বিশ্বব্যাপী যুদ্ধবিগ্রহ বা বৈশ্বিক মহামারির হাত ধরিয়া দেখা দিয়াছে বৈশ্বিক মন্দাও। দুই বত্সরেরও অধিক কাল ধরিয়া কোভিড-১৯ মহামারির প্রকোপ ও বিশ্বে ব্যাপক প্রভাব সৃষ্টিকারী ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশে দেশে এখন চলিতেছে অর্থনৈতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক। এই করোনার ছোবল ও সর্বনাশা যুদ্ধের শেষ কোথায় তাহা এখনো স্পষ্ট নহে। এই জন্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করিতেছেন যে, আগামী দিনগুলিতে আরো ভয়াবহ পরিস্হিতি অপেক্ষা করিতেছে আমাদের জন্য।
একদিকে সরাসরি যুদ্ধ, অন্যদিকে প্যাসিফিক অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের জন্য পরাক্রমশালী দেশগুলির মধ্যে চলিতেছে স্নায়ুযুদ্ধ। এশিয়ার একটি শক্তিশালী দেশের সহিত পশ্চিমা বিশ্বের এই দ্বন্দ্ব বা প্রতিযোগিতার শেষ কোথায় তাহাও আমাদের অজানা। সেই দেশটির শাসনাধীন হওয়ার ২৫তম বর্ষ উদ্যাপনের জন্য সেই দেশের প্রেসিডেন্ট গতকাল হংকং গিয়াছেন।
একই দিন মাদ্রিদে ন্যাটো সম্মেলনের শেষ দিনে সংস্হাটির প্রধান জানাইয়াছেন, ‘আমরা আরো বিপজ্জনক ও অপ্রত্যাশিত বিশ্বে বসবাস করিতেছি। পরিস্হিতি আরো খারাপ হইতে পারে এবং রাশিয়া ও ন্যাটো দেশগুলির মধ্যে একটি সম্ভাব্য পূর্ণমাত্রার সংঘাত হইতে পারে।’ একে অপরকে বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদানের কথা আমরা জানি। এমনকি পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হইবার ভয়ও দেখানো হইতেছে বহুদিন ধরিয়া।
কোনো কোনো বিশ্লেষক বলিতেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ হইল তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের অংশ ও প্রারম্ভিক সংঘাত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ন্যায় এই সংঘাত একসময় সমগ্র ইউরোপে ছড়াইয়া পড়িতে পারে। ইউরোপে মার্কিন সৈন্য বাড়াইবার ঘোষণা কি এই কারণেই দেওয়া হইল? শুধু ইউরোপ নহে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেও ভয়াবহ সংঘাত দেখা দিতে পারে। তাই অবস্হাদৃষ্টে প্রতীয়মান হইতেছে—কোনোকিছুই ভালো যাইতেছে না।
উপর্যুক্ত পরিস্হিতিতে ধনী-গরিব ও উন্নত-উন্নয়নশীল দেশগুলিতে বিভিন্ন প্রকার অস্হিরতা দেখা যাওয়াটা অস্বাভাবিক নহে। ইতিমধ্যে কোনো কোনো দেশের মানুষ রাস্তায় নামিয়া পড়িয়াছে। গত বুধবার কলোম্বিয়ার জেলে বন্দিরা বিদ্রোহ করিয়াছেন। সেইখানে পুলিশের সহিত সংঘর্ষ হইয়াছে। ল্যাটিন আমেরিকার অধিকাংশ দেশের জেলগুলিতে এখন তিল ধারণের ঠাঁই নাই। ভেনিজুয়েলায়ও বর্তমানে অস্হিরতা চলিতেছে। মূল্যস্ফীতির চাপে বিভিন্ন দেশের মানুষ আজ দিশাহারা। সকল স্হানে বেকারত্বের হার ক্রমবর্ধমান।
এই প্রেক্ষাপটে কলকারখানা ও বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান যদি বন্ধ হইয়া যায়, তাহা হইলে ইহার বিকল্প লইয়াও ভাবিতে হইবে। শ্রীলঙ্কায় ইতিমধ্যে জ্বালানি শক্তির ব্যবহার সাধারণ মানুষের জন্য একপ্রকার বন্ধ করিয়া দেওয়া হইয়াছে। সেইখানে গাড়িঘোড়া বন্ধ প্রায়। শুধু কলকারখানার উত্পাদনের জন্য জ্বালানি ব্যবহারের অনুমতি মিলিতেছে। আমরাও কৃচ্ছ সাধন, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমাইয়া সঞ্চয় বৃদ্ধি ও দেশি পণ্য কেনাকাটার উপর গুরুত্বারোপ করিতেছি।
তবে মনে রাখিতে হইবে, আমাদের মতো দেশে পরাজিত শক্তি ঘাপটি মারিয়া বসিয়া আছে। দুঃখজনক হইলেও সত্য, তাহারা রাজনৈতিক দল হইতে শুরু করিয়া সরকারি প্রশাসন পর্যন্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসিয়া কলকাঠি নাড়িতেছে। এমনকি প্রশাসনের উচ্চ পদেও তাহারা সুপ্রতিষ্ঠিত। তাহারা সুযোগের অপেক্ষায় আছে এবং যে কোনো সময় তাহারা মাথাচাড়া দিয়া উঠিতে পারে। যাহারা রাজাকার, আলশামসসহ শান্তি বাহিনী হইতে আসিয়াছে, তখন তাহারা নিজেদের আসল রূপে আত্মপ্রকাশ করিতে পারে। দেশে ইনটেলিজেনসের লোকজন রহিয়াছেন। তাহারা কী কাজ করিতেছেন তাহা সরকার ভালো জানে।
এদিকে নির্বাচনের বাকি আছে আর মাত্র দেড় বত্সর। অতএব, বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান ও উত্সবের পাশাপাশি এখনই এই সকলের দিকে নজর দিতে হইবে। নতুবা একসময় দেখা যাইবে চিড়িয়া উড়িয়া গিয়াছে! তখন আর আফসোস করিয়া কোনো লাভ হইবে না।