন যারা শুধু মুখে নজরুল-রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে কথা বলেন, অথচ কাজের বেলায় তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই আমার মনে হয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি টিভি চ্যানেলগুলোকে আরও সচেতন হতে হবে। নিয়মিত যেন নজরুল এবং রবীন্দ্রসংগীতের অনুষ্ঠান প্রচার হয় সেদিকে নজর দিতে হবে।
নজরুল সংগীতের তাত্ত্বিক বিষয়টি চর্চায় বরাবরই অনিহা দেখা যায়। এ নিয়ে একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পী ও শিক্ষক হিসেবে কী মন্তব্য করবেন?
নজরুলের গান চর্চা করে যত তাড়াতাড়ি শিল্পী বনে যাওয়া যায় তাত্ত্বিক বিষয় চর্চা করে কিন্তু সেটা সম্ভব না। আমি মনে করি শুধু নজরুল সংগীত চর্চা করলে হবে না, সঠিকভাবে পরিবেশনার দক্ষতাও অর্জন করতে হবে। কারণ দেশের দু-চারজন শিল্পী ছাড়া বাকিরা এমন করে গাইছে, যা শ্রবণযোগ্য হচ্ছে না।
বিভিন্ন প্লাটফর্মে নজরুলের গান ফিউশন করে গাওয়া হচ্ছে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
এটাকে আমি ভালোভাবে দেখছি না। কারণ তারা নজরুল সংগীতকে আধুনিক করতে গিয়ে এমনভাবে গাইছে যে, সেখানে নজরুল সংগীতের মূলভাব ঠিক থাকছে না, বিকৃত হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া নজরুলের দু-চারটা গান ফিউশন করে গাওয়া সম্ভব হলেও অসংখ্য গানে কঠিন তাল বা রাগ-রাগিনী রয়েছে। সেগুলো ফিউশন করার মতো যোগ্যতা আগে অর্জন করতে হবে।
আপনাদের মতো গুণী শিল্পীরা এই প্লাটফর্মগুলোতে গাইলে নজরুল সংগীতের মান ধরে রাখা সম্ভব হতো কি-না?
হ্যাঁ, নজরুল বা রবীন্দ্রসংগীতের যারা প্রবীণ শিল্পী বা এই সংগীতে যাদের বিশেষ দখল রয়েছে তাদের দিয়ে গাওয়ালে অনেক বিষয়ই রক্ষা পেতো। কারণ যারা ফিউশন করছেন তাদের ভেতর নজরুলসংগীতের প্রতি মমত্ববোধ নেই।
অনেকেই বলেন রবীন্দ্র ও নজরুল সংগীতে রক্ষণশীলতা একটু কমানো উচিত। আপনি কী মনে করেন?
হ্যাঁ, এটা খুবই ভালো একটি কথা বলেছেন। নজরুল সংগীতের রক্ষণশীলতা একটু কমানো দরকার। তবে মূল জিনিসটা ঠিক রেখে গানগুলোর আধুনিকায়ন করতে হবে।
নতুনদের মাঝে নজরুলসংগীত নিয়ে আগ্রহ কেমন দেখতে পাচ্ছেন?
আমি তো নতুনদের মাঝে নজরুল সংগীতের প্রতি আগ্রহ বেশ ভালোই দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু জীবন জটিল হওয়ায় খুব অল্প সময়ে স্টার হতে চায় সবাই। ফলে ধৈর্য্য ধরে শিখে নজরুল সংগীত গাওয়ার প্রবণতা কমছে। এটা দুঃখজনক।
নজরুল সংগীত নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
যেহেতু আমি উচ্চাঙ্গ ও নজরুলসংগীতের একজন শিল্পী ও শিক্ষক সেহেতু চেষ্টা করছি ভালো কিছু শিল্পী তৈরি করার। এই চেষ্টা অব্যাহত রাখতে চাই।