শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

এই আচরণের ব্যত্যয় ঘটাইতে হইবে

আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২২, ০৭:৩৮

সড়ক, রেল, নৌপথ—কোনো সেক্টরেই জুতসই ব্যবস্হাপনা, শৃঙ্খলা নিশ্চিত করিতে পারি নাই আমরা। অব্যবস্হাপনার চিত্র দৃশ্যমান বিমান যোগাযোগ খাতেও। যাত্রীসেবার প্রশ্নে দেশের বিমানবন্দরগুলিতে বত্সরের পর বত্সর যেই বিশৃঙ্খলা চলিয়া আসিতেছে তাহাকে ছোট করিয়া দেখিবার অবকাশ নাই কোনোক্রমেই। বিদেশ হইতে আসা যাত্রীদের লাগেজ বিক্ষিপ্তভাবে ছুড়িয়া ফেলা, লাগেজ কাটাছেঁড়া, দিনের পর দিন অতিবাহিত হইবার পরও লাগেজ বুঝাইয়া দিতে গড়িমসি, ক্রমাগত শিডিউল পরিবর্তন এবং সেই তথ্য আগেভাগে অবহিত না করাসহ ইত্যাকার যাত্রী-ভোগান্তির কথা বহুকাল ধরিয়া শুনিয়া আসিতেছি আমরা। বলা বাহুল্য, এই সকল কারণে যাত্রীরা যারপরনাই ক্ষুব্ধ। এই সকল অব্যবস্হাপনা দূরীকরণের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কতৃ‌র্পক্ষের উদাসীনতা যেন স্হায়ী শিকড় গজাইয়া বসিয়াছে। থামিয়া নাই বিমানবন্দরে যাত্রী হেনস্তার ঘটনা। সম্প্রতি বিদেশ হইতে আসা এক যাত্রীকে চড় মারিবার অভিযোগ উঠিয়াছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এক কাস্টমস কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ঘটনা এইখানেই থামিয়া থাকে নাই। ঐ যাত্রীকে নানা হয়রানির শিকার হইতে হয়—প্রথমে কাস্টমস জোনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তাহার গালে চড় মারেন অভিযুক্ত কর্মকর্তা। এরপর কাস্টমসের অন্যান্য কর্মকর্তা তাহাকে দীর্ঘসময় কাস্টমস ডেস্কে আটকাইয়া রাখিয়া তাহার লাগেজ তল্লাশি করেন। কিছু না পাওয়ায় শেষমেশ ভুক্তভোগী যাত্রীকে ছাড়িয়া দেওয়া হয়।

সেবাগ্রহীতা যাত্রীর সহিত দায়িত্বরত সরকারি কর্মকর্তার বিরূপ আচরণ নিতান্তই অনাকাঙ্ক্ষিত। যাত্রী কোনো অন্যায়-অপরাধ করিলে তাহাকে শাস্তির আওতায় আনিবার ব্যবস্হা রহিয়াছে। অপরাধ খুঁজিয়া পাইলে আইনগত ব্যবস্হা গ্রহণই যুক্তিযুক্ত; কিন্তু তাহা না করিয়া যাত্রীর গায়ে হাত তোলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নহে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আইন হাতে তুলিয়া লওয়ার যেই চিত্র আমরা সচারচর দেখিতে পাই ইহা তাহারই অংশ। মনে রাখিতে হইবে, বিমানবন্দরে যাত্রীর সহিত দুর্ব্যবহার, হয়রানির ঘটনা দেশে নূতন নহে। যাত্রী হয়রানির বহু ঘটনার সাক্ষী আমরা। আজিকার সভ্যসমাজে ইহা গ্রহণযোগ্য নহে মোটেও। এই প্রবণতা বন্ধ করিতে হইবে। ভুলিয়া গেলে চলিবে না, যোগাযোগ ব্যবস্হার ক্ষেত্রে বিশেষ করিয়া আকাশসেবায় বহু দেশ প্রভূত উন্নতি করিয়াছে; কিন্তু আমাদের সেই সমস্ত দিকে দৃষ্টি রহিয়াছে বলিয়া মনে হয় না।

বিমানবন্দরগুলিতে যাত্রী হয়রানির যেই সমস্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়া থাকে তাহা সরকারের কান পর্যন্ত পৌঁছায় না, বিষয়টি এমন নহে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়েও আমরা ওয়াকিবহাল রহিয়াছি। তবে পর্যবেক্ষণ বলিতেছে—অধিকাংশ ঘটনার ক্ষেত্রেই যথোপযুক্ত ব্যবস্হা গ্রহণ করা হয় না। বরং কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার পর যাহা করা হয় তাহাকে ‘আইওয়াশ’ বলিলে বাড়াইয়া বলা হইবে না। শুধু বিমানের ক্ষেত্রেই নহে, অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্হা গ্রহণের ক্ষেত্রে তত্ক্ষণাত্ সাময়িক বহিষ্কার, তদন্ত কমিটি তথা ‘আপাত সমাধানের’ সংস্কৃতি লক্ষ করা যায় যোগাযোগব্যবস্হার প্রতিটি সেক্টরেই। অথচ সেবাদানে ব্যর্থতায় কিংবা সেবাগ্রহীতার সহিত অযাচিত ব্যবহারের শাস্তি হিসাবে যথাযথ আইনগত ব্যবস্হা গ্রহণ করিবার কথা। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কোড অব কন্ডাক্টের বাহিরে গেলে ব্যবস্হা গ্রহণের নির্দেশ রহিয়াছে সংশ্লিষ্ট বিভাগের উপর। সর্বোপরি, যাত্রী কিংবা দায়িত্বরত কর্মকর্তা উভয়ের উপরই আইন সমভাবে প্রযোজ্য হইবে—আইনের ঊর্ধ্বে নহে কেহই।

উপরে উল্লিখিত ঘটনার পর যাত্রীদের সহিত কোনো কর্মকর্তা যেন খারাপ আচরণ করিতে না পারে সেই জন্য কার্যকর ব্যবস্হা গ্রহণের আশ্বাস দিয়াছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এই জন্য ‘ভালো ব্যবহার’ শিখাইতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হইবে বলিয়া ঘোষণা আসিয়াছে। আমরা উদ্বিগ্ন না হইয়া পারি না এই ভাবিয়া যে, আমাদের ইমিগ্রেশন, কাস্টমস, পুলিশকে ভালো ব্যবহার রপ্তের প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রয়োজন পড়িতেছে চাকুরি জীবনে নানা প্রশিক্ষণ লইবার পরও! আমাদের আফসোস করিবার যথেষ্ট কারণ রহিয়াছে এই কারণে যে, কোনো সেক্টরকেই আমরা টেকসই ব্যবস্হাপনার আওতায় আনিতে পারিলাম না আজও। সময় আসিয়াছে এইদিকে গুরুত্বের সহিত নজর দেওয়ার। 

ইত্তেফাক/জেডএইচডি