আশফাক নিপুণ। যার নির্মাণে দর্শকরা বরাবরই ভিন্নতা খুঁজে পান। নাটকের পর এবার ওয়েব সিরিজেও প্রশংসিত হচ্ছেন। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্প্রতি একাধিক পুরস্কার ঘরে তুললেন তিনি। এই নির্মাতা নিজের নির্মাণ পরিকল্পনাসহ নাটক-ওয়েব সিরিজের নানা দিক নিয়ে কথা বললেন ইত্তেফাকের সঙ্গে।
সম্প্রতি দেশ ও দেশের বাইরে থেকে একাধিক পুরস্কার অর্জন করলেন। এমন সম্মান পাওয়ার অনুভূতি কীভাবে ব্যক্ত করবেন?
পুরস্কার পাওয়ার অনুভূতি সব সময়ের আনন্দের, অনুপ্রেরণার। সেটা যদি জুরি বোর্ডের হয় তাহলে তো সেটা বিশেষ হয়ে যায়। কারণ তারা একটি কাজকে নিখুঁতভাবে বিশ্লেষণ করে পুরস্কৃত করে। এমন স্বীকৃতি পেলে মনে হয় ঠিক পথে আছি। আরও ভালো এবং সাহসী কাজ করার সাহসটা বাড়িয়ে দেয়।
এর বাইরে ওটিটি ও ঈদ উপলক্ষে কোন কাজগুলো নিয়ে ব্যস্ত আছেন?
এখন আমি ওটিটির কাজগুলো নিয়েই বেশি ব্যস্ত আছি। বেশ কিছু কাজের প্রপোজল রেডি করা ও স্ক্রিপ্টিংয়ে সময় দিচ্ছি। আর টিভির কাজ থেকে তো দীর্ঘদিন দূরে আছি। সেই জায়গায় আসছে ঈদে কোনো কাজ করব কি-না সেটা এখনই বলতে পারছি না। তবে আমি যেহেতু টিভি থেকেই আমার জন্ম এবং সেখানের দর্শক বেশি সেহেতু অবশ্যই টিভির কাজ করার ইচ্ছে আছে।
আশফাক নিপুণ অন্যদের মতো একসঙ্গে একাধিক নির্মাণে যুক্ত থাকেন না। এর কারণ কী?
সত্যি কথা বলতে গেলে আমি খুব অলস (হাহাহা)। একটি কাজ করার আগে হয়তো অনেকেই মনে করেন আমি অলস সময় পার করছি। বিষয়টি আসলে তা না। সেই সময়েও আমি আসলে ভাবি আমাকে কী করতে হবে, কীভাবে করতে হবে।
ওটিটির কাজগুলো বেশ প্রশংসিত হচ্ছে। এতে টিভি নাটকের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি-না?
দেখুন, টিভি নাটকের বাজেট কমছে, চ্যানেল কতৃর্পক্ষের অনুষ্ঠান-নাটক নিয়ে তেমন কোনো পরিকল্পনাও নেই। তারা কখনও দর্শক জরিপ করে না। দর্শকরা কেন বাইরের কাজ বেশি দেখছে, দর্শকরা কোন ধরনের কাজগুলো দেখতে চায়—এ বিষয়গুলো নিয়ে রিসার্স নেই। এর মাঝে ভালো নাটক নির্মিত হচ্ছে না, তা কিন্তু না। আসলে নাটক বেশি হওয়ায় ভালো কাজগুলো খুঁজে পাওয়া কঠিন হচ্ছে। আমার মনে হয় চ্যানেল কতৃর্পক্ষের এই দিকগুলোতে এখনই নজর দিতে হবে। না হলে এখন প্রভাব না পড়লেও অদূর ভবিষ্যতে ওটিটির কাজগুলো টিভি নাটকের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কী মনে করেন?
দেখুন, এখন দর্শকদের চোখ খুলে গেছে। তারা ভালো গল্প, ভালো নির্মাণ দেখতে চায়। এখন যেনতেনভাবে চালিয়ে দিলে হবে না। টিভির দর্শক অনেক বেশি, তাদের ধরে রাখতে হবে। তাই সময় থাকতেই টিভি চ্যানেলগুলোর গল্প, বাজেট, নির্মাণের দিকে মনোযোগী হতে হবে।
ওটিটি আসায় গল্পই হিরো রূপে পর্দায় আসছে। এই চর্চাকে নির্মাণের ধারাবদল বদল বলা যায় কি-না?
দেখুন, আমি কিন্তু শুরু থেকেই গল্পকে প্রধান্য দিয়ে নির্মাণ করছি। তবে হ্যাঁ, ওটিটি আসার এই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে যে, আপনাকে গল্পে ফিরতেই হবে। মানুষ এখন রিয়েলিস্টিক গল্প দেখতে চাচ্ছে। তারা এখন শুধু দু’জনের গল্প না, দর্শকরা সাপোর্টিং চরিত্রগুলো নিয়েও চিন্তা করছেন। এখন কোনো দেশেই স্টার সিস্টেম কাজ করছে না। স্টার হলেই যে দর্শক সিরিজটি দেখবে, বিষয়টি তেমন না।
ওটিটিতে কাজের স্বাধীনতা থাকলেও নীতিমালা প্রণয়নের কথা চলছে। এটা স্বাধীনভাবে নির্মাণের ক্ষেত্রে শঙ্কা বা ভীতি তৈরি করবে কি-না?
বাংলাদেশে নির্মাতারা থাকবেন আর ভয় পাবেন না, এটা কী করে হয়? পৃথিবীর প্রতিটি দেশে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয় জনগণের স্বার্থে, কিন্তু আমাদের দেশে প্রয়োগ করা হয় জনগণের বিরুদ্ধে। নির্মাদের স্বার্থে নীতিমালা হওয়ার কথা থাকলেও সেটা নির্মাতাদের বিপক্ষে যায়। আমি বরাবরই নীতিমালার বিরুদ্ধে। তাছাড়া পৃথিবীর কোনো দেশেই ওটিটির জন্য নীতিমালা নেই। কারণ এটা উন্মুক্ত মাধ্যম না। এখানে মানুষ টাকা দিয়ে কন্টেন্ট দেখেন। কারও ইচ্ছে হলে দেখবেন, ইচ্ছে না হলে দেখবেন না। তাই এই মাধ্যমের নীতিমালা মানে শুধু নির্মাতাদের ঝুঁকিতে ফেলছেন তা না, দর্শকদেরও অপমান করছেন। আপনি দর্শকদের রুচি ঠিক করে দেওয়ার কেউ না।
চলচ্চিত্র পরিচালনার কথা শোনা গেলেও নতুন খবরে আপনাকে পাচ্ছি না। আসলে চলচ্চিত্রে কবে আপনাকে দেখবেন দর্শকরা?
করোনার আগে খুব আমার প্রথম সিনেমার প্রি-প্রোডাকশনের কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু করোনার কারণে সেটা স্থবির হয়ে পড়ে। এর মাঝে ওয়েব সিরিজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। তাছাড়া এই সময়ে নির্মাতা হিসেবেও আমার অনেকটা উন্নতি হয়েছে। সেই জায়গা থেকে এখন মনে হচ্ছে, ২ বছর আগের সেই কাজটিতে কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। সেটাকে আরও ডেভেলপ করা যায়। তাই সিনেমা নির্মাণে আরও কিছুদিন সময় নিতে চাই।