চতুর্থ দিনের চা-বিরতি পর্যন্ত শেরেবাংলার ২২ গজে বোলারদের খাটুনি, ব্যাটসম্যানদের দাপট দেখে অনেকেই তিতিবিরক্ত হয়ে গিয়েছিলেন। নিষ্প্রাণ ড্রয়ের ছবিও অনেকে মনে এঁকেছিলেন হয়তো। কিন্তু চা-বিরতির পর ভোজবাজির মতো বদলে গেল ম্যাচের দৃশ্যপট। ৬৪ রানে দুই দলের ৯ ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফিরলেন।
গতকাল ৪১ রানে প্রথম ইনিংসের শেষ ৫ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। পরিস্হিতিকে ভয়াবহ করে তুলতে জুড়ি নেই বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে আসা-যাওয়ার মিছিল শুরু তামিম-মুমিনুলদের। বিনা মেঘের বজ পাতে কেঁপে ওঠা বাংলাদেশ ২৩ রানে হারিয়ে বসল ৪ উইকেট।
প্রথম ইনিংসে ২৪ রানে পড়েছিল ৫ উইকেট। গতকাল দ্বিতীয় ইনিংসেও টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা ডোবাল বাংলাদেশকে। তাই দিন শেষে হারের চোখরাঙানিতে টাইগাররা। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেটে ৩৪ রান নিয়ে চতুর্থ দিনের খেলা শেষ করেছে স্বাগতিকেরা। মুশফিকুর রহিম ১৪, লিটন দাস ১ রানে অপরাজিত আছেন।
এখনো ১০৭ রানে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। আজ ম্যাচের পঞ্চম ও শেষ দিনে হার এড়ানোই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ম্যাচ বাঁচাতে হলে আজ অন্তত দুই বা আড়াই সেশন ব্যাটিং করতে হবে। হাতে আছে মাত্র ৬ উইকেট।
উইকেটে থাকা মুশফিক-লিটনই সবচেয়ে বড় ভরসা। সাকিব আল হাসান গতকাল দিন শেষে বলেছেন, ম্যাচ বাঁচানো সম্ভব যদি প্রথম সেশনে একটির বেশি উইকেট না পড়ে এবং তিনি নিজে তিন ঘণ্টা ব্যাটিং করতে পারেন। এত যদি-কিন্তুর ভিড়ে বাংলাদেশের হারের শঙ্কা ক্রমেই জোরালো হচ্ছে।
গতকাল বিকেলে শ্রীলঙ্কার পেসাররা ত্রাস ছড়ালেন বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনে। টিকে থাকার চেষ্টা দেখা গেল না কারো মধ্যেই। তামিম-মুমিনুল কেউই উইকেটে থিতু হতে পারলেন না। ষষ্ঠ ওভারে তামিমকে আউট করেন আসিথা ফার্নান্দো। টানা দুই ইনিংসেই শূন্য রানে ফিরে টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথম বার ‘পেয়ার’ পেলেন তামিম। অমার্জনীয় অপরাধ হয়েছে শান্তর (২) রানআউট। মুমিনুলের ‘শনির দশা’ যেন কাটছেই না। রাজিথার শিকার হয়েছেন রানের খাতা খোলার আগেই। টানা ৮ ইনিংসে ব্যর্থ টেস্ট অধিনায়ক। পরে দশম ওভারে আসিথার শর্ট বলে স্লিপে ক্যাচ দেন জয় (১৫)। মুশফিক-লিটন বিপর্যয় ঠেকানোর চেষ্টা করেছেন। ১১ রানের জুটি গড়ে অবিচ্ছিন্ন রয়েছেন তারা।
এর আগে চা-বিরতির পর শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংস শেষ হয়েছে ৫০৬ রানে। ১৪১ রানের লিড পায় লঙ্কানরা। গতকাল প্রায় আড়াই সেশন ব্যাটিং করে ৫ উইকেটে ২২৩ রান যোগ করে দলটি। এক প্রান্ত আগলে থাকা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকে আউট করতে পারেনি বাংলাদেশ। ১৪৫ রানে (১২ চার, ২ ছয়) অপরাজিত ছিলেন তিনি।
সকাল সাড়ে ৯টায় নেমে লাঞ্চের আগেই লিড নিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। লাঞ্চের পর ফিরে ম্যাথুস ১৩তম ও চান্দিমাল ১২তম টেস্ট সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। অনেক চেষ্টা, অপেক্ষার পর তাদের ১৯৯ রানের জুটি ভাঙেন এবাদত। তামিমের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে চান্দিমাল ১২৪ রান (১১ চার, ১ ছয়) করেন। ডিকওয়েলা, জয়াবিক্রমাকে আউট করে ৫ উইকেট পূর্ণ করেন সাকিব। চার বছর পর টেস্টে ৫ উইকেট পেলেন তিনি। এর মাঝে রমেশ মেন্ডিসকে চতুর্থ শিকার বানান এবাদত। আসিথা রানআউট হলে শেষ হয় লঙ্কানদের প্রথম ইনিংস। সাকিব ৯৬ রানে ৫টি, এবাদত ১৪৮ রানে ৪টি উইকেট নেন।