শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

কেশবপুরে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে মাছ চাষ!

জলাবদ্ধতার আশঙ্কা

আপডেট : ০৬ জুন ২০২২, ০১:৪৬

শুষ্ক মৌসুমে কেশবপুরে মৎস্য ঘের মালিকরা শত শত শ্যালোমেশিন ও বৈদ্যুতিক সেচ পাম্প দিয়ে অবৈধভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে মাছ চাষ শুরু করেছেন। ফলে বর্ষা মৌসুমের অতিরিক্ত পানি উপচে এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

২০০০ সালের দিকে এলাকার প্রভাবশালীরা বিলগুলো দখল করে মাছের ঘের করেন। ঘের মালিকরা ব্রিজ, কালভার্টের মুখ ভরাটসহ অপরিকল্পিত বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি নিষ্কাশন পথ বন্ধ করে দেন। এরপরও তারা মাছ চাষের জন্যে শুষ্ক মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে বিল ভরাট করেন। এতে বর্ষাকালে অল্প বৃষ্টিতেই পানি মানুষের বসতবাড়িতে উঠে যায়। এলাকায় দেখা দেয় কৃত্রিম জলাবদ্ধতা। বাগডাঙ্গা গ্রামের অনাথ বন্ধু সরকার, মিহির সরকার জানান, নদী অববাহিকার ঘের মালিকরা মৎস্য ঘেরে নোনা পানি ওঠাচ্ছেন। এতে কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সজিব সাহা জানান, কেশবপুরে ৪ হাজার ৬৫৮টি মৎস্য ঘের রয়েছে। এসব ঘেরে চাষযোগ্য সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জমি রয়েছে। বোরো আবাদের লক্ষ্যে ঘের মালিকরা ঘেরের পানি নিষ্কাশন করেন। আবার ১৫ বৈশাখের পর অবৈধভাবে ঘেরে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে পানিতে ভরে ফেলেন। তিনি অভিযোগ করেন, ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে মাছ চাষের কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া, ঘের মালিকরা ৫৯টি সরকারি খাল জবরদখল করে মাছ চাষ করছেন।

যশোর বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী সোহেল রানা জানান, কেশবপুরে কৃষিকাজে ব্যবহারের জন্য দেড় হাজার কৃষকের সেচ লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। সরকার কৃষিকাজে ভর্তুকি দিচ্ছে। কৃষক শুধু কৃষিকাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজে সেচ পাম্প ব্যবহার করতে পারবেন না।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর কেশবপুর জোনাল অফিসের ডিজিএম আব্দুল লতিফ বলেন, তাদের সমিতির আওতায় কেশবপুরে বিদ্যুতের সেচ সংযোগ রয়েছে ২ হাজার ৫০টি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনকারীদের সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণের জন্য তার দপ্তরে পত্র দিয়েছেন। যেসব কৃষক সেকেন্ড ব্লক করবে তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা যাবে না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার বলেন, সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে মৎস্য ঘের মালিকরা মাছ চাষ শুরু করেছেন। সরকার কৃষিকাজের জন্য শুধু বিদ্যুৎ সংযোগসহ ভর্তুকি দিচ্ছে। যারা অবৈধভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করছে, তাদের বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মুন্সি আছাদুল্লাহ বলেন, যারা অবৈধভাবে পানি উত্তোলন করে মাছ চাষসহ কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে সব রকম সহযোগিতা করা হবে।

মৎস্য ঘের মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, যেসব ঘের মালিক চারা মাছ চাষ করেন, তারা ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন না করলে ঐ মাছ বাঁচানো সম্ভব হয় না। তবে যারা পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে সরকারি খাল দখল করে মাছ চাষ করছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম আরাফাত হোসেন বলেন, ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনকারীদের ব্যাপারে মাসিক সমন্বয় সভা ও আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেচ পাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য পল্লি বিদ্যুৎ বিভাগে পত্র দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সরকারি খাল দখলমুক্ত করার জন্য অভিযান পরিচালনা করা হবে।

ইত্তেফাক/এমআর