শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বঙ্গমাতা: তৃতীয় বিশ্বের এলিনর রুজেভেল্ট হলেও তাঁর অবদান আরও ব্যাপক 

আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০২২, ২৩:৪৯

আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী, মহীয়সী নারী, বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে সকল লড়াই-আন্দোলন-সংগ্রামের নেপথ্যের প্রেরণাদাত্রী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯২ তম জন্মবার্ষিকী।

পৃথিবীর সকল বিখ্যাত রাজনীতিবিদের জীবনে তাদের স্ত্রী বা স্বামীর একটা মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব থাকে। রাজনীতিবিদগণের সফলতার পেছনে তাদের জীবনসঙ্গী বা সঙ্গিনীর ইতিবাচক মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। তৎকালীন ফরিদপুরের টুঙ্গীপাড়ার সন্তান শেখ মুজিব বাঙালীর দীর্ঘ মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে শুধু বাঙালী জাতির পিতা আর বাংলাদেশের স্রষ্টাই হননি, তিনি হয়ে উঠেছিলেন একজন বিশ্ববরেণ্য রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রনায়ক। এর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছিলেন তারই সহধর্মিণী ও বাঙালীর মুক্তি সংগ্রামের সহযোদ্ধা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ।

এই মহীয়সী নারী ১৯৩০ সালে টুঙ্গীপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তিনি তার মা-বাবা দুজনকেই হারান। মাত্র আট বছর বয়সে ১৯৩৮ সালে শেখ মুজিবের সাথে তার বিয়ে হয়। বঙ্গবন্ধুর ছাত্ররাজনীতি, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামসহ তার সমগ্র রাজনৈতিক জীবনে ছায়ার মতো অনুসরণ করে তার প্রতিটি পদক্ষেপে অফুরান প্রেরণার উৎস ছিলেন বঙ্গমাতা।

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের সাথে পশ্চিমা বিশ্বের এ যাবত কালের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও প্রতিভাবান নারী এলিনর রুজেভেল্টের অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। এলিনর রুজেভেল্ট যুক্তরাষ্ট্রের চারবার নির্বাচিত, সবচেয়ে দীর্ঘকালীন সময়ের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজেভেল্টের স্ত্রী। শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব আর এলিনার রুজভেল্ট- দুজনেই খুব শৈশবে তাদের বাবা-মাকে হারিয়েছিলেন, দুজনেই তাদের চাচাতো ভাইকে বিয়ে করেছিলেন আর দুজনেই তাদের স্বামীর রাজনীতিতে অসামান্য অবদান রাখার পাশাপাশি তাদের দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছিলেন।

এলিনর রুজেভেল্ট তাঁর স্বামীর ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজেভেল্টের পুরো রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গঠনে বিশেষ ভুমিকা রাখেন। ১৯০৫ সালে তাদের বিয়ের পর তাঁর অনুপ্রেরণাতেই ফ্রাঙ্কলিন রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তাঁর অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতার কারণেই ১৯১০ সালে ফ্রাঙ্কলিন নিউ ইয়র্কের সিনেটর নির্বাচিত হন। ১৯২১ সালে ফ্রাঙ্কলিন পারালাইসিস সহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়ে সম্পূর্ণভাবে পঙ্গু হয়ে যান। এলিনরের সহায়তা আর অনুপ্রেরনার  কারণেই অসুস্থ্য শরীর নিয়েই ফ্রাঙ্কলিন ১৯২৮ সালে নিউ ইয়র্কের গভর্নর নির্বাচিত হন। তাঁর সার্বিক সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণাতেই পক্ষাঘাতগ্রস্থ স্বামী ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজেভেল্ট যুক্তরাষ্ট্রে চার বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া সহ বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে যিনি ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাষ্ট্রনায়ক।

বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতায় তরুণ শেখ মুজিব একজন প্রতিভাবান ছাত্রনেতা থেকে বাঙালীর মুক্তি সংগ্রামের একক নেতায় পরিণত হন। শেখ মুজিব একজন সম্ভাবনাময় বিপ্লবী ছাত্রনেতা থেকে রাজনৈতিক সংগঠক, রাজনৈতিক সংগঠক থেকে ভাষা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী নেতা, ভাষা সংগ্রামের নেতা থেকে স্বাধিকার আন্দোলনের নেতা, তরুণ নেতা হিসেবে জাতির প্রয়োজনে মন্ত্রিত্ব গ্রহণ, আবার মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দলীয় সাংগঠনিক দায়িত্ব গ্রহণ, বাঙালীর মুক্তি সংগ্রামের বৃহৎ ক্যানভাসে মুল নেতৃত্বে আরোহণ, বাঙালী জাতির মুক্তির ম্যানিফেস্টো ছয় দফা প্রণয়ন ও ঘোষণা, তাঁর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন, স্বাধীন, সার্বভৌম ও স্বনির্ভর বাংলাদেশ গঠন – একটি জাতির এই সকল অর্জনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সবচেয়ে বেশী সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন তাঁর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।

বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব আর এলিনর রুজেভেল্টের মধ্যে অনেক সাদৃশ্য থাকলেও তাদের দুজনের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের সৌভাগ্য হয়েছিল একটা রাষ্ট্রের স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ অবদান রাখার, সেই সৌভাগ্য এলিনর রুজেভেল্টের হয়নি। কারণ এলিনরের জন্মের ১০৮ বছর আগেই আমেরিকা স্বাধীনতা লাভ করেছিল। আর ফজিলাতুন্নেছা মুজিব একটি রাষ্ট্রের জন্মের সাথে এমনভাবে যুক্ত ছিলেন, বলা যায় তাঁর বাড়ীতেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম। মুক্তি সংগ্রামের শুরু থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত তিনি যদি একটুও আপোষ করতেন, তাহলে বাংলাদেশের ইতিহাস অন্যরকম হতে পারতো। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান নাও পেতে পারতো। পৃথিবীর আর কোনো রাষ্ট্রনায়ক বা রাজনীতিবিদের স্ত্রীর এরকম ভুমিকা খুজে পাওয়া যায় নি ।

শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব এক সংগ্রামী ও মহীয়সী নারীর প্রতিভূ। তিনি অসাধারণ মেধা, অসীম সাহস, দৃঢ় মনোবল, সর্বংসহা ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ছিলেন। প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও তিনি কখনো মনোবল হারাতেন না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বাঙালীর মুক্তি সংগ্রামের একটি দীর্ঘ সময় কারাগারে ছিলেন। ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত বহুবার তিনি রাজবন্দী হিসেবে কারাগারে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে ঐ দুঃসময়ে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব একদিকে যেমন আর্থিক সঙ্কট সত্ত্বেও ইস্পাত কঠিন মনোবল নিয়ে সন্তানদের পড়াশোনা, লালনপালনসহ সংসারের সকল দায়িত্ব একাই পালন করছিলেন, অন্যদিকে কারাবন্দী বঙ্গবন্ধুকে প্রেরণা ও মনস্তাত্ত্বিক শক্তি যোগাতেন, দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা জানিয়ে দিতেন এবং মুক্তিসংগ্রাম চালিয়ে নেওয়ার জন্য তাদের অনুপ্রেরণা যোগাতেন। বঙ্গবন্ধু অধিকাংশ সময় জেলখানায় অবরুদ্ধ থাকলেও বঙ্গমাতা সেই সময়ে আওয়ামী লীগ তথা বাঙালী জাতির অভিভাবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।

বাঙালীর মুক্তি সংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ টার্নিং পয়েন্ট ছিল ছয় দফা আন্দোলন, যাকে ইতিহাসে বাঙালীর ম্যাগনাকার্টা বা মুক্তির সনদ আবার বাঙালীর মুক্তি সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতার ইশতেহারও বলা হয়। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে ছয় দফা আন্দোলনকে সফল করার পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। বঙ্গবন্ধু ছয় দফাকে বাঙালীর দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সারাদেশ চষে বেড়িয়েছেন। তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দেয়া হয়েছে। এক জেলায় তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে নেয়ার পর আদালত থেকে জামিন নিয়ে আরেক জেলায় যেতেন। সেখানেও তাকে নতুন মামলায় গ্রেফতার করা হতো। সেই সময়ে বঙ্গবন্ধুকে মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে আটবার কারাগারে নেয়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ছয় দফা আন্দোলন দমাতে পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠী ক্রমান্বয়ে নির্যাতনের মাত্রা বাড়াতে লাগলো। শীর্ষ নেতাদের একের পর এক গ্রেফতার করতে লাগলো। তখন আন্দোলনে কার্যত নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন বঙ্গমাতা। দলের পক্ষে তিনিই সকল নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। দলীয় নেতা-কর্মী, ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমিক নেতৃবৃন্দকে নিয়ে গোপনে বৈঠক করতেন এবং যে কোনো মূল্যে আন্দোলনকে সফল করার নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। সেই উত্তাল সময়ে যিনিই দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হতেন, পাকিস্তানী গোষ্ঠী তাকেই গ্রেফতার করতো। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাঙালী জাতির স্বার্থে সেদিন তিনি অসীম সাহসিকতা নিয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে দলের হাল ধরেছিলেন এবং আন্দোলন চালিয়ে নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধু ও শীর্ষ নেতাদের অবর্তমানে তিনিই ছয় দফার আন্দোলনকে একটি সফল পরিণতিতে নিয়ে গিয়েছিলেন। পাকিস্তানী সামরিক-বেসামরিক নানা সূত্র বিভিন্ন আকর্ষণীয় প্রস্তাব দিয়ে তাকে আন্দোলন থেকে সরে আসার অনুরোধ করেছিল। তিনি সেসব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। সেই ক্রান্তিকালে আমাদের মা- বঙ্গমাতা এমন দেশপ্রেমিক ও সাহসিকতাপূর্ণ ভূমিকা গ্রহন না করলে ছয় দফা সফল হতো না। আর ছয় দফা সফল না হলে বঙ্গবন্ধু সূচিত বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম যৌক্তিক পরিণতির দিকে যেতে পারতো না।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় যখন বঙ্গবন্ধুকে প্রহসনমূলক বিচারের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড অথবা তাকে চিরদিনের জন্য রাজনীতি থেকে বিদায়ের নীল নকশা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে তাকে ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তখন পাকিস্তানী সামরিক সরকার বঙ্গমাতার সাথে আপোষ করার জন্য নানা প্রস্তাব দিয়েছিল। তিনি সেদিন তাদের সকল প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে গণআন্দোলনের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। পারিবারিক স্বার্থ ও নিরাপত্তাকে জলাঞ্জলি দিয়ে বাঙালি জাতির মুক্তির স্বার্থে বঙ্গমাতা সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেদিন তিনি সেই সিদ্ধান্ত না নিলে বাংলাদেশের ইতিহাস আজ অন্যরকম হতো।

বঙ্গবন্ধুর ‘স্বাধীনতার ডাক’ অর্থাৎ ৭ই মার্চের ভাষণের আগ মুহূর্তে বঙ্গমাতাই জাতির পিতাকে চূড়ান্ত অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী কর্তৃক গৃহবন্দী অবস্থায় পাকিস্তানে কারাবন্দী স্বামীর জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে গভীর অনিশ্চয়তা ও শঙ্কা সত্ত্বেও তিনি সীমাহীন ধৈর্য্য, অসীম সাহস ও অসাধারণ বিচক্ষণতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বাঙালীর মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের অনন্য অবদান চির অম্লান হয়ে থাকবে। স্বাধীনতার পর এই মহীয়সী নারী যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখেন। তিনি আত্মত্যাগী, লাঞ্ছিত মা-বোনদের চিকিৎসা সেবা প্রদান, ব্যক্তিগতভাবে তাদের সান্ত্বনা দেওয়া এবং তাদের আর্থ-সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এছাড়া দেশ গঠনের কাজে তিনি জাতির পিতাকে সবসময়ই সুচিন্তিত পরামর্শ দিতেন।

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব খুব শৈশবে মা-বাবাকে হারালেও পরবর্তীতে তিনিই সমগ্র জাতির ক্রান্তিকালে সকলের মা হিসেবেই আবির্ভুত হয়েছিলেন, তাদের সকল অধিকার আর আত্মপরিচয় রক্ষায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন। মুক্তি সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোতে তিনি বাঙ্গালী জাতিকে মায়ের মতোই আগলে রেখেছিলেন। সারা জীবন দেশের জন্য তিনি অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন, সেই কষ্ট তিনি কখনো প্রকাশ করেননি। যেই রাষ্ট্র তার বত্রিশের বাড়ি থেকে জন্মলাভ করেছিল, সেই রাষ্ট্র তিনি ভালোভাবে দেখতেই পারলেন না। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় সেই বাড়ীতেই রাষ্ট্রের জনকসহ দেশে অবস্থানরত পরিবারের সবাইকে নিয়ে তিনি ঘাতকদের গুলিতে নির্মমভাবে নিহত হন। পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম নির্মম হত্যাকাণ্ড আর ঘটেনি। এ হত্যাকাণ্ড বাঙ্গালী জাতির ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। হাজার বছরেও এ কলঙ্ক মোচন হবে কিনা আমাদের জানা নেই।

১৯৭৫ সালে জন্মের মাস আগস্টেই মাত্র ৪৫ বছর বয়সে বঙ্গমাতা শহীদ হয়েছিলেন। তারও ৪৭ বছর পর আজ তার ৯২তম জন্মবার্ষিকীতে আমরা তাকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। তার ঋণ আমরা কি কোনো দিন শোধ করতে পারবো?

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট তারই স্বপ্নের স্বাধীন দেশে এদেশেরই কিছু দুষ্কৃতিকারীর যে পৈশাচিক তাণ্ডব দেখে তিনি চিরবিদায় নিয়েছিলেন, আমরা তার পবিত্র আত্মার কাছে এর কি জবাব দেব? আমাদের এই অপরাধবোধ, এই চাপা কান্না, এই আক্ষেপ আর ক্ষোভ, শিখা চিরন্তন হয়ে থাকবে।

যে মহান আদর্শ ও নীতিবোধ বঙ্গমাতা আমাদের দেখিয়ে গেছেন, সেগুলো বাঙ্গালী জাতির জন্য প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। বঙ্গমাতার জীবনী পাঠ ও চর্চা নতুন প্রজন্মের দেশ প্রেমকে শাণিত করবে। আমি মনে করি, জাতির প্রয়োজনে বঙ্গমাতার রাষ্ট্র ও সমাজ দর্শন নিয়ে ব্যাপক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। আমি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব- যিনি আমাদের সকলের মা, তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।

লেখক : তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

ইত্তেফাক/ইআ