বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সীতাকুণ্ড ট্রাজেডি: লাইভ চলাকালীন মা বলে চিৎকার করে আর কথা বলেনি ইব্রাহীম

আপডেট : ০৬ জুন ২০২২, ০১:০৩

‘আমার ভাই ভিডিও করতিলো! ভিডিও করতি করতি কী ছুইটে আইসে আমার ভাই’র মাথায় লাইগলো রে...। মা কয়ে চিল্লেন দিয়ে আর কথা কইনি রে...। আমার ভাই কী কইরে ফুরোয়ে গেলো রে..। ভাইতো আর আসবে নারে...।’ হাউমাউ করে কেঁদে কেঁদে কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে নিহত ইব্রাহীম হোসেনের মেঝবোন সেলিনা আক্তার। 

ইব্রাহীম (২৭) প্রাণ আরএফএল কোম্পানিতে ওই এলাকায় শিপিং সহকারী পদে চাকরি করতেন। তিনি যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার জহুরপুর ইউনিয়নের নরসিংহপুর গ্রামের আবুল কাশেম মুন্সীর ছোট ছেলে। 

নিহত ইব্রাহীমের খালাতো ভাই শিমুল হোসেন জানান, শনিবার (৪ জুন) রাতে অনেকের মতো ইব্রাহীম অগ্নিকাণ্ডের ভিডিও ফেসবুকে লাইভ করছিলেন। কিছু সময় পর হঠাৎ ডিপোর কনটেইনারগুলোতে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। তখন থেকে ইব্রাহীমের মুঠোফোন বন্ধ ছিল। এরপর ঘটনাস্থলে গিয়ে খোঁজাখুজির পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে তার মরদেহের সন্ধান মেলে। 

এদিকে, রবিবার সকাল থেকেই প্রতিবেশী ও গ্রামের লোকজন ইব্রাহীমের বাড়িতে ভিড় করছেন। ছেলের অপেক্ষায় রয়েছেন মা দুলুপি বেগম ও বাবা আবুল কাশেম। জীবনসঙ্গীকে হারিয়ে স্ত্রী মুন্নি খাতুন যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন। ভাই-বোনসহ অন্যান্য স্বজনদের গগণবিদারী আহাজারিতে চারপাশ ভারি হয়ে উঠেছে

ইব্রাহীমের মা বলেন, ‘শনিবার রাত নয়টায় ইব্রাহীমের সাথে মুঠোফোনে আমাদের শেষ কথা হয়। ঈদে বাড়ি এসে সন্তানের মুখ দেখতে চেয়েছিল সে। পুত্র সন্তান হলে মাদরাসায় পড়াতে চেয়েছিল, হাফেজ বানাবে। কিন্তু অগ্নিকাণ্ডে ইব্রাহীমের সেই স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল।’

জহুরপুর ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিন্টু জানান, পাঁচ বছর আগে প্রাণ আরএফএল কোম্পানিতে চাকরি পান ইব্রাহীম। দেড় বছর আগে নিজ গ্রামেই বিয়ে করেছেন। তার স্ত্রী এখন নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ইব্রাহীম মারা যাওয়ার পর পুরো গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।  তিনি আরও জানান, রোববার সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে মরদেহ গ্রহণ করে ইব্রাহীমের খালাতো ভাই শিমুল যশোরের পথে রওনা হয়েছেন। সোমবার (৬ জুন) সকালে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবারের লোকজন।  

 

ইত্তেফাক/ ইআ