বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

হিন্দু যুবককে হত্যা: থমথমে রাজস্থানে ১৪৪ ধারা জারি 

আপডেট : ২৯ জুন ২০২২, ২০:১৭

ভারতের রাজস্থানের উদয়পুরে দুই মুসলিম যুবকের হাতে মঙ্গলবার একজন হিন্দু দর্জির নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর গোটা রাজ্যেই পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ ও থমথমে হয়ে রয়েছে। তবে কোথাও বড় কোনও অশান্তির খবর পাওয়া যায়নি।  

রাজ্যের সব জেলাতেই ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে, পুলিশ রয়েছে হাই অ্যালার্টে। উদয়পুর শহরে সব দোকানপাট, অফিসকাছারি আজ বন্ধ - চলছে সার্বক্ষণিক পুলিশ টহল। 

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দর্জি কানহাইয়ালালের হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হলেও আজ বুধবার আর মানুষকে জমায়েত হতে দেওয়া হয়নি। পরিবারের সম্মতিতে পোস্ট মর্টেমের পর নিহতের শেষকৃত্যেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ইসলামের নবী সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করে বহিষ্কৃত বিজেপি মুখপাত্র নূপুর শর্মার সমর্থনে সম্প্রতি ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার পর থেকে নিহত ঐ দর্জিকে হুমকি দেয়া হচ্ছিল। বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এদিকে হত্যাকারী দুই যুবকের আন্তর্জাতিক স্তরে বা কোনও সংগঠনের সঙ্গে যোগসাজস ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক টুইটে জানিয়েছে।

রাজস্থানের কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট বলেছেন, পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাস ছড়াতেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে তারা প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছেন। গৌস মহম্মদ ও রিয়াজ আখতারি- দুজন হত্যাকারীকেই গতকাল উদয়পুরের পাশের জেলা রাজসমন্দ থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তাদের এখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সন্ত্রাস দমনে ভারতের শীর্ষ তদন্তকারী সংস্থা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এনআইএ) কর্মকর্তারাও গত রাতেই উদয়পুরে পৌঁছে গেছেন।

এই হত্যাকাণ্ডকে যে একটি 'সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড' হিসেবে দেখা হচ্ছে, তদন্তে এনআইএ-র যোগদান থেকেই তা স্পষ্ট। 

মুসলিম নেতাদের প্রতিক্রিয়া

এদিকে এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করে রাজস্থানেরই আজমির শরিফ দরগার দেওয়ান জইনুল আবেদিন আলি খান আজ এক বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, 'ভারতের মুসলিমরা কখনওই তাদের মাতৃভূমির তালিবানিকরণের চেষ্টা মেনে নেবে না।' 

দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নিতেও তিনি সরকারকে আর্জি জানান। হায়দ্রাবাদের এমপি আসাদউদ্দিন ওয়াইসি আবার বলেছেন, 'এটা একটা জঘন্য আপরাধ। যেমন পহেলু খান বা মহম্মদ আখলাককে পিটিয়ে মারা অপরাধ ছিল, এটাও তেমনই একটা ঘৃণ্য অপরাধ। তবে দেখার বিষয় হল, উদয়পুরে এই হত্যার পর কেউ কিন্তু বিজয়োল্লাস করেনি, কেউ মিছিল বের করেনি!'

জমিয়ত উলেমা-ই-হিন্দের প্রেসিডেন্ট মওলানা মাহমুদ আসাদ মাদানি বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, "উদয়পুরের এই হত্যাকাণ্ড মানবতার একটা কলঙ্ক।" এই হত্যাকাণ্ড ঠেকাতে পুলিশ ও প্রশাসন কেন ব্যর্থ হল, সে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও এক টুইট-বার্তায় লেখেন, "উদয়পুরে যা ঘটেছে তার তীব্র বিরোধিতা করছি। হিংসা এবং চরমপন্থা কখনই গ্রহণযোগ্য নয়, তা যে কারণেই ঘটুক না কেন।" 

এদিকে উদয়পুর হত্যাকাণ্ড ঠেকানোর ক্ষেত্রে রাজস্থানের কংগ্রেস সরকারের ব্যর্থতা ছিল কি না, তা নিয়েও শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক। 

রাজস্থানে রাজ্যবর্ধন রাঠোরের মতো বিজেপি নেতারা অশোক গেহলট সরকারকে তীব্র আক্রমণ করে বলেছেন, "রাজ্য সরকারের পুলিশ নেতাদের ওপর নজরদারি চালানো ছেড়ে যদি সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষার দিকে মন দিত, তাহলে এই ঘটনা ঘটতেও পারত না।" বিবিসি

ইত্তেফাক/এসআর