বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

এই প্রবণতা বন্ধ করা উচিত

আপডেট : ৩০ জুন ২০২২, ১০:৫১

বিশ্ববাসী গত দুই বৎসরেরও অধিক সময় ধরিয়া করোনা মহামারি এবং তাহার অভিঘাত মোকাবিলা করিয়া চলিয়াছে। ধারণা করা হইয়াছিল, শীঘ্রই আকাশের মেঘ কাটিয়া যাইবে। উদিত হইবে নূতন সূর্য। মানুষ করোনা হইতে মুক্ত হইয়া নূতন আশা ও শক্তি-সাহসে জাগিয়া উঠিবে। কিন্তু সবাইকে হতাশ করিয়া সারা বিশ্বে আবারও করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঘটিতেছে। এই পর্যন্ত বিশ্বে ৫৪ দশমিক ৫ কোটি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হইয়াছে। ইহাতে মারা গিয়াছে ৬৩ দশমিক ৩ লক্ষ মানুষ। ২০১৯ সালের শেষের দিকে চীনের উহানে ইহার উত্পত্তি হইয়াছিল। ইহার পর দ্রুত বিশ্বব্যাপী তাহা ছড়াইতে থাকে। কঠোর লকডাউনের কারণে কিছু কিছু দেশে ইহার বিস্তার কিছুটা কমিলেও লকডাউনের কারণে অর্থনৈতিক যে ক্ষয়ক্ষতি হয়, তাহা কাটাইয়া উঠা কঠিন হইয়া পড়ে। একসময় জীবন ও জীবিকা দুইটাই রক্ষা করা হইয়া উঠে চ্যালেঞ্জস্বরূপ। করোনার প্রকোপ না যাইতেই ইউক্রেন যুদ্ধ মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসাবে হাজির হয়। এই যুদ্ধের কারণে সাপ্লাই চেইন ব্যাহত হওয়ায় বিশ্ব অর্থনীতির স্বাভাবিক গতিপথও বন্ধ বা অচল হইয়া পড়ে। বিশেষত উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলি নানাভাবে অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে পড়ে। এই চাপ আমরা এখনো মোকাবিলা করিয়া যাইতেছি। ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশে বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আরেক দফা চাপের সৃষ্টি হইয়াছে। এই ত্রিশঙ্কু পরিস্থিতির অবসান কবে হইবে তাহা আমরা কেহ জানি না।

পত্রপত্রিকার খবর অনুযায়ী বর্তমানে করোনার চতুর্থ ঢেউ চলিতেছে। ঘরে ঘরে দেখা দিতেছে সর্দি-জ্বর। বাংলাদেশে আবার বাড়িতে শুরু করিয়াছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার। সংক্রমণের হার এখন ১৫ শতাংশের উপরে। ইহা বিপজ্জনক। স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে আবারও কড়াকড়ি আরোপের সময় আসিয়াছে। বিশেষ করিয়া ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে মানুষের চলাচল বৃদ্ধি পাইবে বিধায় এই সময় সতর্কতা জারি করা আবশ্যক। শুধু বাংলাদেশ নহে, সারা বিশ্বে গত মার্চ মাস হইতে করোনায় সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। এই করোনা, যুদ্ধবিগ্রহ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রভৃতি কারণে দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির হার বাড়িয়া গিয়াছে। উন্নত-অনুন্নত সকল দেশে মূল্যস্ফীতি এখন এক বিশাল সমস্যা। পৃথিবী জুড়িয়া বিভিন্ন কাঁচামালের মূল্য শতভাগ পর্যন্ত বাড়িয়া গিয়াছে। জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধিতে বাড়িয়াছে পরিবহন ব্যয়। বর্তমানে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য যথারীতি জাহাজও পাওয়া যাইতেছে না। অর্থনৈতিক মন্দায় ব্যাংকের ঋণখেলাপির সংখ্যা বাড়িতেছে। অথচ এই কঠিন পরিস্থিতিতে একটি প্রবণতা লক্ষ করা যাইতেছে তাহা হইল, বিল দিতে না পারিলে বিদ্যুতসহ বিভিন্ন নাগরিক সেবার লাইন কাটিয়া দেওয়া হইতেছে। বহুভাবে বেসরকারি খাতের উপর চাপ কেবল বৃদ্ধি পাইয়াই চলিয়াছে।

সারা বিশ্বে চলিতেছে ত্রাহি অবস্থা। উন্নয়নশীল দেশের অবস্থা যে খারাপ, তাহা বুঝিতে বিশেষজ্ঞ হইবার দরকার নাই। কতৃ‌র্পক্ষের ভাব-ভঙ্গিমায় দৈন্য প্রকাশ না পাইলেও ওয়াকিবহাল মহল আগামী দিনগুলিতে কী পরিস্থিতি দাঁড়াইবে তাহা চিন্তা করিয়া খুবই উদ্বিগ্ন। সবচাইতে দুঃখজনক হইল, এখনকার অর্থনৈতিক চাপটা বেসরকারি খাতের উপর চাপাইয়া দেওয়া হইতেছে। তাহারা কতদিন এই চাপটা সহ্য করিতে পারিবেন তাহা আমরা কেহ কি একবার ভাবিয়া দেখিতেছি? এই পরিস্থিতিতে বিশ্বে শেষ পর্যন্ত কী অবস্থা হইবে তাহা ভাবিতেও আমরা শিহরিত হইয়া উঠি। ইহাতে দেশে দেশে বাড়িবে শ্রমিক অস্থিরতা। অনেকে বেতন-ভাতা-বোনাস ইত্যাদি না পাইয়া রাস্তায় নামিবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাহাদের কতদিন ঠেকাইয়া রাখিবে? তাহারাও একসময় হয়তো বাধ্য হইয়া বলিতে পারে, তাহাদের গাড়ি নাই বা গাড়ি থাকিলে গাড়িতে টায়ার বা তৈল নাই! মুদ্রাস্ফীতিতে কী ক্ষতি হইয়াছে তাহা বিদেশে গিয়া দিব্যচক্ষেই দেখা যাইতেছে। অর্থ পকেট হইতে কীভাবে খসিয়া পড়িতেছে তাহা বুঝিতে অসুবিধা হয় না। অতএব, যখন-তখন প্রতিষ্ঠান বন্ধ বা জরুরি সেবার লাইন কাটিয়া দেওয়ার মতো নিষ্ঠুর আচরণ বা হুমকি প্রদানের প্রবণতা অবশ্যই বন্ধ করা উচিত।

ইত্তেফাক/এসজেড