শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

শৃঙ্খলা ছাড়া উন্নতি সম্ভব নহে

আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২২, ০৪:০১

বিশৃঙ্খল জাতি বিশ্বজগতে কোনো উন্নতি করিতে পারে না। আমাদের শৃঙ্খলা না মানিয়া চলিবার সংস্কৃতি হইতে বাহির হইয়া আসিতে হইবে। আমরা বলি, ডিসিপ্লিন ইজ ফার্স্ট বা শৃঙ্খলাই প্রথম। আসলে ইহা হওয়া উচিত—ডিসিপ্লিন ইজ ফার্স্ট, ডিসিপ্লিন ইজ সেকেন্ড অ্যান্ড ডিসিপ্লিন ইজ লাস্ট। অর্থাৎ শৃঙ্খলাই প্রথম, দ্বিতীয় ও শেষ কথা। জনগণকে অবশ্যই শৃঙ্খলা মানিয়া চলিতে হইবে। আইন যেমনই হউক, তাহা মানিতে হইবে। প্রয়োজনে আইন সংশোধনের দাবি তুলিতে হইবে। তবে যতক্ষণ না তাহা সংশোধিত হয়, ততক্ষণ আমাদের আইনের মধ্যেই থাকিতে হইবে। শুধু প্রশাসন নহে, আইন মানিয়া চলিবার জন্য প্রত্যেক নাগরিককে দায়িত্বশীল হইতে হইবে। আইন না মানিলে দেশে কখনো শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হইবে না।

যে জাতি যত উন্নত, সেই জাতি তত নিয়মশৃঙ্খলা মানিবার ব্যাপারে তৎপর ও আন্তরিক। কিন্তু আমরা যদি এই আপ্তবাক্যগুলি না মানিয়া চলি, তাহা হইলে কী লাভ? বাঙালি জাতি হিসাবে আমরা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে শৃঙ্খলার চর্চা তেমন একটা করি না বলিলেই চলে। বিশৃঙ্খলাকে আমরা আমাদের আদর্শ হিসাবে মানিয়া লইয়াছি অনেক ক্ষেত্রে। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরাইয়া আনিবার কথা বলা হইতেছে বহু দিন ধরিয়া। কিন্তু কে শোনে কাহার কথা! সংশ্লিষ্ট কতৃ‌র্পক্ষ যেমন অনেক কিছু দেখিয়া না দেখিবার ভান করিতেছে, তেমনই সাধারণ নাগরিকগণও যে যাহার মতো চলাচল করিতেছে। ফুটওভারব্রিজ থাকিলেও তাহা ব্যবহার করিতেছে না। হাত উঁচু করিয়া বা দেখাইয়া রাস্তা পার হইতেছে। চালক হইতে শুরু করিয়া পথচারী পর্যন্ত সকলের মধ্যে শৃঙ্খলাবোধ জাগ্রত করিতে হইবে। ইহা ছাড়া সড়কে মৃত্যুর মিছিল বন্ধ করা যাইবে না।

পবিত্র ঈদুল ফিতরের ন্যায় এইবারের ঈদুল আজহায়ও দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় অনেকের প্রাণহানি ঘটিয়াছে। এই দুই ঈদের ছুটির সময় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গিয়াছেন যথাক্রমে আড়াই ও চার শতাধিক মানুষ। অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করিয়াছেন। এই দুর্ঘটনার পিছনে বড় কারণটি হইল বিশৃঙ্খলা। চালকের বেপরোয়া মনোভাব, যত্রতত্র ওভারটেকিং, লাইসেন্সহীনতা, লাইসেন্স প্রদানে দীর্ঘসূত্রতা, গাড়ির ফিটনেসের অভাব, রাস্তা সংস্কারের অভাব, প্রয়োজনীয় সাইন-সিম্বল না থাকা, সাইন-সিম্বল থাকিলেও তাহা না মানা, রোড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অভাব ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে নৈরাজ্য বিদ্যমান। রাস্তার দুই পার্শ্বে ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন অপরিকল্পিত ও অবৈধ স্থাপনা ও বাজারঘাট যেইভাবে বাড়িতেছে, তাহাতেও প্রমাণিত হয়, আমরা কতটা বিশৃঙ্খল জাতি।

আমরা কি সর্বত্র ডিসিপ্লিন বা শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করিতে পারিব না? দেখিয়াশুনিয়া মনে হইতেছে, এই কাজ করা এত সহজ নহে। ইহা গোটা উপমহাদেশের একটি বড় সমস্যা। এতদঞ্চলে মোগল, ব্রিটিশসহ বিভিন্ন বিদেশি শক্তি শাসন করিয়াছে দীর্ঘদিন ধরিয়া। কিন্তু তাহাদের অধিকাংশেরই মূল উদ্দেশ্য ছিল নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করা। এই সমৃদ্ধময় ভূখণ্ড হইতে তাহারা মূল্যবান সম্পদ লুটপাট করিয়া পাচার করিয়াছে। তাহাদের সুশাসন প্রতিষ্ঠা করিবার বিষয়টি ছিল গৌণ। ফলে এই সকল দেশ এখনো বিশৃঙ্খল রহিয়া গিয়াছে। বিদেশি শোষণ-শাসনের বিরুদ্ধে আমরা বারংবার বিদ্রোহ করিয়াছি। ইহাতেও শান্তি, স্হিতি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ব্যাহত হইয়াছে। ইহারই রেশ এখনো চলিতেছে বলিলে অত্যুক্তি হইবে না। সড়ক তাহার সামান্য নমুনা মাত্র। আসলে আমরা সার্বিক বিশৃঙ্খলার কথাই বলিতেছি। নিয়মকানুন ও শৃঙ্খলা মানিয়া চলিবার ক্ষেত্রে আমাদের সকলকে আরো সতর্ক ও সচেতন হইতে হইবে। এই সচেতনতা ছাড়া আমরা উন্নতির সোপানে পৌঁছাইতে পারিব না।

ইত্তেফাক/ইআ