শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

রাষ্ট্রযন্ত্রকে উপেক্ষা করিবার সুযোগ নাই

আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২২, ০৩:০৪

ইংরেজি স্টেটক্রাফট শব্দটির বাংলা আভিধানিক অর্থ শাসনকার্য পরিচালনার নৈপুণ্য। কেমব্রিজ ডিকশনারিতে স্টেটক্রাফট শব্দের ব্যাখ্যায় বলা হইয়াছে, ‘দি স্কিল অব গভার্নিং এ কান্ট্রি, অর্থাত্ ‘একটি দেশ পরিচালনার দক্ষতা’। একটি দেশ পরিচালনা করিতে হইলে এই দক্ষতা, এই নৈপুণ্য কমবেশি সকল সরকারকেই অনুসরণ করিতে হয়। সেই ক্ষেত্রে সরকার পরিচালনায় কে বা কাহারা রহিয়াছেন তাহা বড় কথা নহে। রাষ্ট্রের সংবিধান থাকে, রাষ্ট্রের আইন থাকে, রাষ্ট্র একটি সিস্টেমের মধ্য দিয়া চলে। সেই সংবিধানের, সেই আইনের যাহারা ব্যত্যয় ঘটাইয়া থাকেন, তাহারা অনেক সময়েই বুঝিতে পারেন না যে একসময় না একসময় তাহাকে জবাবদিহির মুখোমুখি হইতে হইবে। আমরা যদি বিশ্লেষণ করি, তাহা হইলে দেখিতে পাইব, উন্নয়নশীল অথবা উন্নত যে কোনো দেশই হোক, শেষ পর্যন্ত অনিয়মকারীকে তথা ক্ষমতার অপব্যবহারকারীকে ধরা পড়িতেই হয়। কোথাও মুক্তির কোনো ব্যবস্হা নাই। দুঃখের বিষয়, প্রশাসন যাহাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাহারা ক্ষমতার দাপটে অনেক সময় মনে করিয়া থাকে, কী আর হইবে? আবার কেহ কেহ মনে করেন, এইখানে আইন নাই, কানুন নাই, সকল কিছুই দুর্নীতিগ্রস্ত সুতরাং সকল কিছু করা যাইবে। তাহাই যদি হইবে, তাহা হইলে ধরা খায় কী করিয়া? বিশ্বব্যাপী উদাহরণ রহিয়াছে, বহু দেশে ক্ষমতাশালীরা রাষ্ট্রের নিয়মকানুন উপেক্ষা করিয়া অবশেষে ফাঁদে পড়িয়াছেন। আমরা দেখিতে পাইতেছি, এমন কোনো দিন নাই কোথাও না কোথাও, কোনো না কোনো দেশে কেউ না কেউ রাষ্ট্রযন্ত্রের নর্ম ভঙ্গ করিয়া ফাঁদে পড়িতেছেন না। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেশত্যাগ করিয়াও রেহাই পাওয়া যাইতেছেন না।

সুতরাং অধিক ক্ষমতা ব্যবহার করিতে নাই। ইহা একটি বৈশ্বিক শিক্ষা। আইরিশ রাষ্ট্রনেতা, অর্থনীতিবিদ ও দার্শনিক এডমুন্ড বার্ক যথাযথভাবেই বলিয়াছেন, ‘ক্ষমতা যত বড় তাহা অপব্যবহারের মতো বিপদের সম্ভাবনাও তত বেশি। অদ্য যে নিজেকে সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত মনে করিয়া যথেচ্ছাচার করিতেছে, সে হয়তো জানেই না তাহার জন্য আগামীকল্য বিপদ অপেক্ষা করিতেছে। অতএব রাষ্ট্রকে কখনো খাটো করিয়া দেখিতে নাই। ইহাও আমরা স্মরণে রাখি যে ক্ষমতা মানুষকে অন্ধ করিয়া দেয়। ক্ষমতা অসীম হইতে চাহে। তাহার বহু বর্তমান ও অতীত উদাহরণ আছে। আদিকালে নুহ নবির প্রপৌত্র এবং কুশের পুত্র নমরুদ ছিলেন এক মহাশক্তিধর ব্যক্তি, যিনি খোদ সৃষ্টিকর্তাকেই বধ করিতে চাহিয়াছিলেন। তাহার নামোল্লেখ না থাকিলেও পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ২৫৮ নম্বর আয়াতে বলা হইয়াছে, ‘তুমি কি সেই ব্যক্তির কথা ভাবিয়া দেখো নাই, যে ইব্রাহিমের সঙ্গে তর্ক করিয়াছিল, যেহেতু আল্লাহ তাহাকে রাজ্য দিয়াছিল? ইব্রাহিম বলিলেন, আমার প্রতিপালক তিনি, যিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। সে উত্তরে বলিল, আমিও তো জীবন দান করি এবং মৃত্যু ঘটাই!’ বর্তমান যুগে উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা হইতে শুরু করিয়া আফ্রিকা, এশিয়া, উপমহাদেশ সর্বত্রই ক্ষমতার দম্ভে ‘চক্ষুতে ছানি পড়া’ ব্যক্তিরা নিয়মিতই ফাঁদে আটকা পড়িতেছেন।

নিঃসন্দেহে বলা যায়, এই দম্ভ ও অন্ধত্বের উত্স হইল ক্ষমতা। কিন্তু কেহই মনে রাখে না, রাষ্ট্র এমনই একটি সত্তা যাহাকে ফাঁকি দেওয়া যায় না। সুতরাং রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের প্রশাসন ও অন্যান্য মেশিনারিজকে খাটো করিয়া দেখিবার সুযোগ নাই। সুতরাং সাধু সাবধান। 

ইত্তেফাক/জেডএইচডি