বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

অধ্যক্ষের আত্মীয় ও অযোগ্য প্রার্থীদের পুনর্বাসনকেন্দ্র ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজ!

আপডেট : ২৪ জুলাই ২০২২, ০১:০৪

দীর্ঘদিন অধ্যক্ষ, তাই প্রভাব বেশি। গভর্নিং বডি পরিবর্তন হয়, কিন্তু তিনি থেকে যান। এমন সুযোগে খুঁজে খুঁজে নিজ আত্মীয়দের চাকরি দিয়েছেন ধানমন্ডির সেন্ট্রাল রোডে অবস্থিত ধানমন্ডি কলেজে। কোনো নিয়োগ বিধি অনুযায়ী হয়েছে। আবার কোনো কোনো নিয়োগ পুরোটাই অনিয়মের মধ্য দিয়ে হয়েছে।

২৮ বছর ধরে অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন শামছুল আলম। এসব অভিযোগ তার বিরুদ্ধেই। যখন এমপিওভুক্তির জন্য মানুষ সর্বস্ব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তখন ২০০৩ সালে নিজের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করতে প্রতিষ্ঠানের এমপিও প্রত্যাহার করে নেন। এই অধ্যক্ষ এখন অবসরে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি খুঁজে খুঁজে চাকরি দিয়েছেন নিজ স্বজনদের—নিজ ভাইয়ের স্ত্রীকে। ভাইয়ের ছেলে, ছেলের স্ত্রীকে। ভাইয়ের মেয়ে, আবার ভাইয়ের জামাতাকে। শ্যালক, শ্যালিকা, শ্যালকের ছেলেকেও। বাদ যাননি কেউ। সবাই এখন এই আইডিয়াল কলেজে চাকরি করছেন। কেউ হয়েছেন শিক্ষক, পিয়নও হয়েছেন কেউ। অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করে শামছুল আলম বলেন, ‘আমি ২৮ বছর ধরে অধ্যক্ষ ছিলাম। কত জন আত্মীয় নিয়োগ দিয়েছি, ১০-১২ জন হবে। তবে যাদের নিয়োগ দিয়েছি তারা যোগ্য।’ এমপিও প্রত্যাহারের বিষয়ে তার বক্তব্য, ‘শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এটা করেছি। কারণ আমাদের আর্থিক সক্ষমতা ছিল। এ কারণে সমস্যা হয়নি।’

সাবেক এই অধ্যক্ষ শামছুল আলমের শ্যালকের ছেলে নূর-আল মারুফ নেওয়াজ। আইসিটি বিভাগের প্রভাষক। অভিযোগ, সন্তোষজনক না হওয়ার কারণে শিক্ষানবিশ সময়ে তাকে প্রদর্শক পদ থেকে ২০০৫ সালে গভর্নিং বডি চাকরীচ্যুত করে। পরে তার আত্মীয় শামছুল আলম পুনরায় অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করে নূর-আল মারুফ নেওয়াজকে পুনরায় যোগদান করার জন্য পত্র ইস্যু করেন। ২০১১ সালে প্রদর্শক পদে যোগদান করেন তিনি। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, নিয়োগ-পদোন্নতি নীতিমালা ভঙ্গ করে ২০১৩ সালে প্রদর্শক থেকে প্রভাষক হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি। সাবেক অধ্যক্ষের ভাইয়ের ছেলে নাজমুল হুদা। তিনি জীববিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক। নাজমুল হুদার স্ত্রী শামীমা সুলতানা বাংলা বিভাগের প্রভাষক। ভাইয়ের মেয়ে জেসমিন বেগম সহকারী লাইব্রেরিয়ান। জেসমিন বেগমের স্বামী জিল্লুর রহমান সহকারী অধ্যাপক।

ভাইয়ের আরেক মেয়ে ইয়াসমিন বেগমও সহকারী লাইব্রেরিয়ান। ইয়াসমিন বেগমের স্বামী আসাদুল হক গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। সাবেক অধ্যক্ষের ভাইয়ের ছেলের স্ত্রী মীর নাসরিন শবনাম জীববিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক। আর ছেলের শ্যালিকা কাজী তাহমিনা মুনমুন আইসিটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। শ্যালক শাহজালাল আছেন অফিস সহকারী হিসেবে। এছাড়া মোবাশ্বের হাসান, নাছিমা হাসিন, শিরিন আক্তার, জাহাঙ্গীর হাসান, রাশেদুল রাজু আহমেদের কেউ আত্মীয়, আবার কেউ নিজ এলাকার। সম্প্রতি সাময়িক বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সাবেক অধ্যক্ষ শামছুল আলমের সময় তার ৩৫ জন আত্মীয়স্বজন শিক্ষক ও ২০ জন কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। তার মধ্যে একাধিক জনের বিষয়ে তদন্ত চলছিল। যখনই তাদের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তখনই তারা আন্দোলনে নেমেছেন। কয়েক জন শিক্ষক বলছেন, ক্যাম্পাসের অস্থিরতার পেছনে সাবেক ঐ অধ্যক্ষ আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে কলকাঠি নাড়ছেন।

এ বিষয়ে শামছুল আলম বলেন, বিষয়টি সত্য নয়। এসব বিষয় জানতে কয়েক জন আত্মীয়ের মোবাইলে ফোন দেওয়া হলেও তারা রিসিভ করেননি। কলেজটির বতর্মান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন বলেন, ‘যারা যে সময় কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে ছিলেন, সবাই কিছু না কিছু আত্মীয়স্বজনকে চাকরি দিয়েছেন। তবে আমি সবে দায়িত্ব নিয়েছি। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানি না।’ কলেজটির গভর্নিং বডির সদস্য আলম তাজ বেগম বলেন, ‘কলেজে নানা অস্থিরতা চলছিল। কলেজের মিটিংয়ে যাই। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ হয় না। তাই আমার কাছে বিস্তারিত কোনো খবরও নেই।’

ইত্তেফাক/ইআ