দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার পোথাইল আবাসিক এলাকায় পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে দুটি ট্যানারি কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। এতে হুমকিতে এলাকার পরিবেশ। কাঁচা চামড়ার দুর্গন্ধে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। বিষাক্ত রাসায়নিক ও কাঁচা চামড়ার দুর্গন্ধে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয়সহ খেতের ফসল ও মাছের প্রজনন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বেশ কিছু দিন ধরে এলাকার বাসিন্দা আদিত্য কুমার দাস ও তুলসী দাস নামে দুই ব্যক্তি পরিবেশ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন থেকে যথাযথ অনুমোদন না নিয়েই আবাসিক এলাকায় দুটি ট্যানারি কারখানা স্থাপন করেছেন। প্রতিদিন শত শত কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করে খোলা পরিবেশে লবণ ও বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে হাউজে ভিজিয়ে তা পাকা করা হচ্ছে। এ চামড়া দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে তা বাজারে বিক্রি করে আসছেন উদ্যোক্তারা। এলাকার শত শত পরিবার কাঁচা চামড়া ও বিভিন্ন রাসায়নিকের দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। দুর্গন্ধে দিনরাত তারা ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করেও বাড়িতে টিকতে পারছেন না। কারখানার বিকট শব্দে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীসহ শিশুদের লেখাপড়ায় মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে।
এলাকার পুকুর, জলাশয় ও খালের পানিতে গোসল করে অনেকে চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিষাক্ত চামড়ার বর্জ্যে ফসল এবং পুকুর ও খালের মাছ মরে যাচ্ছে। এলাকায় পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসী এ দূষিত পরিবেশ থেকে বাঁচতে ও আবাসিক এলাকা থেকে দ্রুত ট্যানারি কারখানা সরিয়ে নিতে পঞ্চায়েত কমিটির মাদবরদের মাধ্যমে মন্ত্রীর সুপারিশ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ জমা দিয়েছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদে একাধিক অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন তারা।
ট্যানারি মালিক আদিত্য কুমার ও তুলসী দাস জানান, পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, রাসায়নিক বিষয়ক ও কারখানা নিবন্ধের কোনো সনদ না নিয়েই তিনি আবাসিক এলাকায় ট্যানারি কারখানা স্থাপন করেছেন। এতে এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ের কথাও তারা স্বীকার করেছেন। তবে তারা জানান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের ম্যানেজ করেই কারখানা চালিয়ে আসছেন।
এ বিষয়ে বাস্তা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশকার আলী জানান, ট্যানারি কারখানার মাধ্যমে এলাকার ফসল ও মাছের ক্ষতি হচ্ছে এ রকম কোনো অভিযোগ তিনি পাননি। এলাকাবাসীর কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে কারখানা বন্ধের জন্য তিনি ব্যবস্থা নেবেন। এলাকার কৃষকরা জানান, খেতে ট্যানারির বিষাক্ত পানি থাকায় চর্মরোগে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে কোনো দিনমজুর ধান ও পাট কাটতে আসতে চান না। ৫০০ টাকার মজুরির পরিবর্তে ১ হাজার টাকা দিয়েও কেউ কাজ করতে নারাজ। ফলে বিপাকে কৃষক।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহেদী হাসান জানান, পোথাইল এলাকাবাসী কারখানা বন্ধের জন্য একটি অভিযোগ তার কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন। তিনি খুব শিগ্গিরই ঘটলাস্থল পরিদর্শন করে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।