শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

খাল-বিলে পানি নেই, রাজশাহীতে পাট নিয়ে বিপাকে চাষিরা

আপডেট : ২৯ জুলাই ২০২২, ১৭:০৮

ভরা বর্ষায় প্রতিবছরই রাজশাহীতে কম-বেশি বৃষ্টি হয়। কিন্তু এবার রাজশাহীতে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে প্রকৃতি। আষাঢ় মাস এমনকি শ্রাবণ মাসের প্রায় অর্ধেক শেষ হতে চললেও তপ্ত রোদে পুড়ছে পুরো রাজশাহী অঞ্চল।

স্থানীয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, পুরো বর্ষাকাল (আষাঢ় ও শ্রাবণ মাস) জুড়ে রাজশাহীতে খুব বেশি বৃষ্টির দেখা মেলেনি। ফলে রাজশাহী অঞ্চলে বর্ষাকালেও খালবিলে নেই পানি। এ কারণে রাজশাহীতে পাট কেটে তা জাগ দেওয়া নিয়ে এই অঞ্চলের কৃষকরা পড়েছেন চরম বিপাকে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিগগিরই বৃষ্টি না হলে বাম্পার ফলন হওয়া সত্ত্বেও শত শত হেক্টর জমির পাট জমিতেই নষ্ট হয়ে যাবে। জাগ (পচানো)  দেওয়ার পানি না থাকায় কৃষকেরা পরিপূর্ণ পাট কাটতে সাহস পাচ্ছে না। পাট কাটতে ও জাগ দিতে না পারলে চাষিদের চরম লোকসান হবে।

 রাজশাহী অঞ্চলজুড়ে বর্ষাকালেও খালবিলে পানি নেই। পাট কেটে তা জাগ দেওয়া নিয়ে এই অঞ্চলের কৃষকরা পড়েছেন চরম বিপাকে। ছবি : আজাহার উদ্দিন

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ সূত্র বলছে, চলতি বর্ষাকালে (পুরো আষাঢ় মাস ও শ্রাবণ মাসের প্রায় অর্ধেক সময়ে) রাজশাহীতে  মাত্র ১০ দিন বৃষ্টি হয়েছে। যা গত বছরের থেকে প্রায় ৩৫০ মিলিমিটার কম। গতবছর আষাঢ় মাসে বৃষ্টি হয়েছিলো ২৫ দিন। বৃষ্টিহীন ছিল মাত্র পাঁচদিন। অথচ এবার আষাঢ় মাসে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৮ দিন। বৃষ্টিহীন ছিল ২২ দিন। গতবছর আষাঢ় মাসে বৃষ্টি হয়েছিল ৩৫৪ মিলিমিটার। চলতি বছর আষাঢ় মাসে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৩৯ দশমিক ২ মিলিমিটার। তবে সেটাও বিক্ষিপ্তভাবে কিছু সময়ের জন্য। এই ৮ দিনের মধ্যে ১৮ জুন সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে ২০ দশমিক ৯ মিলিমিটার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে ২০ জুন ৯ দশমিক ১ মিলিমিটার।  এছাড়া ১৭ জুন ও ২১ জুন দুই মিলিমিটার, ২৪ জুন ০ দশমিক ৪ মিলিমিটার, ৩০ জুন ০ দশমিক ২ মিলিমিটার এবং ৩ জুলাই ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে গত বছরের চেয়ে এক আষাঢ় মাসেই বৃষ্টি কমেছে ৩১৪ দশমিক ৯৮ মিলিমিটার।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র পর্যবেক্ষক গাউসুজ্জামান জানান, রাজশাহীতে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার বৃষ্টিপাত অনেক কমেছে। এটা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হচ্ছে। কেন না রাজশাহীতে যে পরিমাণ গাছ লাগানো হচ্ছে তার চেয়ে কাটা হচ্ছে বেশি। আবার নদ-নদীর নাব্যতাও কমেছে। সবমিলে জলবায়ুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা বাড়ছে।

রাজশাহীর পাট চাষিরা বলছেন, পুরো আষাঢ় মাস এবং অর্ধেক শ্রাবণ জুড়ে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিপাত হয়নি। আবার নদী থেকেও রাজশাহীর দুর্গাপুর, পুঠিয়া, তানোর, মোহনপুর, বাগমারা, পবা, চারঘাট, বাঘা ও গোদাগাড়ী উপজেলার খালবিলে পানি প্রবেশ করতে পারেনি। ফলে এসব অঞ্চলের খালবিল প্রায় শুকনো। যার ফলে পাট জাগ দিতে পারছেন না চাষিরা।

 রাজশাহী অঞ্চলজুড়ে বর্ষাকালেও খালবিলে পানি নেই। পাট কেটে তা জাগ দেওয়া নিয়ে এই অঞ্চলের কৃষকরা পড়েছেন চরম বিপাকে। ছবি : আজাহার উদ্দিন

পবা উপজেলার দুয়ারি এলাকার পাটচাষি আকবর আলী বলেন, ‘অন্যান্য বছর এই সময়  নদীতে পর্যাপ্ত পানি থাকে। কিন্তু এবার বৃষ্টির দেখা না পাওয়ায় এই নদীতে নেই পানি। ফলে অধিকাংশ চাষিরা পাট কাটতে পারছেন না। অনেকে পাট কাটলেও জমিতেই স্তূপ করে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার অনেকেই সামান্য পানিতে কচুরি পানা সরিয়ে তার মধ্যেই পাট জাগ দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন।’

শুধু পবা উপজেলার বিভিন্ন এলাকাতেই এমন সমস্যা তা নয়; বরং রাজশাহী অঞ্চলজুড়ে এই অবস্থা বিরাজ করছে। ফলে চাষিরা পাট জাগ দেওয়া নিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ১৮ হাজার ১৯ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছিল। আর ২০২০ সালে ১৪ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে, ২০১৯ সালে ১৩ হাজার ৮৪৬ হেক্টর জমিতে পাটের চাষাবাদ হয়েছিল। ভাল দাম পাওয়ায়  প্রতিবছরই পাট চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ১৮ হাজার ৮৮২ হেক্টর হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে।

 

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মোজদার হোসেন বলেন, ‘চাষিরা পাটের উপযুক্ত দাম পাওয়ায় রাজশাহী অঞ্চলে দিন দিন পাটচাষ বাড়ছে। জুলাই মাসের প্রথম দিক থেকে জেলার সর্বত্র পাট কাটা শুরু হয়েছে। যা পর্যায়ক্রমে আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত পাট কাটা চলবে। তবে এবার বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ায় জেলার সর্বত্র ডোবা-নালা,খাল-বিল ও জলাশয়ে পানি না থাকায় পাট জাগ দেওয়া নিয়ে বপাকে পড়েছেন কৃষকরা। অনেক কৃষক জমি থেকে পাট কেটে ভ্যান ভাড়া করে ৪/৫ কিলোমিটার দূরে নদীতে ও দূরবর্তী বিভিন্ন জলাশয়ে নিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন। যা ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য।’ 

ইত্তেফাক/ইউবি