নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় মির্জাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মোরসালিনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশের ওপর হামলা মামলার আসামি নুর নবীকে (৩৭) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার (৪জুন) দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, অধ্যক্ষ লাঞ্ছিত ও পুলিশের ওপর হামলা মামলার বাদী এইআই মোরসালিন। মামলার বাদী হওয়ায় তাকে যেকোনো সময়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে সহযোগিতার জন্য লাগতে পারে। এজন্য তাকে নড়াইল পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
গ্রফতার নুর নবী সদর উপজেলার কলোড়া ইউনিয়নের গোবরা গ্রামের মৃত ফয়েজ চৌকিদারের ছেলে। সে পোশায় ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালক।
পুলিশ জানায়, রবিবার (৩জুন) রাত সাড়ে ১১টার দিকে যশোরের মনিহার সিনেমা হলের সামনে থেকে নুর নবীকে গ্রেফতার করা হয়।
সদর থানার ওসি (চলতি দায়িত্ব) মো. মাহামুদুর রহমান জানান, গত ১৮ জুন মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিতের সময় নূর নবী খুব তৎপর ছিল। তার বিরুদ্ধে সদর আমলি আদালতে বিকেলে ৫দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। তবে এখনো রিমান্ড শুনানির তারিখ নির্ধারিত হয়নি। তিনি বলেন, এ মামলায় এ পর্যন্ত নূর নবীসহ মোট ৫জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার হওয়া আগের ৪ জনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র রাহুল দেব রায় নিজের ফেসবুক আইডিতে গত ১৭জুন বিতর্কিত বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার ছবি দিয়ে স্ট্যাটাস দেয় বলে অভিযোগ ওঠে। পোস্ট দেওয়ার পর গত ১৮ জুন সকালে কলেজে আসেন রাহুল। এরপর তার বন্ধুরা পোস্টটি মুছে ফেলতে বললেও পোস্ট মুছেনি রাহুল। শিক্ষার্থীরা বিষয়টি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জানান। এক পর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কলেজের সব শিক্ষকদের পরামর্শে রাহুলকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে কলেজ চত্বরে থাকা শিক্ষকদের তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জসহ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ছোঁড়ে। ঘটনার সময় ২ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। এসময় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দোষীদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ ও কর্মকর্তাদের সামনে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর গলায় জুতার মালা পরিয়ে পুলিশ পাহারায় পুলিশের গাড়িতে উঠানো হয়। এ ঘটনায় মির্জাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মোরসালিন বাদী হয়ে সদর থানায় মামলায় অজ্ঞাত ১৭০-১৮০জনকে আসামি করে মামলা করেন। এদিকে, ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত রাহুলকে গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় সে এখন জেলহাজতে রয়েছেন।