শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

হলি আর্টিজান হামলা: কী ঘটেছিল সেদিন

আপডেট : ০১ জুলাই ২০২২, ০৯:১৯

রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ৬ বছর আজ। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে জঙ্গি হামলায় ১৭ জন বিদেশিসহ নিহত হন মোট ২২ জন। তাদের মধ্যে দুইজন পুলিশ কর্মকর্তা। জঙ্গিদের গুলি ও বোমায় আহত হন পুলিশের অনেকে। সেনাবাহিনীর অপারেশন থান্ডারবোল্টে নিহত হয় ৬ হামলাকারী জঙ্গি।  

হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাত জনের দুই বছর আগেই প্রস্তুত করা হয়েছে পেপারবুক। এরই মধ্যে দণ্ডিত আসামিরা আপিল করেছেন। শুনানির জন্য প্রস্তুত হয়েছে মামলাটি। এখন হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স বেঞ্চে মামলাটি পাঠালে সেখানেই শুনানি হবে।

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেছেন, বিচারিক আদালতের রায়ের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) শুনানির জন্য পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি যেন দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। হাইকোর্টে দ্রুত এই স্পর্শকাতর মামলাটির শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রধান বিচারপতির কাছে আমরা একটি আবেদন দেব, যাতে দ্রুতই বেঞ্চ গঠন করা হয়।

গুলশানের হলি আর্টিজানে সেই ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলার ঘটনার ছয় বছর পর জঙ্গিদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈনের কাছে।  তিনি বলেন, এরা অনলাইনে সক্রিয় থেকে বিভিন্ন সময়ে অপতৎপরতা চালানোর চেষ্টা করছে। এটাও আমাদের মনিটরিংয়ে ধরা পড়ে। মাঝে মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওদের বিচরণ ধরা পড়ে। সেটাও আমরা নজরদারির মধ্যে এনে গ্রেফতার করছি। ওই হামলার পর প্রায় ১৬ শ জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া বিপদগামী ১৬ জঙ্গি সদস্য আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। তবে ওরা জঙ্গি কার্যক্রম চালাতে অর্থের যোগানের দিকে এগুচ্ছে। 

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, হলি আর্টিজানের মত বড় ধরনের হামলার সক্ষমতা জঙ্গি দলগুলোর নেই। তবে তারা চোরাগোপ্তা বা ‘লোন উলফ’ (একক ব্যক্তি বা জঙ্গিদের কোনো ছোট দল) এর মত হামলা চালাতে পারে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল গুলিস্তানে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের ওপর বোমা হামলা চালানো হয়। এতে দুই পুলিশ আহত হন। ওই ঘটনার এক মাস পর ২৭ মে মালিবাগে একটি পুলিশ ভ্যানে দূর নিয়ন্ত্রিত বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে একজন পথচারী আহত হয়। এই দুই হামলা কথিত আইএসের নামে চালানো হয়েছে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশান ২ নম্বরের ৭৯ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর প্লটের হলি আর্টিজান ও ওকিচেন রেস্তোরায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় ৯ জন ইটালির নাগরিক, ৭ জন জাপানি নাগরিক, ১ জন ভারতের নাগরিক, ৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক ও দুই জন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২৩ জন নিহত হন। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর অপারেশন থান্ডার বোল্ড অভিযানে ৫ জঙ্গি নিহত হয়। হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনার জের ধরে পরবর্তীতে সারাদেশে পুলিশ ও র‌্যাব ২৭ টি জঙ্গি বিরোধী অভিযান চালায়। এতে ৭৩ জন জঙ্গি (পুরুষ ও নারী) নিহত হয়। অভিযান চালাতে গিয়ে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে.কর্নেল আবুল কালাম আজাদসহ দুই পুলিশ কর্মকর্তা এবং চার জন উৎসুক জনতা নিহত হন। 

ওই হামলায় তামিম ও সরোয়ার জাহান মানিকসহ ২১ জঙ্গির জড়িত থাকার প্রমাণ উল্লেখ করে ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই আদালতে চার্জশিট দাখিল করে মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সংস্থা সিটিটিসি (কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম) ইউনিট। এই ২১ জনের মধ্যে ১৩ জন নিহত হয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে। হামলার পর ব্যাপক আলোচনায় ছিল নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিম। কিন্তু চার্জশিটে তাকে আসামি করা হয়নি। চার্জশিটে বলা হয়, নব্য জেএমবির জঙ্গিরা ছয় মাস আগে থেকে ওই হামলার পরিকল্পনা করে প্রস্তুতি নেয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, দেশকে ‘অস্থিতিশীল’ করা, বাংলাদেশকে একটি ‘জঙ্গি রাষ্ট্র’ বানানো।এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত জঙ্গিরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

২০১৬ সালের ১ জুলাই জঙ্গিদের হামলার পর প্যারা কমান্ডোদের অপারেশন থান্ডারবোল্টে নিহত হয় রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, মীর সামীহ মোবাশ্বীর, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম পায়েল। ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই কল্যাণপুরে অভিযানে নিহত হন আবু রায়হান তারেক। ওই বছরের ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় অভিযানে নিহত হয় তামিম আহমেদ চৌধুরী। পরে রাজধানীর রূপনগরে  মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম, আজিমপুরে তানভীর কাদেরী, আশুলিয়ায় সরোয়ার জাহান মানিক, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে নূরুল ইসলাম মারজান নিহত হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে অভিযানে নিহত হয় বাশারুজ্জামান চকলেট ও ছোট মিজান।  

যাদের নামে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে তারা হলেন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগান, রাশেদুল ইসলাম ওরফে র‌্যাশ, সোহেল মাহফুজ, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান এবং হাদিসুর রহমান সাগর। শহীদুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন। এদের মধ্যে খালেদ ও রিপনকে পলাতক দেখানো হয়। বাকিদেরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। যাদের নামে চার্জশিট দেয়া হয় তাদের মধ্যে বড় মিজানকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন আদালত। বাকি সাত জনের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৭ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।

ইত্তেফাক/মাহি