যে কোনো পরিস্থিতিতে মানুষের কিছু সান্ত্বনা থাকে। প্রবাদবাক্যে বলা হয় টানেলের শেষ মাথায় আলো। অর্থাৎ কোনো বিপজ্জনক পরিস্থিতিকে টানেলের মধ্যে ভাবিয়া সামনের সময়কে আশা জাগানিয়া হিসাবে আলেতা বলা হইয়া থাকে। কিন্তু বর্তমান সময়ে শুধু বাংলাদেশ নহে, গোটা পৃথিবীরই কেহ কোনো আলোর সন্ধান দিতে পারিতেছে না।
২০১৯ সালে শেষে বিশ্বব্যাপী যে কোভিড দেখা দিয়াছিল তাহার রেশ এখনো রহিয়াছে। কিছু কিছু দেশে প্রকোপ বেশ খানিকটা কমিলেও এখনো বিশ্বে পাঁচ লক্ষাধিক রোগী কোভিড-১৯ সংক্রমণে ভুগিতেছে। এই মুহূর্তে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান মিলাইয়া কোভিড রোগীর সংখ্যা তিন লক্ষাধিক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান আশঙ্কা করিতেছে, সামনের শীত মৌসুমে এই রোগের প্রকোপ বাড়িতে পারে। ইহার মধ্যেই রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়িয়াছে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি ও খাদ্যনিরাপত্তায়। এই যুদ্ধ অচিরেই থামিবে—এমন কথা কেহ বলিতে পারিতেছে না। বরং জ্বালানি, খাদ্য, পণ্যমূল্য উত্তরোত্তর বাড়িতেছে। দেখা দিয়াছে মূল্যস্ফীতি।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস ছড়াইয়া পড়িলে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হইয়া যায়। বিশ্বনেতারা তখন প্রাথমিকভাবে ধারণা করিয়াছিলেন, উন্নত বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৯ শতাংশ কমিবে। কিন্তু বৎসর ঘুরিয়া আসিতে দেখা গিয়াছে তাহা ৪ দশমিক ৫ শতাংশ নামিয়া গিয়াছে। অন্যদিকে দরিদ্র দেশগুলির নুন আনিতে পান্তা ফুরায় অবস্থা তৈরি হইয়াছে, যাহা এখনো বিদ্যমান। এই পরিস্থিতি হইতে বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধার কবে হইবে? পরিস্থিতি সামাল দিতে যখন বিশ্বনেতা প্রস্তুতি লইতেছিলেন, তখনই রাশিয়া ইউক্রেনের উপর হামলা করিয়া বসে। তাহাও ধীরে ধীরে একটু আশা জাগাইতে শুরু করিয়াছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে যুদ্ধ শুরুর পর হইতে ইউক্রেনের খাদ্য রপ্তানি, বিশেষ করিয়া গম, ভুট্টা ও ডাল রপ্তানি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হইয়া গিয়াছিল। কিন্তু গত মাসে তুরস্কের রাজধানী আংকারায় দুই পক্ষের আলোচনার মধ্য দিয়া ১ আগস্ট ইউক্রেনের ওডেসা বন্দর হইতে প্রথম ২৬ হাজার টন ভুট্টা লইয়া ইউক্রেনের জাহাজ বন্দর ত্যাগ করে। ইহা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য হইলেও এই শুরু হওয়াটাকে বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক মহলে ইতিবাচক বলিয়াই গ্রহণ করিয়াছে। ইহার মধ্যেই আবার তাইওয়ান বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র চীন উত্তেজনা সকল দেশকেই ভাবাইয়া তুলিয়াছে।
অন্যদিকে কোভিডের পর মাঙ্কি পক্স বিশ্বের স্বাস্থ্য পরিস্থিতির জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হইয়া দাঁড়াইয়াছে। প্রকৃতিও বৈরী হইয়া উঠিয়াছে দ্রুত গতিতে, যাহা বিশ্বের খাদ্য উৎপাদনকে হুমকির মধ্যে ফেলিয়া দিয়াছে। একদিকে দাবদাহ, অন্যদিকে ইউরোপ ও আফ্রিকার খরায় ব্যাপকভাবে খাদ্য উৎপাদন কমিবে বলিয়া আশঙ্কা করা হইতেছে। কোথাও অতিবর্ষণ এতটাই তীব্র আকার লইয়াছে যে প্রাণঘাতী হইয়া উঠিয়াছে। ফলে সর্বক্ষেত্রেই একটি নেতিবাচক ফলাফলের ইঙ্গিত পাইতেছি আমরা। তবু মানুষ আশা লইয়া বাঁচে। ভবিষ্যতে সকল কিছু স্বাভাবিক হইয়া উঠিবে, মানুষ অনাগত দিনে নূতন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াইয়া লইবে। মানুষ সর্বদাই প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করিয়া টিকিয়া রহিয়াছে। আধুনিক যুগে আসিয়া অর্থনৈতিক মন্দা একাধিক বার মানুষ দেখিয়াছে। সেই অবস্থা হইতে আবার উত্তরণও ঘটিয়াছে। বর্তমান পরিস্থিতি যত মন্দের দিকেই যাক না কেন, ইহা হইতেও মানুষ উত্তরণ ঘটাইবে বলিয়া আমরা আশা রাখি।