বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

খোলা আকাশের নিচে ২০ হাজার মেট্রিক টন সার 

আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২২, ২০:২০

দুই মাস পর শুরু হবে বোরো চাষের মৌসুম। এবারও চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত নন-ইউরিয়া সার আমদানি করেছে বিএডিসি। সৌদি আরব, কানাডা, বেলারুশ ও মরক্কো থেকে এসব সার আমদানি করা হয়। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিএডিসি’র গুদামে এসব সারের ঠাঁই মেলেনি। ফলে জেলার বন্দর নগরী আশুগঞ্জ উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে খোলা আকাশের নিচে প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন নন-ইউরিয়া সার মজুদ রাখা হয়েছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকার বিএডিসি’র মাধ্যমে বিগত ৫-৭ বছর আগে থেকে বার্ষিক চাহিদা মোতাবেক সার বিদেশ থেকে আমদানি করে আসছে। অতিরিক্ত আমদানির কারণে সংশ্লিষ্ট গুদাম গুলিতে ধারণ ক্ষমতার দুই থেকে তিনগুণ সার রাখা হয়েছে। এরপরও বিএডিসি’র আওতাধীন গুদামগুলোতে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় এসব নন-ইউরিয়া সার খোলা আকাশের নিচে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে ৬টি স্থানে অন্তত ৪ লাখ বস্তা সার খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়েছে। ফলে খোলা আকাশের নিচে থেকে এসব সারের গুনগত মান ঠিক থাকবে কি না এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
 
বিএডিসি’র কুমিল্লা অঞ্চলের যুগ্ম পরিচালক (সার) মো. মুজিবুর রহমান জানান, সরকারি সিদ্ধান্তে চাহিদা মোতাবেক সার মজুদ করা হয়। আপদকালীন সময় সংকট নিরসনের জন্যই মজুদ বাড়ানো হয়েছে। তবে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখার কারণে নন ইউরিয়া সারের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে না বলে তিনি দাবী করেন। এছাড়া আশুগঞ্জে খোলা আকাশের নিচে রাখা নন ইউরিয়া সারের লটসমূহ সরেজমিনে পরিদর্শন ও যাচাই করে তিনি প্রতিবেদন দিয়েছেন। বিএডিসির ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপ পরিচালক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান তালুকদার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের অতিরিক্ত উপ পরিচালক (শস্য) মুনসী তোফায়েল হোসেন, আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার অরবিন্দ বিশ্বাস, আশুগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার নয়ন কুমার সাহা, বিএডিসি ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক (সার) মাকসুদ আলম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সার সমিতির (বিএফএ) সভাপতি মো. জালাল মিয়া, বিএফএ এর সদস্য ও পরিবহন ঠিকাদার মো. নাসির মিয়া ও মোঃ রাসেল মিয়া তদন্তকালে উপস্থিত থেকে উক্ত প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গুদামে সংকুলান না হওয়ায় যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে সারের বস্তা স্তূপাকারে খোলা আকাশের নিচে রাখতে হচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয় ও বিএডিসির সার ব্যবস্থাপনার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে অবগত রয়েছেন। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, লটগুলি ভূমির লেভেল থেকে ২/৩ ফুট উঁচুতে রাখা হয়েছে- যাতে সারের বস্তা কোন প্রকার পানির স্পর্শে না আসে। এছাড়া বৃষ্টির পানি যাতে আটকাতে না পারে সেজন্য ২/৩ স্তরের ত্রিপল দিয়ে ঢাকা হয়েছে। ফলে বিশেষ সতর্কতার কারণে সারের গুনগত মান নষ্ট হবার সম্ভাবনা নেই। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রতিমাসের চাহিদা অনুযায়ী ডিলারদের মাধ্যমে চাষি পর্যায়ে সার সরবরাহ করা হবে। বিএডিসির গুদাম খালি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাহিরে রাখা সার গুদামে রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিএফএ এর সদস্য ও পরিবহন ঠিকাদার মো. নাসির মিয়া জানান, খোলা আকাশের নিচে সার রেখে ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হয়। বিএডিসি’র গুদামে ঠাঁই না থাকায় তারা আমদানিকৃত সার বুঝে নিতে পারছে না। 

তিনি বলেন, ‘সারের মালিক বিএডিসি। আমরা কেবল পরিবহনের দায়িত্বে নিয়োজিত। যদিও যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে সারের বস্তা স্তূপাকারে খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়েছে। আমরা দ্রুত সরবরাহ করতে পারলেই বাঁচি।’
 
আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার অরবিন্দ বিশ্বাস বলেন, ‘সার খোলা আকাশের নিচে রাখার বিষয়টি জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবগত রয়েছেন। খোলা আকাশের নিচে যেন সার রাখতে আমরা যথাযথ পদ্ধতি গ্রহণের জন্য বলেছি।’ 

তিনি জানান, গোডাউন নির্মাণের কাজের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। গোডাউন নির্মাণ হয়ে গেলে এ সমস্যা থাকবে না। তবে গোডাউন নির্মাণ শেষ হতে অন্তত তিন বছর সময় লাগতে পারে বলে তিনি জানান।

 

ইত্তেফাক/এসজেড