শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত, ঘরবাড়ি কৃষিজমি বিলীন

আপডেট : ২২ জুন ২০২২, ০৪:৫০

বিভিন্ন স্থানে নদনদীর পানি বাড়ছে। একই সঙ্গে ভাঙছে নদী এলাকা। ভাঙনকবলিত এলাকায় ঘরবাড়ি, কৃষিজমি ও তাঁত কারখানা বিলীন হয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে বানভাসিদের পানীয়জল ও জ্বালানিসংকট।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি ও শাহজাদপুর সংবাদদাতা জানান, প্রবল বর্ষণ ও ঢলে যমুনা নদীসহ বিভিন্ন নদনদীর পানি বৃদ্ধির ফলে সিরাজগঞ্জে ভাঙন চলছে। গত এক সপ্তাহের ভাঙনে শাহজাদপুর উপজেলায় খুকনি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রামের অন্তত ৫০টি বাড়িঘর, ১০টি তাঁত কারখানা, গো-খামার, একটি মসজিদ ও অসংখ্য গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

তারকা মসজিদের ইমাম হাফেজ জহুরুল ইসলাম ও সভাপতি হাজী মোহাম্মদ আলী বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে এ গ্রামে ভাঙনের তাণ্ডব শুরু হয়েছে। মো. সাঈদী, আমীর হামজা, রেজিয়া খাতুন, মারুফ হোসেন, শাহানাজ পারভীন ও আবু তালেব বলেন, ভাঙন রোধে এখানে বস্তা ফেলা হলেও তা কোনো কাজে আসছে না। তাদের বাড়িঘর রক্ষা পাচ্ছে না। 

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, যমুনা নদীর একটি অংশে ভাঙন রোধে বস্তা ফেলার কাজ চলছে। এছাড়া ঐ এলাকার ভাঙন স্থায়ীভাবে রোধের জন্য সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে তীরসংরক্ষণ কাজও চলছে। এদিকে বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় শাহজাদপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের আরও নতুন নতুন এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার কাঁচা পাট, তিল, কাউন, বাদাম, পটোল ও শাকসবজির খেত ডুবে গেছে।

গঙ্গাচড়া (রংপুর) সংবাদদাতা জানান, গঙ্গাচড়ায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৩৫ পরিবারের বাড়িঘর তিস্তায় বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে আরো অনেক পরিবার। এছাড়াও হুমকির মুখে রয়েছে ১০ পরিবারের বাড়িঘর। আর এই কটি বাড়ি ভেঙে গেলে শংকরদহ এলাকা সম্পূর্ণরূপে তিস্তায় বিলীন হয়ে যাবে। লোকজন বাড়িঘর আসবাবপত্র সরিয়ে নিয়ে উঁচু স্থানে যাচ্ছে। লক্ষ্মীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল হাদী বলেন, শংকরদহ এলাকার ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জাকারিয়া আলম বলেন, শংকরদহ এলাকায় ভাঙন রোধে আপাতত কোনো ব্যবস্থা নেই।

বকশীগঞ্জ (জামালপুর) সংবাদদাতা জানান, পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বকশীগঞ্জে দশানী নদীর ভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে। বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি। গত এক সপ্তাহে মেরুরচর ইউনিয়নের আউল পাড়া, কলকিহারা, ফকিরপাড়া, মাদারেরচর, মাইছানিরচর, নীলাক্ষিয়া ইউনিয়নের সাজিমারা ও কুশলনগরসহ মেরুরচর, সাধুরপাড়া ও বগারচর ইউনিয়নের শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি ও ভিটেমাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নীলাক্ষিয়া সাজিমারা গ্রামের নহিন্দর শেখ বলেন ‘চোখের সামনেই আমার বসতঘর ও ভিটেমাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে আমি গৃহহীন।’ কুশল নগর দক্ষিণ পাড়া গ্রামের জামাল উদ্দিন বলেন, ‘বন্যার শুরুতেই নদীর ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়েছি। আমরা নদীর কবল থেকে বাঁচতে চাই।’ মেরুরচর ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান জানান, দশানী ও ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে মেরুরচর ইউনিয়ন লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনমুন জাহান লিজা জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে সরকারি সহায়তা অব্যাহত আছে। স্থায়ী সমাধানের বিভিন্ন পরিকল্পনা চলমান। 

ইত্তেফাক/এমএএম