সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদ খুনের ঘটনায় সন্দেহভাজন তিন জনকে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) তাদের আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর আগে সোমবার রাতেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিলেটের জালালাবাদ থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
এদিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে রেজিস্ট্রার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা দিয়ে সিলেটের জালালাবাদ থানায় একটা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ৩০২ ধারায় এ মামলা করা হয়েছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বি এম আশরাফ উল্লাহ তাহের সাংবাদিকদের জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন বাদী হয়ে সিলেটের জালালাবাদ থানায় সোমবার রাতে মামলা দায়ের করেছেন। বুলবুলের বুকের বামপাশে ছুরিকাঘাতে প্রচুর রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয় বলে মামলায় বলা হয়েছে। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের সবাই বহিরাগত।
বুলবুলের জানাযা সম্পন্ন
এদিকে মঙ্গলবার নিহত বুলবুলের ময়না তদন্ত শেষে বেলা দেড়টার দিকে ওসমানী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তার মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর হলে লাশ নিয়ে তারা বাড়ির উদেশে রওনা হন।
ভিসির সমবেদনা ও পরিবারের পাশে থাকার অঙ্গিকার
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ইত্তেফাককে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে এমন ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ঘটনাটি তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিব। ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হবে। তিনি নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও তাদের ধৈর্য্য ধারনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা নিহত ছাত্র বুলবুলের পরিবারের পাশে থাকবো।
গত সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে 'গাজিকালুর টিলায় বুলবুল আহমেদের রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখে অন্য শিক্ষার্থীরা শাবি প্রশাসনকে খবর দেন। পরে আহত অবস্থায় বুলবুলকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বুলবুলের বাড়ি নরসিংদী জেলায়। তিনি শাবি’র লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বুলবুলের সহপাঠী অমিত ভৌমিক জানান, সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গাজীকালুর টিলায় বুলবুলকে ছুরিকাঘাত করা হয়। তাকে হাসপাতালে আনা হলে পরে সেখানে মারা যান বুলবুল। ছুরিকাঘাতকারীরা ছিনতাইকারী হতে পারে বলে ধারণা অমিতের।
খুনিদের চিহ্নিত করা যায়নি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর আবু হেনা পহিল বলেন, পুলিশ এ ঘটনার তদন্ত করছে। আশা করছি দ্রুত সময়ে খুনিরা গ্রেফতার হবে। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, আহত অবস্থায় বুলবুলকে উদ্ধার করে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে আনা হয়। কিন্তু তার রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় তাকে ওসমানী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করে।
বুলবুল নিহত হওয়ার ঘটনার পর পর শাবি ক্যামপাস উত্তপ্ত হয়ে উঠে। শিক্ষারথীরা প্রতিবাদে গোল চত্তরে মিছিল করে জড়ো হয়। এক পর্যায়ে তারা রাত ১২ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় গেটের কাছে সিলেট-সুনামগঞ সড়ক অবরোধ করে।
এদিকে, বুলবুল হত্যার প্রতিবাদে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে ছাত্রলীগ। রাত সাড়ে ১২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে প্রায় আধঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে তারা। পরে উপাচার্যের আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীরা। এর আগে এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভকারীরা ক্যাম্পাসের ভেতরে এমন ঘটনায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে।
এ সময় 'ক্যাম্পাসে লাশ কেন- প্রশাসন জবাব চাই’, বুলবুল হত্যার বিচার চাই’, ‘আমার ভাই মরলো কেন- প্রশাসন জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। খবর পেয়ে ভিসি অধ্যাপক ফরিদ পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা অকুস্থলে ছুটে যান। পরে খুনিদের দ্রুত গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে তারা প্রায় একঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নেন।
এদিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদ হত্যার ঘটনায় সিলেটে প্রতিবাদ, ক্ষোভ, মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে ঘটনার তীব্র নিন্দা,খুনিদের গেরেফতার ও ক্যামপাসে নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানান।