শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সুরক্ষা নীতিমালা মেনে চলছে না অধিকাংশ বেসরকারি আইসিডি

আপডেট : ০৯ জুন ২০২২, ০৭:০০

বেসরকারি কনটেইনার ডিপো বা আইসিডিসমূহের অধিকাংশই নীতিমালা মেনে চলছে না। বিশেষ করে কনটেইনার ডিপোর সেফটি সিকিউরিটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মেনে চলা হচ্ছে না। বেসরকারি আইসিডি-সিএফএস নীতিমালা-২০১৬-এর ৯.৩ ধারা অনুযায়ী বিপজ্জনক ও বিস্ফোরক পণ্য হ্যান্ডলিং ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ডেঞ্জারাস গুডস (আইএমডিজি) নীতিমালা অনুসরণ করা হয় না। এমনকি চট্টগ্রাম বন্দরের পক্ষ থেকে গত বছরের জুন মাসে ডিপো মালিকদের বিপজ্জনক পণ্যসমূহ হ্যান্ডলিং, পরিবহন ও সংরক্ষণ যথাযথ হচ্ছে না বলে সর্তক করা হয়েছিল। এর কারণে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনার ঘটনাও ঘটছে বলে উল্লেখ করা হয়। বন্দরের পক্ষ থেকে আইএমডিজি অনুকরণের জন্য কতিপয় নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছিল বলে জানা যায়।

ডিপো মালিকদের সংগঠন বিকডার সভাপতি নুরুল কাইয়ুম খানও বন্দরের তাগাদাপত্রের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি এও বলেন, সব ডিপো মালিকদের পক্ষে আইএমডিজি অনুসরণ করা সম্ভব নয়। এমনকি তার নিজের ডিপোর পক্ষেও সম্ভব নয় বলে জানান। নুরুল কাইয়ুম খান বলেন, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী গত মঙ্গলবার মৌখিকভাবে জানিয়েছেন আইএমডিজি নীতিমালা যে সব ডিপো মানতে পারবে শুধু তাদের যেন ঐ ধরনের বিপজ্জনক কার্গো হ্যান্ডলিং ও সংরক্ষণের জন্য দেওয়া হয়।

১৯৯৮ সালে মাত্র তিনটি বেসরকারি আইসিডির মাধ্যমে এর যাত্রা শুরু হয়। পরে ২০১৬ সালে বেসরকারি খাতে ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) ও কনটেইনার ফ্রেইট স্টেশন (সিএফএস) নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। উক্ত নীতিমালার আলোকে ইতিমধ্যে কয়েক দফায় ডিপোগুলোকে নীতিমালার আলোকে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এমনকি সব সংস্থার প্রতিনিধির ভিত্তিতে ২০১৭ ও ২০২০ সালে উক্ত নীতিমালার আলোকে ডিপোগুলো পরিচালিত হচ্ছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হয়। কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রত্যেক ডিপোই নীতিমালা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করেনি। ১৯৯৮ সালে বেসরকারি আইসিডির অনুমতি প্রদান করার ক্ষেত্রে এর সব অবকাঠামোসহ প্রয়োজনীয় যোগ্যতা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখে তাদের উপযুক্ততা নিশ্চিত করবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। তারই ভিত্তিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীনে চট্টগ্রাম কাস্টমসের লাইসেন্স প্রদান করা হবে। এর মাধ্যমেই এটি একটি বন্ডেড হাউজ হিসেবে পরিগণিত হবে। আইসিডিসমূহে প্রথমে খালি কনটেইনার রাখার অনুমতি প্রদান করা হয়। এরপর রপ্তানিমুখী কনটেইনার এবং সর্বশেষ আমদানি পণ্যের মধ্যে ৩৮টি পণ্য নির্দিষ্ট ডিপোসমূহে নিয়ে এতে আমদানিকারকের নিকট পৌঁছানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়।

বেসরকারি আইসিডি নীতিমালা-২০১৬-এর অবকাঠামো, যান্ত্রিক ও যোগের ব্যাপারে ৬ নম্বর অনুচ্ছেদের প্রথমে বলা হয়, ডিপোতে পানি ও বিদু্যতের সার্বক্ষণিক ব্যবস্হা নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু গত শনিবার রাতে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের পর দেখা যায় ফায়ার সার্ভিস ডিপো থেকে পানির সরবরাহ পায়নি। নীতিমালার ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এর সেফটি ও সিকিউরিটির কথা বলা হলেও বিএম কনটেইনার তাও পুরোপুরি অনুসরণ করেনি। জারক কেমিক্যাল হিসেবে তা হ্যান্ডলিং ও সংরক্ষণের জন্য আইএমডিজি নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি। কেমিক্যালবাহী ৩৩টি কনটেইনারের পাশেই ছিল গার্মেন্টসসহ অন্যান্য পণ্যবাহী কনটেইনার। ফলে একটি কনটেইনারের পণ্যে আগুন লাগার সঙ্গে উচ্চ তাপমাত্রার কারণে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডবাহী কনটেইনারের ভেতর জলীয় বাষ্পের উচ্চ চাপে বিস্ফোরণ ঘটে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যে সব হাইড্রোজেন পার অক্সাইডবাহী কনটেইনার উচ্চ তাপমাত্রার সংস্পর্শে এসেছিল সেগুলোই বিস্ফোরিত হয়। তাছাড়া অন্তত ১২টি হাইড্রোজেন পার অক্সাইডবাহী কনটেইনার অবিস্ফোরিত অবস্থায় রয়েছে। একইভাবে বিএম ডিপোতে এসব জারক কেমিক্যালের সেফটিসহ সার্বিক ডিপোর নিরাপত্তার জন্য অগ্নিনির্বাপণ ও সিভিল ডিফেন্সের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা অনুসরণ করে অগ্নিনির্বাপণের প্রয়োজনীয় সুবিধা নিশ্চিত করা হয়নি। এমনকি আইএসপিএস কোড অনুযায়ী নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়নি। এমনকি বেসরকারি আইসিডির মনিটরিং কমিটি কতৃ‌র্ক ২০১৭ ও ২০২০ সালে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী নীতিমালা ২০১৬ চট্টগ্রামসহ তত্সংলগ্ন এলাকায় থাকা ১৯টি আইসিডির প্রত্যেকের কমবেশি সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অবকাঠামো নিরাপত্তা, সেফটি এবং একটি আইসিডিতে যে সব যন্ত্রপাতি ও ইকুইপমেন্ট থাকা দরকার তাও সব আইসিডি নিশ্চিত করতে পারেনি।

ইত্তেফাক/ ইআ